বলিউড ছবি ‘অকস’ বক্স-অফিসে সাফল্য না-পেলেও সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল। ১৯৯৮ সালে তরুণ পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা ছবিটি তৈরি করেছিলেন। সেই সময় তিনি একেবারেই নবাগত বলা যেতে পারে। অথচ ছবির কাস্টিং লিস্টের দিকে তাকালে বোঝা যাবে না তিনি একেবারে নবাগত পরিচালক। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, মনোজ বাজপেয়ী, রবিনা ট্যান্ডন, নন্দিতা দাস প্রমুখ। ২০০১ সালে ছবি রিলিজ হওয়ার পর বক্স অফিসে ঝড় তুলতে না পারলেও প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ওমপ্রকাশ মেহরা। এই ছবির ঘোষণা যখন হয়েছিল তখন অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন যে কীভাবে একজন আনকোরা নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়ে গেলেন বিগ বি? সে সময় বিগ বি রাজি হওয়াতে তিনি আহ্লাদে আটখানা হলেও একটু অবাক হয়েছিলেন।
সম্প্রতি পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা তার আত্মজীবনী ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার ইন দ্য মিরর’ বইতে অমিতাভ ও তাঁর এই ছবি নিয়ে নানান অজানা কথা শেয়ার করেছেন। এই বইটির একটি অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন যে ‘অকস’ ছবির চিত্রনাট্য অমিতাভের কাছে তিনি দিয়ে এসেছিলেন ১৯৯৮ সালে। তারপর থেকেই তিনি উত্তেজনায় কাঁপছিলেন। অমিতাভজি রাকেশকে বলেছিলেন যে দিল্লি থেকে মুম্বই আসার সময় ফ্লাইটে বসে তিনি এই চিত্রনাট্য পড়বেন। এরপর একদিন রাত বারোটা নাগাদ রাকেশ ওমপ্রকাশ একটি ব্যারিটোন ভয়েসের ফোন পান। রাকেশ বইতে আরও লিখেছেন অত্যন্ত গম্ভীর স্বরে ফোনে প্রশ্ন ভেসে এসেছিল, ‘কী খেতে খেতে এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন আপনি’? প্রথমে রাকেশ ভেবেছিলেন হয়তো তিনি ভুল শুনছেন। একটু আমতা আমতা করতে ফের অমিতজি ওই একই প্রশ্ন করেন। রাকেশ ওমপ্রকাশ ঢোক গিলে বলেছিলেন, ‘মদ আর কোকা কোলা’। শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন অমিতাভ। তারপর বলেছিলেন, ‘বেশ! চলো তোমার এই ছবিটার কাজ তাড়াতাড়ি শুরু করে ফেলা যাক’। তা শুনে সে সময়ের নব্য পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন।
রাকেশের দাবি, এইভাবেই ভারতীয় সিনেমার এই বিরাট তারকা তাঁর ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন সেদিন অমিতাভ রাজি হয়েছিলেন বলেই পরিচালক হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছিলেন। ২০০১ সালে বড়পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা পরিচালিত এই সুপারন্যাচারাল অ্যাকশন থ্রিলার। তিন তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতে নিয়েছিল এই ছবি। পাশাপাশি ‘অকস’-এ অভিনয়ের সুবাদে ওই বছরেরই ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের ‘ সেরা অভিনেতা’ এবং ‘সেরা খলনায়ক’এর বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিলেন মনোজ বাজপেয়ী।
আত্মজীবনীতে অন্য একটি জায়গায় ওমপ্রকাশ লিখেছেন, তাঁর হাত ধরেই বড় পর্দায় ডেবিউ করতেন ‘জুনিয়র বি’। ছবির নাম ও ঠিক হয়েছিল ‘সমঝোতা এক্সপ্রেস’। তিনি জানিয়েছেন এই ছবিতে এক জঙ্গির ভূমিকায় অভিষেককে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু এই ছবির শুটিং ইউনিট নিয়ে লাদাখ রওনা হওয়ার আগে রাকেশকে জয়া বচ্চন ফোন করে সাফ জানিয়ে দেন, অভিষেক ‘রিফিউজি’ হবেন, তবুও ‘সমঝোতা এক্সপ্রেস’ এ চড়বেন না। রাগে-দুঃখে পরিচালক সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর কোনওদিন তিনি এই ছবি বানাবেন না। ‘সমঝোতা এক্সপ্রেস’ এর চিত্রনাট্য সেদিন তিনি জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। পরে রাকেশ ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। সেই সময় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ছিল চরম উত্তেজনা। আর ওই ছবিতে পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট এক জঙ্গির ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল অভিষেকের। মা হয়ে জয়া বচ্চন ছেলে অভিষেককে আর এগোতে দেননি।
এমন সব রোমাঞ্চকর কাহিনি প্রকাশ মেহেরা লিখেছেন তার আত্মজীবনী ‘দ্যা স্ট্রেঞ্জার ইন দ্য মিরর’ বইতে।