কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক : বরিশালের রুপকার, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ও শিক্ষানুরাগী অশ্বিনীকুমার দত্ত।
ভারতীয় রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, লেখক, শিক্ষক ও আইনজ্ঞ অশ্বিনী কুমার দত্তের জন্ম ২৫ শে জানুয়ারি ১৮৫৬ সালে। বিপ্লবী অশ্বিনী কুমার দত্ত বরিশালের গৌরনদীর বাটাজোর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রজমোহন দত্ত।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এমএ পাস করেন ও ১৮৭৯ সালে এলাহাবাদ থেকে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে আইন পাস করেন। ১৮৭৯ সালেই তিনি শ্রীরামপুরের একটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বিভিন্ন সমাজসেবামূলক ও সমাজকল্যাণমূলক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার জন্য সুপরিচিত ছিলেন তিনি। অশ্বিনীকুমারের জাতীয়তাবোধ ,রাজনৈতিক জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কাজ কর্মের জন্য তাকে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার ও আধুনিক বরিশালের রূপকারও বলা হত।
সামাজিক কুসংস্কার, দুর্নীতি ও জনবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বরাবরই তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল । দুর্ভিক্ষের সময়ে তাঁর তুলনাহীন সেবা। এছাড়াও চা বাগানের গরীব শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদেও সরব ছিলেন তিনি। এমনকী চারণ কবি মুকুন্দ দাস ও রাজনীতিবিদ আবুল কাশেম ফজলুল হকের খ্যাতিও প্রতিষ্ঠায় অশ্বিনী কুমার দত্তের অবদান ছিল বলে কথিত আছে।
আরও পড়ুন –সত্যজিৎ রায়ের শ্যামাসংগীত: ভক্তিরস নাকি পেশাদারী সৃজনশীলতা
বরিশাল শহরে পিতার নামে প্রথমে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে ও পরে ব্রজমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।
কথিত আছে কুড়ি বছর বিনা পারিশ্রমিকে তিনি কলেজে শিক্ষা দান করেছেন। বিপ্লবী অশ্বিনীকুমার দত্ত বরিশাল শহরে স্ত্রী শিক্ষাকে প্রসারিত করতে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯০৫ সাল থেকে ১৯১১ সাল, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় জাতীয় নেতা হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন তিনি।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের মাদ্রাজ অধিবেশনে তিনি বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রাসাদ রাজনীতি থেকে জাতীয় কংগ্রেসকে সাধারণ জনগণের মধ্যে নিয়ে আসার প্রথম কারিগর অশ্বিনী কুমার দত্ত এমনটাই মনে করেন কংগ্রেসীরা।
অশ্বিনীকুমার দত্তের প্রতিষ্ঠিত স্বদেশ বান্ধব সমিতির স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে বরিশালকে স্বদেশী আন্দোলনের একটি শক্তিশালী ঘাটিতে পরিণত করেছিলেন । বরিশাল জেলায় প্রায় ১৬০ টির ও বেশি শাখা ছিল তার সংগঠন স্বদেশ বান্ধব সমিতির।
দেশাত্ববোধক কাজের জন্য ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। ১৯০৮ সালে তাঁর সংগঠন স্বদেশ বান্ধব সমিতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯১০ সাল পর্যন্ত তাঁকে লখনউ জেলে বন্দী করে রাখা হয়।
শোনা যায় ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর বরিশালে সফরের সময় অশ্বিনীকুমার দত্তকে জেলার অদ্বিতীয় নেতা হিসেবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছিলেন। কলকাতায় রাজনারায়ণ বসুর ব্রহ্মধর্মে আকৃষ্ট হন ও ১৮৮২ তে বরিশালে ব্রাহ্মসমাজ এর সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত।
আরও পড়ুন – বাঙালির বটতলাবাজারে ‘সুকুমার’ আর ‘সন্দেশ’ এক অবিশ্বাস্য আলোর ফোয়ারা
স্বাধীনতা আন্দোলনের পাশাপাশি তার বিভিন্ন কীর্তি ও অবদানের মধ্যে অন্যতম ১৮৮৪ সালে ব্রজমোহন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যা বি এম স্কুল নামে পরিচিত। ১৮৮৬ তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য পিপলস্ অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেন। ১৮৮৭ সালে অশ্বিনী কুমারের প্রচেষ্টায় বরিশাল ডিসটিক বোর্ড তৈরী হয়।
১৮৮৭ তেই নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য বাখরগঞ্জ হিতৈষিণীসভা এবং একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৮৯ সালে ব্রোজমোহন কলেজ স্থাপন করেন।
অশ্বিনী ভবন ভেঙ্গে ফেলার পর নাইট কলেজ তৈরি করা হয় যা পরে বর্তমানে বরিশাল কলেজ বলে পরিচিত ।
সমাজে লেখক হিসেবেও তার অবদান যথেষ্ট। তাঁর লেখা গ্রন্থ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভক্তিযোগ, কর্মযোগ, প্রেম, দুর্গোৎসবতত্ত্ব ,আত্মপ্রতিষ্ঠা, ভারত গীতি প্রভৃতি।
অশ্বিনীকুমারের তৈরী বরিশাল স্কুলে শিক্ষার্থী হিসেবে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা তথা কবি কুসুম কুমারী দাশের স্বামী সত্যানন্দ দাশ ছিলেন ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক , প্রখ্যাত বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশ নিজেও এই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের আর এক বিপ্লবী ও সমাজসেবী শক্তি রঞ্জন বসুও ছিলেন এই স্কুলের শিক্ষক।
১৯২৩ সালে ৭ ই নভেম্বর অর্থাৎ আজকের দিনেই এই মহান নেতার জীবনাবসান হয়। ৬৬ বছর বয়সে তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত বিপ্লবীদের। অশ্বিনী কুমার দত্তের ৯৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী তে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী কলকাতা টিভি ডিজিটালের।