কলকাতা : আমার দেশ ভারত, সেই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তারা আমাদের কলকাতা টিভিকে নোটিস জারি করেছে যে, তাদের টেলিভিশন সম্প্রচারে নাকি দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এবং তারা নোটিস জারি করে বলেছে কেন আপনাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করা হবে না সেটা আপনারা জানান। এটা হল যেভাবে হোক কথা বলা বন্ধ করব।
এটা হল সেই বাঘ আর মেষশাবকের কথামালার গল্পের মত। বাঘ বলল যে তুই আমার জল ঘোলা করছিস। মেষশাবক বলল, সেকি আমি তো নীচের দিক আছি। এতো বয়স হয়ে গেল, ভাবতে সত্যিই সত্যিই কষ্ট হচ্ছে, তবে অবাক খুব একটা হচ্ছি না। কেননা কেন্দ্রীয় সরকার যে সব কাণ্ড কারখানা করে চলেছেন দীর্ঘকাল ধরে। এনআরসি যেমন একটা। যেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একবার বলেছিলেন, আমি আবার হিন্দি ভাল করে বুঝি না। তাতে আমার কোনও অসুবিধা হয় না। বাংলা আমার মাতৃভাষা। চুনকে চুনকে খুঁজে বার করব। মনে হচ্ছে উনি যেন একটা ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা নিচ্ছেন। যেন কারা বাইরের অনুপ্রবেশকারী আমি ধরে বেছে বেছে বের করব। সেটা করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে গো হারান হারান হারলেন।
ছোটবেলায় একটা খেলা খেলতাম নেতাজি বলছেন খেলা। একজন কমান্ডার হতেন। তিনি বসতে বললে বসতে হত। দাঁড়াতে বললে দাঁড়াতে। ফাসিজিমের হাতে খড়ির খেলা। আজ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যে আচরণ কলকাতা টিভির সঙ্গে করছেন, সেটা ওই দাদু বলছেন খেলার মত। সাহিত্যিক সন্তোষমোহন ঘোষ লিখেছিলেন, শাক দিয়ে না হয় মাছ ঢাকলে, শাকটা ঢাকবে কী দিয়ে? ওরা যে এটা করছেন এটা ওরা নিজেরাই নিজেদের অপমান করছেন।
ভারত অনেক বড় দেশ। ভারতে কর্তৃত্বপরায়ণতার জিগির তুলে সাতচল্লিশ সালের পর কেউ কি শাসন ক্ষমতায় আসেননি, এসেছেন তো। কিন্তু টিকতে পেরেছেন কী? এসব আসলে সময়ের ব্যাপার। কেউ কেউ জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। থাকতে পেরেছেন কি তারপর? না পারেননি। কত কোটি টাকা খরচ করেছিলেন বিজেপির মান্যবরেরা পশ্চিমবঙ্গে ভোট কেনার জন্য। কী না করেছেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বলছেন, অতএব সবাই কান ধরে দাঁড়াও। অতএব কান ধরে দাঁড়াব। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বলছেন, নাক খোঁটো অতএব সবাই নাক খুঁটবে।
আমি এতটা গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রের ভাষায় কথা বলছি। এই অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকুন। মাননীয় সংস্কৃতি দফতর সংস্কৃতি মন্ত্রক তারা অনুগ্রহ করে এর থেকে বিরত থাকুন। জোর করে পারবেন না। নন্দীগ্রামের বিশাল লোকটি যিনি মমতাকে বেগম বলে গেলেন, তিনি মিনি পাকিস্তান বলে গেলেন। কেন মুসলমানরা কি এখানে বানের জলে ভেসে এসেছেন? বিজেপির অনুমতি নিয়ে মুসলমানদের এখানে থাকতে হবে বা অন্য কোনও পার্টির অনুমতি নিয়ে? এতো করেও তো পারলেন না। কাজেই দাদু বলছেন, টাকা বলছেন, বা ক্ষমতা বলছেন। এভাবে হয় না।
হিন্দু-মুসলমান ভাগাভাগি করে বা দাদু বলছেন খেলা খেলে ভারতকে সামলানো যাবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে করজোরে নিবেদন, একবার ভেবে দেখুন আপনারা এটা কি ঠিক করছেন? পারবেন না এই করে সামলাতে।