একশ বছরেরও বেশি আগের কথা। কলকাতার ছাপাখানায় তৈরি হচ্ছে ইতিহাস। সমাজেও খুব চর্চা, বিদেশ থেকে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রের ব্যবহার শিখে এসেছেন উপেন্দ্রকিশোরের ছেলে। শিখেছেন ফটোগ্রাফি। ক্যামেরার লেন্স আর আলোর কারসাজি। মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরছে সেই ছেলের, কী ভাবে ফটোগ্রাফির সঙ্গে আঁকা ছবির মেলবন্ধন ঘটানো যায়। আরও একটা পরিকল্পনা রয়েছে একেবারে ছোটদের জন্য একটা পত্রিকা যদি করা যায়। ‘সন্দেশ’ তখনও আত্মপ্রকাশ করেনি।
সেই ‘সন্দেশ’ পত্রিকারও একশ’ বছর বয়স পেরিয়ে গেল। ১৩২০ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখের দিন প্রথম বারের জন্য ছেপে বেরিয়েছিল সন্দেশ। পত্রিকা প্রকাশে বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়কে অক্লান্ত সাহায্য করতেন যুবক সুকুমার। প্রুফ দেখা। প্রচ্ছদ ভাবনা। হাফটোনের কারিগরি। ‘সন্দেশ’ যদি না বেরোত কোনওদিন? তা হলে কেমন হত আমাদের ছোটবেলাটা? ‘আবোলতাবোল’ আর ‘হযবরল’ ছাড়া বাঙালিকে ভাবা যায় নাকি! অথচ ‘আবোলতাবোল’কে বই আকারে দেখে যেতে পারেননি সুকুমার। তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন পর ছাপাখানা থেকে রোদ্দুরের মুখ দেখে ‘আবোলতাবোল’।
উপেন্দ্রকিশোরের সময় সন্দেশের জন্য ছড়া লিখেছেন সুকুমার। ছবি এঁকেছেন। ছবিতে ধাঁধাঁ বানিয়েছেন। কী না করেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কোথাও সুকুমারের নাম থাকত না। এমনকি এ ব্যাপারে উপেন্দ্রকিশোরকে কেউ প্রশ্ন করলে তিনি নাকি রহস্য করতেন। শুধু ছবির গায়ে ইংরেজিতে লেখা থাকত এস আর (S.R)। চার ফর্মার সেই পত্রিকা বাঙালি শিশুদের কল্পনার জগতকে নিয়ে গিয়েছিল এক অদ্ভুত আলোছায়ায়। বাংলার ছাপাখানায় নিয়ে এসেছিল নব উচ্ছ্বাসের ঢেউ। প্রযুক্তি ও মেধার সুরসঙ্গম।
আজ বাংলা ননসেন্সের জাদুকর সুকুমার রায়ের জন্মদিনে পাঠককে আরও একবার ‘হযবরল’ পড়বার আমন্ত্রণ।