কলকাতা: আগামিকাল সোমবার থেকে রাজ্যে বন্ধ স্কুল, কলেজ। তবে, প্রশাসনিক কাজের জন্য আসতে হবে শিক্ষকদের। এই বিষয়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন শিক্ষক মহলের একাংশ। কেউ বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকটে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকারাই স্কুলে আসবেন। কারণ, সন্ধে ৭টায় লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাবে। দূরে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়ি ফিরতে সমস্যা হবে। আবার অনেকেই বলছেন, পড়ুয়ারা স্কুলে না এলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আসার মানেই হয় না।
মাস দুয়েক আগে রাজ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিল। রবিবার আবারও বিধিনিষেধ জারি হতেই সোমবার থেকে ফের স্কুল-কলেজ বন্ধ হতে চলল। নবান্নের এই সিদ্ধান্তে খুশি পশ্চিমবঙ্গ সরকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষ্ণকলি বসু। তিনি বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের এখনও টিকা নেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ হওয়াই উচিত। কারণ, ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। করোনা কমলে স্কুল, কলেজ খোলা হবে। আবার বাড়লে বন্ধ করে দিতে হবে। সুরক্ষিত থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
পড়ুয়ারা স্কুলে না এলেও প্রশাসনিক কাজের জন্য স্কুলে যেতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। অথচ, সন্ধে ৭টার পর বন্ধ থাকবে লোকাল ট্রেন। এই বিষয়ে কৃষ্ণকলি বসুর বক্তব্য, ‘প্রশাসনিক কাজের থেকেও জরুরি একাডেমিক কাজ। যে কারণে শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনলাইনে ক্লাস নেবেন। ফলে, তাঁদের পক্ষে রোজ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান যাওয়া সম্ভব নয়। তবে, এই কাজগুলির জন্য নির্দিষ্ট দিন ঠিক করা হবে। যে বা যিনি তুলনামূলক ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকেন সে কাজগুলি মিটিয়েও নেবেন। প্রয়োজনে বাকিদেরও যেতে হবে।’
কৃষ্ণকলি বসুর সঙ্গে একমত নন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি। তিনি বলেন, ‘গভীর আনন্দে ছিলাম দীর্ঘদিন পর স্কুল চালু হচ্ছে। স্কুলগুলি মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক ছাড়াও নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য বিভিন্ন শিডিউল তৈরি করেছিল। তার মধ্যেই রাজ্য সরকার ফের স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে ছাত্র-ছাত্রীরা।’ প্রশাসনিক কাজের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘ছাত্র-ছাত্রীরা না এলে আমরা স্কুলে গিয়ে কী করব? আইসিএমআরের নির্দেশ অনুযায়ী, ১৮ বছরের নীচে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের প্রভাব কম। তাই কমপক্ষে ৫০ শতাংশ পড়ুয়া নিয়ে স্কুল চালু করা হোক।
আরও পড়ুন- Covid Bengal: রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ৬১৫৩, পজিটিভিটি রেট ১৫.৯৩ শতাংশ
পঠন-পাঠন বন্ধ থাকার বিষয়ে কিছু না বললেও প্রশাসনিক কাজের পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু। তিনি বলেন, ‘ছুটির দিনে নির্দেশিকা জারি হওয়ায় কীভাবে ৫০ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকার উপস্থিতি, তা পরে ঠিক করা হবে। তা সরকারি নির্দেশ মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, ৭টায় ট্রেন বন্ধ হলে অনেকেই যাতায়াতের সমস্যায় পড়বেন’।
রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষার ফল প্রকাশের কাজ শেষ হয়েছে। তবে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফর্ম পূরণ করার কাজ শুরু করা যায়নি। যা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল। রাজ্য সরকারের বর্তমান সিদ্ধান্তে যা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যা নিয়ে উদ্বিগ্নে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও।