মস্কো: সেই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ইউক্রেনের (Ukraine) সঙ্গে যুদ্ধ চলছে রাশিয়ার (Russia)। ন’মাস হয়ে গেলেও থামার আর নাম নেই। তবে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে রাশিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে ইউক্রেনের এই যুদ্ধ নিয়ে ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ক্রেমলিন তরফে সে সময় ঘোষণা করা হয়েছিল, উচ্চ-প্রশিক্ষিত এবং সুসজ্জিত (Well-trained and Well-equipped) লক্ষ লক্ষ রাশিয়ানকে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ করা হবে এবং তাঁদরকে ইউক্রেনের ভূমিতে যুদ্ধে পাঠানো হবে। এই নিয়েই ক্ষোভ, কারণ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (President Vladimir Putin) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার উল্টোটা ঘটছে। এ বিষয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, প্রায় কোনও রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই যুদ্ধক্ষেত্রে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে দুর্বলদের। রাশিয়ান মহিলারা তাঁদের স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। তাঁদের দাবি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে নিজে মুখে জানাতে হবে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই কথা যেন রাখা হয়। প্রকাশিত রিপোর্ট এটাও বলছে, পুতিন নিজেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। শুক্রবার তিনি এই নিয়ে সে দেশের সেনাকর্মীদের মা এবং স্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতেও চলেছিলেন। ইউক্রেন সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম এমন কোনও উদ্যোগ সে দেশের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে।
তবে অনেকেই বলছেন, এটা সম্পূর্ণ সাজানো ঘটনা। কোনও ভাবেই খোলা মনে আলোচনা করা যাবে না সেখানে। তাই তারা আলোচনাও যেতে নারাজ। ওলগা সুকানোভা (Olga Tsukanova) নামে আন্দোলনরত (Activist) এক মায়ের বক্তব্য, প্রেসিডেন্ট এমন কিছু হাতে গোনা মায়ের সঙ্গে দেখা করবেন, যাঁদেরকে তিনি নিজেই সাজিয়ে এনেছেন। যাঁরা তাঁকে তাঁর পছন্দ মতো প্রশ্ন করবেন এবং তাঁকে ধন্যবাদ জানাবেন। উল্লেখ্য, ওই মহিলার কুড়ি বছর বয়ষ্ক ছেলে বর্তমানে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে কর্মরত এবং তিনি চান তাঁকে আশ্বস্ত করা হোক, তাঁর ছেলেকে ইউক্রেনে পাঠানো হবে না। ছেলের কল্যাণ কামনায় ওলগা সামারা শহর থেকে ৯০০ কিলোমিটার পথ পার করে ক্রেমলিনে (Kremlin) এসেছিলেন।
আরও পড়ুন: ISRO: শনিবার শ্রীহরিকোটা থেকে সফল উৎক্ষেপণ পিএসএলভি – সি ৫৪ রকেটের
তিনি একা নন, ওলগার মতো এরকম আরও অনেক মা ও স্ত্রী রয়েছেন, যাঁরা একই রকম আশ্বাসবাণী চান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে। তাঁদের সকলকে ডাকা হোক, তাঁরাও নিজেদের আর্জি জানাতে চান। এদিকে বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, রাশিয়ার পুরুষদের যেভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করা হচ্ছে, তা নিয়ে আগামী দিনে ক্ষোভ আরও বাড়তে পারে সে দেশের মহিলা মহলে। যেটা আখেরে রাশিয়ার সরকারের বিরুদ্ধেই যাবে এবং পুতিনের উপর চাপ বাড়বে। রাশিয়ার সৈন্যবাহিনী (Russian Troops) যখন ইউক্রেনে লড়াই করছে, তখন রাশিয়ান কর্তপক্ষ রাজনৈতিক মতপার্থক্য দমনে ব্যস্ত থেকেছে। উল্লেখজনক বিষয় হল, রাশিয়ায় ‘মা’ শব্দটি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করা হয়। তাই বিক্ষোভরত মহিলাদের কোনওভাবেই গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠানো সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার মহিলাদের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যে ক্ষোভ বাড়ছে, তাতে দুই দশক আগের স্মৃতি উসকে দিয়েছে। ২০০০ সালের অগাস্টে কুর্স্ক ডুবোজাহাজ (Kursk submarine) ডুবে যাওয়ায় ১১৮ জন ক্রু সদস্য (Crew Members) প্রাণ হারিয়েছিলেন। সে সময় রাশিয়ার সরকারের ধীর প্রতিক্রিয়ায় সরব হয়েছিলেন রাশিয়ার মহিলারা। চেচনিয়ার (Chechnya) ২টি যুদ্ধ থেকে রাশিয়ায় মা আন্দোলনে উত্থান হয়, যা ক্রেমলিনের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দেখা দেয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বর্তমানে সময় এবং পরিস্থিতি হয়ত আলাদা, কিন্তু ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যেভাবে দীর্ঘতর হচ্ছে, তাতে দেশের অভ্যন্তরে ক্ষোভ বাড়ছে, আর সেটাই আগামী দিনে পুতিনের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।