জঙ্গলমহল: জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি বৈঠক করতে পুরুলিয়া পৌঁছলেন রাজ্য পুলিসের ডিজি মনোজ মালব্য সহ রাজ্য পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। রবিবার বিকেল পুরুলিয়া শহরের বেলগুমা পুলিস লাইনে পৌঁছন ডিজি। সেখানেই পুলিস লাইনে জেলা পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিক সহ বিভিন্ন থানার আইসি ও ওসিদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন তিনি।
কেন এই বৈঠক?
গত ১৭ মার্চ পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানার রঞ্জায় একটি কালভার্টের তলায় দুটি ল্যান্ডমাইন খুঁজে পায় পুলিস। ওইদিন পীড়াকাটা থেকে গোয়ালতোড়মুখী রাস্তা বন্ধ রেখে মাইন নিষ্ক্রিয় করা হয়। এরপর ঘটনার তদন্ত শুরু করে শালবনি থানার পুলিস। ৬ এপ্রিল শালবনির বিভিন্ন স্থান থেকে তিন যুবককে গ্রেফতার করে পুলিস। পুলিস তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর জানতে পারে, জঙ্গলমহলে ফের নাশকতার পরিবেশ তৈরি করে মাওবাদী কোটায় চাকরি পাওয়াই লক্ষ্য ছিল তাঁদের।
এছাড়াও গত কয়েকমাসে পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় মাওবাদী পোস্টার দেখা গিয়েছে। সেগুলিতে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের নানা রকম হুমকির কথা লেখা ছিল লাল কালিতে। কোনও কোনও পোস্টারে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যদের নাম করে খুনের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। আবার অনেক পোস্টারে পঞ্চায়েতের নানারকম দুর্নীতির কথাও তুলে ধরা হয়। পুলিস সেসব পোস্টার বাজেয়াপ্ত করলেও এ ব্যাপারে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। যদিও দুই জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এসব বিরোধীদের চক্রান্ত। কোথাও মাওবাদীদের কোনও অস্তিত্ব নেই।
শাসকদলের নেতারা এই দাবি করলেও পুলিস কিন্তু বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। সূত্রের খবর, কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয় যুবকদের কাজে লাগিয়ে মাওবাদীরা আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তারই মধ্যে গত ৮ ই এপ্রিল জঙ্গলমহলে মাওবাদী দের ডাকা বনধে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে ভালই সাড়া পড়েছিল। এমনকি শহরেও সেদিন যান চলাচল স্বাভাবিকের তুলনায় কম ছিল। এসব কারণেই পুলিসের উদ্বেগ বেড়েছে। পাশাপাশি তৎপরতাও বেড়েছে পুলিসের। বিভিন্ন জায়গায় যৌথ বাহিনী বেশ কিছুদিন ধরে তল্লাশিও চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন- Suvendu Adhikari: পুরসভা দখল করতেই খুন হন কান্দু, ঝালদায় অভিযোগ শুভেন্দুর
এরপরেই আগামী ১৫ দিনের জন্য রাজ্যে জঙ্গলমহলের মাওবাদী অধ্যুষিত থানাগুলিতে হাইএলার্ট জারি করা হয়। ছুটি বাতিল করা হয়েছে সমস্ত স্তরের পুলিসকর্মীর। এমনকি যারা ছুটিতে আছেন তাঁদেরও সংশ্লিষ্ট থানায় দ্রুত রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। রাজ্য পুলিসের পক্ষ থেকে জেলায় জেলায় চালানো হচ্ছে নাকা চেকিং। তৎপর হয়ে উঠেছে পুলিস। আর এরপরেই রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যের জঙ্গলমহল সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপুর্ণ।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পুরুলিয়ায় একটি কর্মসূচিতে এসে বলেন, ‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সবাই মিলে মাওবাদীদের নিরসন করা উচিত । অথচ মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন রাজ্যে মাওবাদী নেই । কিন্তু বিগত কিছুদিনে মাওবাদীদের ডাকা বন্ধে জঙ্গলমহলে অভূতপূর্ব সাড়া দেখে সবার চোখ খুলে গিয়েছে। এই ব্যর্থতা রাজ্য পুলিস, তাদের ইন্টেলিজেন্সি এবং সর্বোপরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ।’