ভগিনী নিবেদিতা, স্বামী বিবেকানন্দের মন্ত্রে যিনি দীক্ষিত হয়েছিলেন মানব সেবায়। ১৮৬৭ সালে আজকের দিনেই উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যানন শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল। বাবা স্যামুয়েল রিচমন্ডের অকালমৃত্যু সমগ্র পরিবারকে ঠেলে দিয়েছিল নিদারুণ দারিদ্রতার দিকে। মার্গারেটের মা একপুত্র ও দুই কন্যাকে নিয়ে ঠাঁই নিয়েছিলেন মাতামহ হ্যামিলটনের বাড়িতে।
১৮৯৫ সালে লন্ডনে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে দেখা হয় মার্গারেট এলিজাবেথের। স্বামীজির বাণীতে মুগ্ধ হয়ে সবকিছু ছেড়ে ১৮৯৮ সালে ভারতবর্ষে চলে আসেন। ভারত তখন ব্রিটিশ শাসনাধীনে। দীক্ষিত হন, স্বামীজি তাঁকে নতুন নাম দেন নিবেদিতা। পরাধীন ভারতবর্ষের শোষিত, নিপীড়িত মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন ভগিনী নিবেদিতা। তাঁর কাজে, তাঁর আত্মনিয়োগ দেখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে বলতেন লোকমাতা। ঋষি অরবিন্দ তাঁর নাম দিয়েছিলেন শিখাময়ী। মানুষের জন্য কাজ করার যে ইচ্ছা তাঁর মধ্যে ছিল, তা আরও জাগিয়ে দিয়েছিলেন স্বামীজি।
স্ত্রী শিক্ষা ও ভারতীয় নারীদের সামাজিক ও সাংসারিক জীবনের মানের উন্নয়ন ঘটানোর পিছনে ভগিনী নিবেদিতার অবদান অনস্বীকার্য। এই মানোন্নয়ন ঘটানোর জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা করে গিয়েছিলেন ভয়াবহ প্লেগ রোগের সময়ে। অসুস্হ অবস্থাতেও দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। শোনা যায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিবেদিতার অনুপ্রেরণায় বিখ্যাত ভারতমাতা চিত্র এঁকেছিলেন। জগদীশচন্দ্র বসুকেও বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহ জুগিয়েছিল ভগিনী নিবেদিতা।
একসময় ঋষি অরবিন্দর বৈপ্লবিক কাজে নাজেহাল হয়ে পড়েছিল ইংরেজ প্রশাসন। ঋষি অরবিন্দকে ধরার ব্লুপ্রিন্ট তৈরিও করে নিয়েছিল ইংরেজ প্রশাসন। সেই খবর যায় বিপ্লবীদের কাছে। উত্তর কলকাতার গোপন ডেরা থেকে গঙ্গাবক্ষে নৌকা করে চন্দননগরে পালিয়ে যেতে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন ভগিনী নিবেদিতা। পরোক্ষভাবে জড়িয়েও পড়েছিলেন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন সহ একাধিক বৈপ্লবিক কাজকর্মের সঙ্গে। এই জন্যই তাঁকে রামকৃষ্ণ মিশনের সংস্রব ত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু, নিবেদিতা আমৃত্যু মানসিকভাবে যুক্ত ছিলেন মিশনের সঙ্গেই।