কলকাতা: নেতাজি ট্যাবলো বিতর্ক (Netaji Tableau Case) সম্পর্কিত জনস্বার্থ মামলাটি খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Kolkata High Court)। সোমবার এই মামলার শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। পরে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবস। হাতে শুনানি মতো যথেষ্ট সময় নেই। এমত অবস্থায় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নেতাজি ট্যাবলো বিষয়ে কোনওরকম হস্তক্ষেপ করবে না। তাই জনস্বার্থ মামলাটিস খারিজ করে দেওয়া হল।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ‘জাতীয় হিরো’ হিসেবে উল্লেখ করে জনস্বার্থ মামলাকারী জনৈক রমাপ্রসাদ সরকার প্রশ্ন তুলেছিলেন, সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে বাংলার নেতাজি ট্যাবলো বাতিল হল কী কারণে? কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেই এদিন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রমাপ্রসাদ।
২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবস। সেখানে এত দেরি করে (২৪ জানুয়ারি) মামলা হাইকোর্টে এলে, কী করে হবে, তা নিয়ে শুনানির সময়ই অসন্তোষ ব্যক্ত করেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। তাঁর বেঞ্চেই নেতাজির ট্যাবলো সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি ছিল।
এই মামলার প্রেক্ষিতে নেতাজিকে নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান কী, তা জানতে চেয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। কেন্দ্রের হয়ে এদিন হাইকোর্টে সওয়াল করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াইজে দস্তুর।
কেন্দ্রের আইনজীবীর ব্যাখ্যা, ‘নেতাজি শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, গোটা দেশের। কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজিকে যথেষ্ট মর্যাদা দিয়েছে।’
এই প্রসঙ্গেই অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল জানান, কেন্দ্রের বর্তমান সরকারই ২০১৫ সালে নেতাজির অপ্রকাশিত ফাইল সামনে এনেছে। এর আগে কোনও সরকার তা করেনি। নেতাজিকে নিয়ে গোটা দেশ গর্বিত। উনি আমাদের আইকন।
সওয়াল করতে গিয়ে কেন্দ্রের আইনজীবী আরও বলেন, ‘বিশেষ কিছু কারণ আছে। যে কারণে এই ট্যাবলো বাতিল হয়েছে।’ জনস্বার্থ মামলাটি গ্রহণযোগ্য নয় বলেও তিনি দাবি করেন।
কেন্দ্র নেতাজিকে ঠিক কতটা মর্যাদা দেয়, তার উল্লেখ করে ওয়াইজে দস্তুর বলেন, ‘২৩ জানুয়ারি পরাক্রম দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’ নেতাজিকে সম্মান জানাতে সাধারণতন্ত্র দিবসের সূচনা-অনুষ্ঠান এগিয়ে এনে ২৩ জানুয়ারি করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য, ‘সাধারণতন্ত্র দিবসের নির্দিষ্ট একটি নিয়ম আছে। আদালতে আসার আগে সেটা আবেদনকারীর জানা উচিত ছিল।’ কেন্দ্রীয় আইনজীবী এ-ও জানান, বাংলার নেতাজি ট্যাবলো বাতিল হলেও ভারতীয় নৌবাহিনীর আইএনএ নিয়ে ট্যাবলো কুচকাওয়াজে থাকছে। দস্তুরের কথায়, ‘রসগোল্লা যেমন শুধু বঙ্গের নয়, তেমন নেতাজিও শুধুমাত্র বাংলার নয়।’
কেন্দ্রের এই বক্তব্য শোনার পরেই শুনানি শেষ করে, রায়দান স্থগিত রাখে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। এ বছর সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডে বাংলার তরফে নেতাজি ট্যাবলো করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কোনও কারণ না দেখিয়েই তা বাতিল করে দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাজনৈতিক মহল। রবিবার রেড রোডে নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠান থেকেও এ নিয়ে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে নেতাজির ট্যাবলো থাকলে, কী এমন ক্ষতি হত! মমতা বলেন, কেন্দ্রে বাতিল করলেও রাজ্য সসম্মানে নেতাজির সেই ট্যাবলোকে বরণ করবে। কলকাতার রেড রোডে সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে নেতাজির ট্যাবলো থাকবে।