ফ্লোরিডা: মহাকাশে (Space) মানুষ পাঠানো যেমন কঠিন তেমনই ব্যয়সাপেক্ষ। মহাশূন্য এবং চাঁদে (Moon) মানুষ যাচ্ছে আজ ৬০ বছর হয়ে গেল। এই সব অভিযানে এ পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৬ এবং ২০০৩ সালে নাসার (NASA) স্পেস শাটল দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে ১৪ জনের। ১৯৭১ সালের সয়ুজ ১১ মিশনে প্রাণ হারিয়েছিলেন তিনজন কসমোনট। তার আগে ১৯৬৭ সালে অ্যাপোলো লঞ্চপ্যাড অগ্নিকাণ্ডে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। মহাকাশে মানুষ পাঠানো যে পর্যায়ের কঠিন ব্যাপার তাতে ২০ জনের মৃত্যু খুব বেশি বলা চলে না।
২০২৫ সালে চাঁদে ফের মানুষ পাঠাতে চলেছে নাসা। পরের দশকে মঙ্গলেও মনুষ্য পদচিহ্ন পড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এখন তো মহাকাশ পর্যটন নতুন ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত বেশি মানুষ পৃথিবীর বাইরে যাবে মৃত্যুর সংখ্যা ততই বাড়বে বলেই আশঙ্কা। এখন প্রশ্ন হল, মহাকাশ, চাঁদ কিংবা মঙ্গল গ্রহে (Mars) কারও মৃত্যু হলে সেই দেহের কী হবে। তা কি সেখানেই রয়ে যাবে নাকি ফিরিয়ে আনা হবে পৃথিবীতে?
এ ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন স্পেস মেডিসিন অ্যান্ড এমার্জেন্সি মেডিসিনের খ্যাতনামা অধ্যাপক ইমানুয়েল আর্কিয়েতা। তিনি জানিয়েছেন, যদি লো-আর্থ অরবিট মিশনে (যে জায়গায় আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন রয়েছে) কারও মৃত্যু ঘটে, তাহলে ক্যাপসুলের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টয় দেহ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা যাবে। যদি চাঁদের মাটিতে কারও মৃত্যু ঘটে তবে কয়েকদিনের মধ্যেই তার দেহ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনবে মিশনের বাকি সদস্যেরা। এ ধরনের ঘটনার জন্য নাসার নির্দেশাবলি রয়েছে আগে থেকেই।
আরও পড়ুন: সবকিছু ঠিকঠাক হলে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করবে ইসরো
মৃতদেহ সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকায় তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাবে না নাসা বরং তাদের প্রধান লক্ষ্য হবে বাকি সদস্যদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। তবে ছবিটা পাল্টে যাবে ৩০০ মিলিয়ন মাইল দূরের মঙ্গল গ্রহ অভিযানের ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে অভিযানের সদস্যেরা সঙ্গে সঙ্গে ফিরতে পারবে না। মৃতদেহ ফিরবে মিশন শেষ হওয়ার পরেই যাতে সময় লাগবে অন্তত দু’ বছর। সেক্ষেত্রে আলাদা চেম্বার বা স্পেশ্যালইজড বডি ব্যাগে মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হতে পারে। তবে এই সমস্ত কিছু হবে যদি মৃত্যু ঘটে মহাকাশযানের ভিতরে। কিন্তু কেউ যদি স্পেস স্যুট ছাড়া মহাকাশে বেরিয়ে পড়ে?
সেক্ষেত্রে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হবে মহাকাশচারীর। চাপের অভাব এবং শূন্যতার ফলে বন্ধ হয়ে যাবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস। ফুটতে শুরু করবে রক্ত সহ শরীরের যাবতীয় ফ্লুইড। চাঁদ এবং মঙ্গলের মাটিতে কেউ যদি স্পেস স্যুট না পরে বেরোলেও একই ঘটনা ঘটবে। চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই বললেই চলে। লাল গ্রহে একেবারে পাতলা বায়ুমণ্ডল তার মধ্যে অক্সিজেনের ভাগ অতি সামান্য। এক্ষেত্রেও শ্বাসরোধ এবং রক্ত ফুটতে শুরু করবে এবং অবিলম্বে মৃত্যু হবে।
এবার সেই মৃতদেহের কী হবে?
দাহ করা মুশকিল কারণ তার জন্য যে শক্তি, জ্বালানি খরচ হবে তা জীবিত সদস্যদের অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূরণ কাজে লাগবে। কবর দেওয়াও সম্ভব নয় কারণ তাতে মঙ্গলের মাটিতে ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণু মিশে দূষিত করে দেবে। এক্ষেত্রেও বিশেষ বডি ব্যাগে সংরক্ষণ করা হতে পারে মৃতদেহ এবং ফিরিয়ে আনা হতে পারে নীল গ্রহে। যদিও ওই বিশেষজ্ঞ বলছেন, আরও অনেক সম্ভাবনা থাকতে পারে যা এখনও আমাদের অজানা।