বিধাননগর: ফের বিস্ফোরক তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদাক কুণাল ঘোষ। সোমবার বিধাননগরে এমপি-এমএলএদের বিশেষ আদালতে বিচারকের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন কুণাল। তিনি বলেন, অর্থলগ্নি সংস্থা আইকোরের হয়ে যিনি প্রকাশ্য মঞ্চে সাফাই গেয়েছিলেন, তিনি এক সময় আমাকে পাগল বলেছিলেন। এখন তিনি মন্ত্রী হয়ে দিব্য়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁকে তো জেলে ঢোকানো দরকার।
অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনায় কুণালের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলাতেই সোমবার তৃণমূল নেতা বারাসতে বিশেষ আদালতে হাজির হন। বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে কাঁদতে কাঁদতে কুণাল একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেন।
আদালতে কুণাল বলেন, আমি প্রথম দিন থেকে তদন্তে সবরকমের সহযোগিতা করে আসছি। দিনের পর দিন আমাকে মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়েছে। জেলে থাকাকালীন আমার প্রচণ্ড দাঁতের যন্ত্রণা হচ্ছিল। জেল কর্তৃপক্ষকে বললেও ডাক্তার দেখানো হয়নি। অথচ এখন দেখছি, প্রভাবশালীরা যখন তখন এসে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে যান। তাঁরা তদন্তে কোনও তদন্তে কোনও সহযোগীতাও করেন না। হয়ত তাঁদের কোনও কিছু লুকোনোর উদ্দেশ্য আছে। কুণালের প্রশ্ন, উডবার্ন ওয়ার্ড কি হাসপাতাল, না কয়েদিদের আশ্রয়খানা?
আরও পড়ুন: Rampurhat Violence: বগটুই-কাণ্ডে ফেরার লালনের শ্বশুর সমীরের ৪ দিনের সিবিআই হেফাজত
এদিন বিশেষ আদালতে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র আরও বলেন, আমি যখন গ্রেফতার হই, তখন প্রভাবশালীরা বাইরে দিব্যি বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। সেইসময় আমার ছেলের পরীক্ষা ছিল। ওর ল্যাপটপ, ফোন, পেনড্রাইভ ও হার্ডডিস্ক বাজেয়াপ্ত করা হয়। আমার মা ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ছুটির জন্য আবেদন করেও তা মঞ্জুর হয়নি। তখন আমার মধ্যে একটা মানসিক অবসাদ কাজ করছিল। আমি কখনই আত্মহত্যার চেষ্টা করিনি। সেই অবসাদের একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল মাত্র।
কারও নাম না করলেও এদিন কুণালের নিশানায় যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অনুব্রত মণ্ডলরা ছিলেন তা বুঝতে কারও অসুবিধে হয়নি। এর আগে সিবিআই হাজিরা এড়িয়ে অনুব্রত মণ্ডলের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া নিয়েও কুণালের মন্তব্য ছিল, তাঁর সিবিআই মুখোমুখি হওয়া উচিত ছিল। ইডি বা সিবিআই যখনই ডেকেছে, আমি তখনই হাজিরা দিয়েছি। অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিকবার ইডির তলবে হাজির হয়েছেন।
আরও পড়ুন: WB Weather Forescast: কাটফাটা গরমে অবশেষে স্বস্তি, চৈত্র সংক্রান্তিতেই বৃষ্টির পূর্বাভাস
পাশাপাশি স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েও শুক্রবার মুখ খোলেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, দুর্নীতি হয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আমলে। কী হয়েছে বা না হয়েছে, তার ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারবেন। শনিবার পার্থর পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাট ধরেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, কুণাল মন্ত্রিসভার সদস্য নন। পার্থদা দীর্ঘদিনের সিনিয়র মন্ত্রী। কোথায় কী হচ্ছে, সব দেখা মন্ত্রী বা মেয়রের পক্ষে সম্ভব নয়। কিছু হয়ে থাকলে তার সামগ্রিক দায় মন্ত্রিসভার। সেদিনই পালটা জবাবে কুণাল বলেন, আমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে না, আমি মন্ত্রিসভার কেউ নই। এটা বলার জন্য যদি কেউ ভাড়াটে সৈন্য বা অতিথি নিয়ে আসে, তার থেকে থুতুতে ডুবে মরা ভাল। আমি মন্ত্রিত্বের জন্য হ্যাংলামো করি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে দলটা করি। তাঁকে পরিস্কার বলে দিয়েছি, এমপি, এমএলএ, কাউন্সিলর হওয়ার জন্য আমার নাম দয়া করে কখনও বিবেচনা করবেন না। তারপরেই সোমবার ফের বিস্ফোরক মন্তব্য শোনা গেল কুণাল ঘোষের গলায়।