হাওড়া : স্বাধীনতা দিবসের পর পথেঘাটে মাঝে মধ্যেই চোখে পড়ে রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছে কিংবা কোনও ল্যাম্প পোস্ট থেকে ঝুলছে জাতীয় পতাকা। ১৫ অগস্ট পর্যন্ত তার স্থায়িত্ব। তারপর সেই সব জাতীয় পতাকার কি হয়, তার কোনও খোঁজও রাখে না কেউ। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা ১৫ অগস্টের আগে হোক, বা ১৫ অগস্টের পরে, জাতীয় পতাকার অবমাননা হতে দেন না।
এমনই একজন মানুষ হলেন প্রিয়রঞ্জন সরকার। রাজ্য সেচ দফতরের অস্থায়ী কর্মী তিনি। হাওড়ায় তিনি পরিচিত ফ্ল্যাগ ম্যান বলে। ১২ বছর বয়সে একদিন মায়ের সঙ্গে মামারবাড়ি যাচ্ছিলেন প্রিয়রঞ্জন। সেই সময় রাস্তায় একটা জাতীয় পতাকা পড়ে থাকতে দেখেন তাঁর মা। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে রাস্তার ধারে পরে থাকা জাতীয় পতাকা তুলে নিয়ে নিজের ব্যাগে রেখে দেন | নিজের মা’কে রাস্তা থেকে এভাবে জাতীয় পতাকা তুলে নিতে দেখার পর থেকেই শুরু হয় সাধারণ এক যুবকের জাতীয় পতাকা অবমাননার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো | পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর প্রিয়রঞ্জন সরকার নিয়ম করে এক নতুন অভিযান শুরু করেন| ২৩ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি বা ১৫ অগস্ট জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরের দিন থেকেই রাস্তায় পরে থাকা জাতীয় পতাকা তুলে এনে বাড়িতেই সেগুলিকে জমা করতে শুরু করেন তিনি|
আরও পড়ুন : হাওড়ার শিল্পপতিকে ফিল্মি কায়দায় অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি
জন্ম থেকে বালির বাসিন্দা প্রিয়রঞ্জন সরকার বিশেষ ভাবে সক্ষম | তাঁর কথা বলতে সমস্যা হয় | এই সমস্যার জন্য এলাকার অনেকেই তাঁকে তাচ্ছিল্য করে | ১২ বছর আগে যখন রাস্তার ধার থেকে পরে থাকা পতাকা তোলার সময় তাকে যারা তাকে তাচ্ছিল্য করতেন, তাদের অনেকেই এখন তাঁর দেখানো পথেই এগিয়েছে | প্রতিটি বিশেষ দিনের পরের দিন শুরু হয় অভিযান | তিনি নিজের বাড়িতে একটি টিনের বাক্স রেখেছেন। রাস্তায় পরে থাকা জাতীয় পতাকা তুলে এনে ওই বাক্সেই রেখে দেন প্রিয়রঞ্জন| এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজারের বেশি ছোট পতাকা সংরক্ষণ করেছেন রাজ্য সেচ দফতরের অস্থায়ী কর্মী প্রিয়রঞ্জন সরকার। ওড়ার এই ফ্ল্যাগ ম্যান চান, এই ভাবে জাতীয় পতাকার অসম্মানকারীদের বিরুদ্ধে আনা হোক বিশেষ আইন |