কেউ যেতেন স্টুডিওতে। কেউ বা পরিবারের সকলকে নিয়ে বসতেন খাবার টেবিল এ। কেউ বা আবার বিকেলের দিকে কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া।, নববর্ষ মানেই ছিল বাঙালির নিজের উৎসব। এই দিনটা শুধুমাত্র বাঙালিয়ানা উদযাপনের দিন। আবার দিন গোনা শুরু হয়ে গেছে। সামনেই নববর্ষ। বাঙালির নববর্ষ মানেই নতুন জামা, আর হালখাতা। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে দোকানে দোকানে গিয়ে ক্যালেন্ডার জোগাড় আর মিষ্টি খাওয়া। এ তো গেল আমাদের নববর্ষের স্মৃতিচারণ। আজকের বলি তারকারা ছোটবেলায় কেমন ভাবে নববর্ষ কাটাতেন?
নববর্ষের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অভিনেতা পরমব্রত জানান, “বাংলা নববর্ষ আমার কাছে ছিল গোল্ডস্পট। আমি যে সময়ে বড় হয়েছি সেই সময় এটা খুব জনপ্রিয় পানীয় ছিল। অসম্ভব ভালো লাগত খেতে। বাংলা নববর্ষ এলেই মনে হত, হালখাতা করতে প্রত্য়েক দোকানে ঘুরব আর প্রত্যেক দোকানে গোল্ডস্পট খাওয়াবে। এখন নববর্ষের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সংস্কৃতিগুলো বুঋতে শিখেছি। বাংলা নববর্ষ অত্যন্ত উদ্দিপনার সঙ্গে অবিভক্ত বাংলায় পালিত হয়। ঢাকা শহরে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়, তার মধ্যে এত সুন্দর একটা বাঙালিয়ানা মিশে থাকে, তা বাঙালি জাতির কাছে খুব গর্বের। আমার মনে হয় সব ধর্মের উর্ধ্বে গিয়ে আমাদের এই দিনটি পালন করা উচিত।”
অভিনেতা দেবের কাছে নববর্ষ মানেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। তার ভাষায়, “এই দিনটা আমি চেষ্টা করি সমস্ত কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার। দুপুরে থাকবে পছন্দের বাঙালি খাবার আর শেষ পাতে দই মিষ্টি। সবাই মিলে একসাথে খেতে বসবো। খাবারটা বড় বিষয় নয়। কিন্তু খেতে খেতে ওই যে সবাই মিলে আড্ডা, হৈচৈ আর রসিকতা। এটাই যেন পুরো পরিবারের সৌরভ। একটা সময় ছিল যখন গল্প করতে করতে হাত শুকিয়ে যেত। এটাই তো আমাদের নববর্ষ। ঠিক এই দিনটাই ফেরত পেতে চাই আবার।”
অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী জানান, “ছোটবেলায় নববর্ষে হালখাতা করতে বেরনো চাইই চাই। তখন অবশ্য হালখাতা বুঝতাম না। নজর থাকত ওই মিষ্টির বাক্সের ওপর। নকুড়ের ছোট ছোট মিষ্টি দিচ্ছে, ওটাই খাচ্ছি। আর প্লাস্টিকের গ্লাসে কোল্ড ড্রিঙ্কস। তখন তাতেই কী ভালোলাগা মিশে থাকত। ছোটবেলায় মনে আছে, আমাদের অর্ধেকটা ডিম দেওয়া হত পাতে। বলা হত, বেশি ডিম খেলে শরীর খারাপ হবে। আসলে বাকি অর্ধেক ডিম থেকে গেলে রাতের মেনুটা নিয়ে আর ভাবতে হত না। কিন্তু ওই অর্ধেক ডিমেই মিশে থাকত কী ভালোলাগা। নববর্ষের আনন্দটা কিছুটা ওইরকম আমার কাছে। তাকে পুরোটা গায়ে মেখে নিতে হবে। নিউ ইয়ার থাক.. কিন্তু নববর্ষটাও থাক সমানভাবে।”
সৃজিতের কথায়, “নববর্ষের দুপুরে বাড়িতে একটা খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হত। ২ থেকে তিন রকমের মাছ, মাংস একেবারে বাঙালি আয়োজন। সেটা একরকম নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। এখনও সুযোগ পেলেই নববর্ষে বাঙালি খাবারের আয়োজন করি। এছাড়া তেমন বিশেষ কিছু হত না ওই দিনটায়। বড় হওয়ার পরেও নিয়মটা একই রয়ে গিয়েছে।”
অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী জানান, “ছোটবেলার নববর্ষে নতুন জামা পাওয়ার একটা দারুণ আগ্রহ থাকত। কিন্তু এখন সারাবছরই আমরা কেনাকাটি করি। জানি না এই প্রজন্ম কতটা সেই নববর্ষে নতুন জামা পাওয়ার আনন্দ আর নস্ট্যালজিয়াটা বুঝতে পারবে। এছাড়াও, নববর্ষ মানেই অনেকরকম কথা দেওয়া, নেওয়া। নববর্ষ মানেই নিজের কাছে নিজের কিছু প্রতিজ্ঞা। সেটা রাখতে পারা আর না পারার মধ্যেও একটা মজা রয়েছে। নববর্ষে তেমন কোনও নিয়ম পালন করা হত না। কেবল বাড়িতে বাঙালি খাওয়া দাওয়া হত। এখনও সেই রীতিটা বজায় রয়েছে।
অভিনেত্রী পাওলি দাম ভীষণ ব্যস্ত একদিকে সংসার আর একদিকে কাজ নিয়ে। কিন্তু তার কাছে নববর্ষ মানেই সকাল থেকে পছন্দের রান্না করে নিজে হাতে সবাইকে খাওয়ানো। পাওলির ভাষায়, “রেস্তোরাতে খাবার পাওয়া যায় কিন্তু খাবারের সাথে যে আবেগ, ভালোবাসা আর প্রেমটা মিশে থাকে সেটা নিজে হাতে না রান্না করলে হয়না। খুব মনে পরে ছোটবেলা মা যখন স্নান করিয়ে নতুন জামা পরিয়ে দিতো। ওই জামার একটা আলাদা গন্ধ ছিল. আর গরম কাল বলে সবসময়েই নববর্ষ মানেই ছিল সুতির জামা। ওই সুতির জামার গন্ধ এখন কোটি টাকা দামি। আমার কাছে নববর্ষ মানে ওই জামা গন্ধ আর রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা মায়ের হাতের রান্নার সুবাস।”
সত্যি, কে বলে বাঙালি পাল্টে গেছে? হয়তো প্রচ্ছদটা পাল্টেছে কিন্তু বাঙালী আছে বাঙালীয়ানাতেই।