সুদীপ্ত সেন: সূর্যকে উদ্দেশ্য করে ছুটে যাচ্ছে ‘আদিত্য’। তবে কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা শুভ্রদীপ ঘোষের সেরকম কোনও লক্ষ্য না থাকলেও জীবন তাঁকে ‘আদিত্য’র সঙ্গেই ছোটাবে বলে ঠিক করেছে। চার বছর হয়েছে ইসরোতে যুক্ত হয়েছেন তিনি। পাড়ায় চুটিয়ে আড্ডার সঙ্গে কলেজে চুটিয়ে প্রেম সবই করেছেন আজকের বিজ্ঞানী শুভ্রদীপ। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে প্রশ্নের জবাবে জানা গেল অনেক না জানা তথ্য। শুরু হল আমাদের প্রশ্নোত্তর পর্ব।
প্রশ্ন: প্রথম ইসরোতে যুক্ত হওয়া আর আজকে আদিত্য এল ওয়ানের গুরুভার এবং সফল উৎক্ষেপণ এই দুটো মুহূর্ত আপনার কাছে ঠিক কেমন?
শুভ্রদীপ: ইসরোতে যুক্ত হওয়া অনেকটাই কাকতালীয়। আমার কোনও দিনই তেমন উচ্চাকাঙ্খা ছিল না। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিটেক পাশ করে এমটেকও করি। পরে আমি বিদেশে পিএইচডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম হঠাৎই ইসরোর কল লেটার এসে হাজির। অ্যাপ্লাই করেছিলাম অনেক আগেই। ভাবতে পারিনি যে কল লেটার আসবে। যাই হোক, ইন্টারভিউও দিতে গেলাম। সারা দেশে মাত্র চারটে জেনারেল সিট ছিল।
স্বপ্নেই ভাবিনি চান্স পাব। সুযোগ যখন এল তখন অবাক হওয়ার পালা। ভাবছিলাম, স্বপ্ন দেখছি না তো! আর ‘আদিত্য’র ব্যাপারে যদি বলতে হয় তাহলে বলব, এক্ষেত্রে আমার একার কোনও অবদান নেই। আমরা সম্মিলিত ভাবে কাজ করেছি। সাফল্যের ব্যাপারে খুবই উৎকণ্ঠায় ছিলাম।
প্রশ্ন: ‘আদিত্য এল ওয়ানের কোন দায়িত্ব আপনার কাঁধে?
শুভ্রদীপ: দায়িত্ব আমার একার নয়। দায়িত্ব টিমের। আদিত্যকে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে দেওয়াই ছিল আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমি লিকুইড প্রোপালশন পার্টের দায়িত্বে রয়েছি।
প্রশ্ন: এই যে ‘আদিত্য এল ওয়ান’ যখন সূর্যের লক্ষ্যে পৌছচ্ছে তখন গবেষণা কেন্দ্রে আপনাদের সারাদিনের রুটিনটা কী রকম?
শুভ্রদীপ: দেখুন, আমরা বিফল হলে যেমন হই না। আবার সফল হলেও খুব বেশি উচ্ছ্বাস দেখাই না। তাই চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের পর আমরা বসে নেই। আমরা প্রতিদিন পরের ধাপের জন্য কাজ করে গিয়েছি। ‘আদিত্য-এল ওয়ান’র লঞ্চের আগের দিন আমি সারারাত অফিসেই ছিলাম।
প্রশ্ন: ‘আদিত্য এল ওয়ান’ কী কী করবে?
শুভ্রদীপ: ‘আদিত্য এল ওয়ান’ কখনওই সূর্যে ল্যান্ড করতে পারবে না। কারণ সূর্যের তাপমাত্র সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তাই আদিত্যি যাবে এমন একটি জায়গায় যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ভারসাম্য তৈরি হয়। ওখানেই আদিত্য কক্ষপথে ঘুরে ঘুরে সূর্যের ছবি তুলবে। তাই এল ওয়ান নামকরণ করা হয়েছে কারণ এল ওয়ান মানে ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট যেখানে পৃথিবীর ও সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ভারসাম্য তৈরি হয় ।
প্রশ্ন: কতদিন ধরে কাজ করবে ‘আদিত্য’?
শুভ্রদীপ: পৃথিবী থেকে দেড় লক্ষ কিলোমিটার দূরে যাবে ‘আদিত্য’। তারপর একটি কক্ষপথে পৌঁছে ‘আদিত্য এল ওয়ান’ আগামী পাঁচ বছর ধরে সূর্যের রহস্য ভেদের কাজ চালাবে।
প্রশ্ন: ‘চন্দ্রযান-২’ ব্যর্থ হয়েছিল। তারপর ‘চন্দ্রযান-৩’। সেক্ষেত্রে ইসরোর পক্ষ থেকে বলা হল, ‘চন্দ্রযান ২’ এর ক্ষেত্রে আমরা ভেবেছিলাম কীভাবে চাঁদে পৌঁছনো যাবে। আর এবার (তৃতীয়াভিযান) আমরা ব্যর্থতার কারণগুলোকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। আদিত্যর ক্ষেত্রে প্ল্যানটা কীভাবে সাজানো হয়েছে?
শুভ্রদীপ: নাসা অবশ্য আগেই এই কাজ করেছে। ওদের থেকে আমরা ডেটা নিয়ে আমাদের মতো করে প্ল্যান করেছি। আরও কিছু নতুন টেকনিক যোগ করেছি। আদিত্য সফল হবে বলে আমরা আশাবাদী।
প্রশ্ন: চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণের আগে বিজ্ঞানীরা পুজো পুজো দিয়েছেন। সূর্যাভিযানের আগে পুজো দেওয়া হয়েছে?
শুভ্রদীপ: আমদের শ্রীহরিকোটার কাছেই একটি মন্দির আছে যার নাম চেঙ্গালাম্মা৷ এবার সেখানে পুজো দেওয়া হয়েছে। চন্দ্র বা সূর্যাভিযান বলে নয়, আমাদের চেয়ারম্যান প্রতিটি মিশনের আগেই পুজো দেন।
প্রশ্ন:আপনার সাফল্যের পিছনে ভূমিকা কার?
শুভ্রদীপ: আমার সাফল্যের পিছনে অবশ্যই বড় ভূমিকা বাবা-মায়ের। তাছাড়া আমি পাঠভবন স্কুলের কাছেও ঋণী। স্কুলে কখনও আমাদের চাপ দেওয়া হয়নি নিজের মতো করে পড়া শোনার সুযোগ পেয়েছি। শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাশে থেকেছেন।
প্রশ্ন: শুভ্রদীপের পরের লক্ষ্য কী?
শুভ্রদীপ: আমার মনে হয় কোনও কিছুই জীবনে প্ল্যানমাফিক হয় না। তাই জীবন যেভাবে চলছে আমি সেইভাবেই চলতে চাই।