কলকাতা : ধর্ষিতা নাবালিকার গর্ভপাত চেয়ে আদালতে বিধ্বস্ত বাবা- মা। বিশেষজ্ঞ কমিটির অনুমোদন মিললেই হবে গর্ভপাত, জানাল হাইকোর্ট। নতুন সদস্য আসার সংবাদে যে কোনও সংবাদে যে কোনও পরিবারেই খুশির বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু, হাওড়ার তালুকদার পরিবারে নতুন সদস্য আসার খবর যেন অভিশাপ বয়ে নিয়ে এল। তাই মেয়ের গর্ভপাত চেয়ে তড়িঘড়ি হাইকোর্টে ছুটেছেন বাবা-মা। নাবালিকার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ কমিটিকে আদালতে রিপোর্ট দিতে হবে ৩ জানুয়ারি। তারপরে গর্ভপাত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত নেবে হাইকোর্ট। এমনটাই নির্দেশ আদালতের।
আদালত সূত্রের খবর, বালি নিশ্চিন্দার বাসিন্দা পার্থ তালুকদার ( নাম পরিবর্তিত) ও তাঁর স্ত্রী চাঁদনি তালুকদারের ( নাম পরিবর্তিত) একমাত্র মেয়ে পিয়াকে (নাম পরিবর্তিত) নিয়ে সংসার। নিত্য দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে হয় ওই পরিবারকে। পার্থ পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং চাঁদনি পরিচারিকার কাজ করেন। তালুকদার পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দা মুন্না ধানুকা তাদের ১৭ বছরের মেয়েকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর বালির নিশ্চিন্দা থানায় পরিবার অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে মুন্নার বিরুদ্ধে।
তদন্তে নেমে পুলিস উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের এক হোটেল থেকে দু’জনকে উদ্ধার করে। ১৬ নভেম্বর দু’জনকে হাওড়া আদালতে পেশ করে পুলিস। আদালত মুন্নাকে জেল হেফাজতে এবং পিয়াকে একটি হোমে পাঠায়। তদন্তে পুলিস আরও জানতে পারে, ৪৫ বছর বয়সি মুন্না একাধিক বার ওই নাবালিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল। মুন্না বিবাহিত এবং তার সন্তানও রয়েছে। পুলিস তার বিরুদ্ধে পকসো (POCSO) আইনে মামলা করে। এরই মধ্যে নাবালিকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা যায়, সে অন্তঃসত্ত্বা। তা শুনেই আকাশ ভেঙে পড়ে তালুকদার পরিবারের মাথায়। দম্পতি আদালতের দ্বারস্থ হয় মেয়ের গর্ভপাত চেয়ে।
তালুকদার পরিবারের আইনজীবী দেব কুমার শর্মা জানান, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী গর্ভস্থ সন্তান রাখা না রাখার ব্যাপারে কোনও নাবালিকা বা তার পরিবারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। নিম্ন আদালতে আবেদন জানিয়েও ওই পরিবারের কোনও সুরাহা মেলেনি। তাই দম্পতি হাইকোর্টে মামলা করে। তাদের আবেদন, গর্ভপাত না হলে ভবিষ্যতে মেয়ের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আইনজীবী আরও জানান, মেয়েটি ২২ সপ্তাহের গর্ভবতী।
গত ১২ অক্টোবর, গর্ভপাত সংক্রান্ত সংশোধনী আইনে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশে এ ক্ষেত্রে তিন দিনের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কমিটিকে রিপোর্ট দিতে হবে। সেই রিপোর্টের অনুমোদন মিললে ৫ দিনের মধ্যে গর্ভপাত করানো যাবে। আইনজীবী জানান, বর্তমানে ওই নাবালিকা হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর দাবি, আদালত বিষয়টির গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বিচার করুক। বিচারপতি রাজশেখর মান্থার নির্দেশ, হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপারকে প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকদের দিয়ে মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে হবে। গর্ভপাত করানো সম্ভব কি না, তাও উল্লেখ করতে হবে রিপোর্টে।