প্যারিস: পরিমাপ (Measurement)। তাকে সহজে ব্যক্ত করার জন্য একাধিক একক (Unit)। আমরা যা কিছুই দেখি, ব্যবহার করি, তার একটা ওজন আছে, কিংবা সেটা একটা নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী মাপঝোকে বলা হয়। কঠিন বস্তুর ক্ষেত্রে কিলোগ্রাম, গ্রাম, আবার তরলের ক্ষেত্রে লিটার, দৈর্ঘ্যে মাপা যায় এমন জিনিসের ক্ষেত্রে মিটার, সেন্টিমিটার, মিলিমিটারের মতো মাপকাঠি ব্যবহার করে থাকি। পরিমাপের এরকম অনেক মাপকাঠি রয়েছে, তার সব নাম হয়ত আমাদের সবসময় মনে থাকে না। কিন্তু জানেন কি, পরিমাপের মাপকাঠিতে আরও একক যোগ হয়েছে? গত শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীরা ফ্রান্সে ভোট দিতে জড়ো হয়েছিলেন, নতুন মেট্রিক প্রেফিক্স (Metric Prefix) অর্থাৎ পরিমাপের নির্দিষ্ট মাপ নির্ধারণ করতে। দিন দিন যেভাবে ডেটার সংখ্যা বেড়ে চলছে, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নির্ধারিত করা হয়েছে পরিমাপের নতুন একক।
তিন দশকেরও বেশি সময় পর আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি বা ইন্টারন্যাশনাল অব ইউনিট (International System of Units – SI)-এ এই প্রথম কোনও পরিমাপ একক অর্থাৎ মেট্রিক সিস্টেমে সর্বসম্মত বৈশ্বিক মান যুক্ত হল। কিলো এবং মিলি পরিমাপ একক আমরা সবাই জানি, তার সঙ্গে এবার যুক্ত হল সর্বোচ্চ পরিমাপ সংখ্যা রোনা ও কোয়েটা (Ronna and Quetta) এবং সর্বনিম্ন পরিমাণ রন্টো ও কোয়েক্টো (Ronto and Quecto)।
আরও পড়ুন: Qatar World Cup: কাতার বিশ্বকাপ বয়কট করো, মুসলিমদের সতর্ক করল আল কায়েদা
ওজন এবং পরিমাপ নিয়ে ২৭তম সাধারণ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন বিজ্ঞানী এবং সরকারি প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছিলেন এই উপলক্ষ্যে। প্রতি চার বছর অন্তর পশ্চিম প্যারিসের ভেরাসেইলার্স প্যালেসে এই সম্মেলন আয়োজিত হয়। ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্র (UK)-এর ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবোরেটরি (National Physical Laboratory) নতুন একক যোগ করার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রস্তাব পাশ হওয়ার পরই তারাই বিষয়টি জানায়।
প্রেফিক্সের সুবিধা হল বড় সংখ্যাকে অনেক সহজে ব্যক্ত করা যায়। উদাহরণ হিসেবে ধরুন ১০০০ মিটারকে এক কিলোমিটার বলা হয়। আবার একহাজার মিলিমিটারকে এক মিটার ধরা হয়। ফলে বৃহৎ সংখ্যাকে ব্যক্ত করতে অসুবিধা হয়। ১৯৬০ সালে আন্তর্জাতিক একক প্রতিষ্ঠিত হয়, কারণ বিজ্ঞানীরা চেয়েছিলেন বড়ো সংখ্যাকে সহজে ব্যক্ত করার জন্য প্রেফিক্স নির্ধারণ করতে, যা বিশ্বের সর্বত্র ব্যবহৃত হবে। শেষবার ১৯৯১ সালে তালিকায় জেটা এবং ইয়োটা (Zetta and Yotta) যুক্ত হয়েছিল। ইয়োটামিটার মানে হলো ১-এর পর ২৪টি শূন্য। তবে আজকাল যেভাবে সংখ্যার পরিমাণ বাড়ছে, তাতে ইয়োটা দিয়েও ব্যক্ত করাও জটিল হয়ে পড়ছে।
নতুন এককে পৃথিবীর নতুন ওজনের পরিমাপ
ব্রিটেনের ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবোরেটরি’র মেট্রোলজি (Metrology) প্রধান রিচার্ড ব্রাউন (Richard Brown) বিষয়টির সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তালিকায় নবনিযুক্ত প্রেফিক্স ব্যবহার করার ফলে বড় সংখ্যাকে বলতে সহজ হবে। এবার আমরা যদি পৃথিবীর ক্ষেত্রে আসি, তাহলে দূরত্বের পরিবর্তে আমরা ওজন নিয়ে পরিমাপ করব। ফলে পৃথিবীর বর্তমান ওজন ৬ রোনাগ্রাম, অর্থাৎ ৬-এর পর ২৭টি শূন্য। আমাদের সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতির ওজন হল ৩ কোয়েটাগ্রাম অর্থাৎ ২-এর পর ৩০টি শূন্য।
নতুন এই একক যুক্ত কেন করতে চাওয়া হল, তার পিছনেও যুক্তি দিয়েছেন রিচার্ড ব্রাউন। ২০১০ সালের পর গুগল নিজের ইচ্ছে মতো হেলা (hella) নামক একটি শব্দ ব্যবহার করছে। ডেটা স্টোরেজের ক্ষেত্রে ব্রন্টোবাইট এবং হেলাবাইটের (Brontobytes and Hellabytes) মতো শব্দ তারা ব্যবহার করলেও এই একক সর্বজন স্বীকৃত নয়। সেই কারণে সর্বসম্মত একক এসআই তালিকায় যুক্ত করার জন্য ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবোরেটরি এই উদ্যোগ নিয়েছিল। রিচার্ড ব্রাউনের আশা, আগামী ২০-২৫ বছর এই একক সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন একক স্থায়ী হবে।