কলকাতা: ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের শেষ দেখতে চাইছে সরকার। প্রতারণার জাল যে অনেক গভীরে তা বুঝেই তৈরি করা হয়েছে সিট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এই ঘটনায় কাউকে ছাড়া হবে না। সে যত বড় মাথাই হোন, দেবাঞ্জনকে যাঁরা সাহায্য করেছেন কেউ ছাড় পাবেন না।” তবে সরকার যে এই চক্রের সঙ্গে কোনও ভাবে জড়িত নয় সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ এবং পুরসভা যে এর দায় এড়াতে পারে না সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। পুরসভার অন্দরে নিজের জাল বিস্তার করেছিল ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জন দেব। এ নিয়েও সতর্ক রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পুলিশের মাঝে মধ্যে কলকাতা পুরসভায় যাওয়া উচিত। পুলিশ এই দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না।” ভুয়ো ভ্যাকসিন ক্যাম্প থেকে টিকাপ্রাপ্তদের স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষজ্ঞ কমিটি খেয়াল রাখছে বলেও তিনি জানান৷
দেবাঞ্জন দেব প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এত বড় সাহস। এত ঔদ্ধত্য হয় কী করে? সাধারণ মানুষ, সহজ সরল মানুষদের অনেকে চিটফান্ডের নামেও বোকা বানায়। কিছু মানুষ দেখতে সুন্দর, সেজে গুজে থাকে। প্রতারণা করে। তাঁদের আমি মানুষ বলে মনে করি না। অমানুষ বলেও মনে করি না। এদের সমাজে থাকার কোনও যৌক্তিকতা নেই। মানুষের জীবন নিয়ে যারা খেলে তারা জঙ্গিদের থেকেও ভয়ংকর। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা সাহায্য করেছে সে যেই হোক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ধৃত দেবাঞ্জনের সঙ্গে রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “অনেকেই সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে নেয়। বিমানে দূর থেকে বসেও ছবি তুলে নেয়। ছবি দেখিয়ে কিছু হবে না। ফটোশপ করে কোনও লাভ নেই। ছবি তুলে কাজে লাগায় প্রতারকরা। বলে আমি চিনি। এরা ঠগবাজ মনে রাখতে হবে।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, গোটা ঘটনায় সরকারের কোনও হাত নেই। তবে চোখের সামনে এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার দায় এড়াতে পারে না পুরসভা ও পুলিশ প্রশাসন। এরা বিজেপির থেকেও ইন্ধন পেয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। যাঁরা প্রতারককে সাহায্য করেছে, তাঁরা কেউই ছাড় পাবে না। ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যেই সিট গঠন করা হয়েছে।’’
এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কেও আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ দিন কয়েক প্রকাশ্যে আসা হাওয়ালা কাণ্ডে জৈনদের ডায়েরির প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি বক্তব্য, ”হাওয়ালা জৈন কাণ্ডের চার্জশিটে তো ওঁর নাম ছিল। উনি কত বড় দুর্নীতিগ্রস্ত, তা দেখা হোক আগে। ওঁরই তদন্ত প্রয়োজন আগে। আমি এমন রাজ্যপাল দেখিনি আগে কখনও।” এরপরই রাজ্যপালের অপসারণের দাবি তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”যতদিন এ রাজ্যের দায়িত্বে রয়েছেন, ততদিন কাজ করব এক সঙ্গে। এটা সৌজন্য, কর্তব্য। ওঁকে সরানোর জন্য তিনটে চিঠি দিয়েছি কেন্দ্রকে। এবার বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মনে হয়। এখনও কেন্দ্রের দিক থেকে কোনও উত্তর পাইনি।”