‘২৩৫’-এর দেমাক বিলীন হয়েছে ২০১১-তে৷ তারপর থেকে শুধুই পিছিয়ে যাওয়া৷ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত আলিমুদ্দিনের কাছে নীতি-আদর্শ ‘প্রতিষ্ঠা’ করার বিপ্লব এখন বিলাসিতা৷ আগে টিকে থাকতে হবে, তারপর ‘শ্রেণিসংগ্রাম’৷ টিকে থাকতে টাকা দরকার৷ ৩৪ বছর ধরে রোজগার করা অর্থ বাছাই করা কিছু ব্যক্তিগত ভাঁড়ারে লুকিয়ে রয়েছে৷ দলের কাজে সেই অর্থের নাগাল সম্ভবত পাচ্ছে না সিপিএম৷ চরম আর্থিক সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে আলিমুদ্দিন, দলের নেতারা অন্তত তেমনই বলছেন৷
এদিকে বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ বিধানসভায় সিপিএম বলে কিছু নেই, এ রাজ্য থেকে লোকসভার সাংসদও নেই৷ আলিমুদ্দিন বুঝেছে এই শূন্যতা ভরাট করা সহজ কাজ নয়৷ তাই নজর দিয়েছে পুরসভা-পঞ্চায়েতে৷ পুরভোটেও দলের ফল হতাশজনক৷ নদিয়ার তাহেরপুর পুরসভা দখল করা ছাড়া আর কোনও সাফল্য নেই৷ নুইয়ে পড়া সাংগঠনিক কাঠামোয় ওই তাহেরপুর’ই লাইটহাউস৷ তাহেরপুরের ‘সাফল্য’ এবার পঞ্চায়েতে ছড়িয়ে দিতে চাইছে সিপিএম ৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়তে হলে অর্থের প্রয়োজন৷ দল চালাতেই তো হিমশিম খেতে হচ্ছে। ওদিকে রাজারহাটে প্রস্তাবিত জ্যোতি বসু সেন্টার গড়ে তুলতেও টাকা চাই৷ সংগঠন তথা দলকে চালাতেও লাগবে টাকা৷ জ্যোতি বসু সেন্টার গড়তে দোরে দোরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করতে দেখা গিয়েছে ৮৩ বছরের বিমান বসুকে৷ কিন্তু বিপুল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে আসবে ? পার্টি সদস্যদের লেভির টাকায় দল চলে না৷ তাই আলিমুদ্দিন ফের রাস্তায় নেমে কৌটো নাচিয়ে অর্থসংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে৷
সূত্রের খবর, আর্থিক সংকটের মোকাবিলা করতে কৌটো নিয়ে পথে ঘুরে এক কোটি টাকা চাঁদা তোলার নির্দেশ দিয়েছে আলিমুদ্দিনের শীর্ষস্তর৷ সংগঠনের সর্বস্তরের কর্মী-সদস্যদের এই কাজে নামতে বলা হয়েছে৷ ক্ষমতায় থাকার সময়ও মাঝে মধ্যেই কৌটো নাচিয়ে অর্থ সংগ্রহ করতে সিপিএমকে দেখা যেত৷ তবে তা ছিল পুরোটাই আই-ওয়াশ৷ এবার সম্ভবত সত্যিই বিপাকে পড়েছে৷
রাজ্য সিপিএমের কোষাগার নাকি এখন গড়ের মাঠ৷ সাড়ে তিন দশক ধরে রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা দলটি ক্ষমতাহীন হওয়ার মাত্র ১০-১১ বছরের মধ্যেই এ ভাবে আর্থিক সংকটে ডুবে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়৷ তবুও দলের নেতারা সে কথাই বলছেন৷ বলছেন, আয় বাড়েনি, খরচ প্রায় একই রকম রয়েছে৷ মেলানো যাচ্ছে না ব্যালান্স-শিট৷ ব্যাঙ্কে থাকা টাকার সুদে দল চলে না৷ তার উপর দিল্লির গোপালন ভবনেও নিয়মিতভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা পাঠাতে হয়৷ দলের ‘শুভার্থী’-র সংখ্যা তলানিতে৷ কে দেবে টাকা ? তাই কৌটো নাড়িয়ে টাকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম৷ এই গণ-অর্থসংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে কোটি টাকা৷ এই প্রথমবার এক কোটি টাকা সংগ্রহ করতে নামছে সিপিএম৷ আলিমুদ্দিন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের সব জেলা কমিটিকে পথে নেমে এক কোটি টাকা সংগ্রহের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে৷ এই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিয়েছেন বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম। জেলা নেতৃত্বকে বলা হয়েছে, দুর্গাপুজোর আগেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলতে হবে৷
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেছেন, ‘আগামী দু’মাসের মধ্যে রাস্তায় নেমে মানুষের কাছে গিয়ে এই টাকা সংগ্রহ করতে হবে দলকে।’