কলকাতা: সময়ে অফিস পৌঁছাতে হবে। জমা দিতে হবে অ্যাসাইনমেন্ট। বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে বাস, ট্রাম, অটো ধরে লালবাজার পৌঁছতে কী অভিজ্ঞতা হল? লিখলেন, কলকাতা টিভি ডিজিটালের সাংবাদিক সোমদত্তা বসু।
ঘড়িতে দুপুর সাড়ে বারোটা। অটোর লাইনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম ফিরে যাই। মিনিট পনেরো পর একটা ফাঁকা অটো এলো। আমার সঙ্গে চেপে বসলেন ৪ জন সহযাত্রী। লাইনে তখনও ২০ জন। চালকের কাঁধে হাত রেখে মধ্যবয়সী যুবক এক বললেন, বাঁচালে ভাই, আর একটু দেরি হলে চেকটা নিয়ে আজও ফিরতে হত। থুতনির নীচে ঝুলছে মাস্ক। ৬ জনের সওয়ারি নিয়ে ঠাসাঠাসি অটোযাত্রা। চালক বললেন, দিদি ভাড়া কিন্তু ১০ হয়ে গেছে।
বাসস্ট্যান্ডে থিকথিকে ভিড়। সিঁথির মোড়ে চিড়িয়ামোড়ের দিকে ছুটে চলেছে অসংখ্য় প্রাইভেট গাড়ি। হাতেগোনা কয়েকটা সরকারি বাস আসতেই ঠেলাঠেলি শুরু।
আরও পড়ুন: গড়াল না বেসরকারি বাসের চাকা, রাস্তায় বেরিয়ে ভোগান্তি
এক সহযাত্রী কথায়, “ফাঁকা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ালে চাকরি থাকবে না। কারও থুতনিতে ঝুলছে মাস্ক, কেউ আবার তা পরতেও ভুলে গিয়েছেন। বিধিনিষেধ শিথিল হয়েছে? না, দেখলে মনে হবে করোনা সম্ভবত ছুটিতে আছে। বাস না পেয়ে অনেকের ভরসা আবার অ্যাপ ক্যাব বা ট্যাক্সি। সুযোগ বুঝে তারাও দর হাঁকাচ্ছে। কাচ নামিয়ে বলছেন, ‘মিটারের থেকে একটু বেশি দেবেন তো?’
আধ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা মিনিবাস এলো। রুট ভাঙা মিনি। ফেয়ার চার্টের তোয়াক্কা নেই, গন্তব্য অনুযায়ী খুশি মতো ভাড়া বেঁধে নিচ্ছেন কনডাক্টর নিজেই। সেন্ট্রাল মেট্রো সামনে নামব। বলতেই, হেঁকে বসলেন ৩০ টাকা! প্রশ্ন করতেই বললেন , ‘ঠিক আছে, ২৫ দিলেই হবে।’ সংবাদ মাধ্যমের কর্মী হিসাবে ফেয়ার চার্ট দেখতে চাইলাম। বললেন ‘ভাড়া না বাড়লে কাল থেকে বাস পাবেন না’। ভিড় বাসে বসে দেখলাম, চিড়িয়ামোড়, শ্যামবাজার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-এর প্রতিটি স্টপেজে বাসের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছেন অফিস যাত্রীরা। সংক্রমণ ভুলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভিড় বাসের পাদানিতে ঝুলে পড়ছেন কেউ কেউ। ঘড়িতে চোখ পড়তেই দেখলাম লেট হয়েছে প্রায় ১ ঘণ্টা। বাসে বসে মনে পড়ল সেই সহযাত্রীর কথা, “ফাঁকা বাসের আশায় থাকলে চাকরিটা আর থাকবে না”।