কলকাতা: সততাকে পাথেয় করে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবেন। সেই কাজে কখনই নিজের সততাকে বিসর্জন দেবেন না। আজ জীবনের সেই ব্রতই খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কাজে সিলমোহর দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তাও আবার প্রধান শিক্ষক পদে। তবু তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন।
মাথা উঁচু করে কাজের পুরস্কার পেলেন। শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে পুনর্বহাল হলেন প্রধান শিক্ষক আশিস কুমার সিনহা। ৬ মাসের বেশি সময় পর পুনর্বহাল হলেন সিঙ্গুর মহামায়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস কুমার সিনহা।
১৫ দিনের মধ্যে সিঙ্গুর মহামায়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে ফের কাজ শুরু করার নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের। পাশাপাশি সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে সমস্ত বকেয়া বেতন আশিস বাবুকে ফিরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ বিচারপতি ট্যান্ডন ও বিচারপতি সামন্তে’র। প্রধান শিক্ষকের স্বপ্নের বাস্তবায়নের এই ঘটনা হার মানাবে অনেক সিনেমার চিত্রনাট্যকে।
সিঙ্গুর মহামায়া হাইস্কুলেরই প্রাক্তনি আশিস কুমার সিনহা। তিনিই ২০১৪ সাল থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেলেন স্কুলে। তাঁর সময়েই স্কুল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে তাক লাগানো ফল করেছে রাজ্যে। ২০২০ জুন মাসে বেশ কিছু স্কুলের অনিয়ম নিয়ে সরব হন তিনি। কিছু শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর সময়ে স্কুলে না আসা নিয়েও। শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে শিথিলতা নিয়ে তিনি সরব হন। স্কুল কতৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে বিষয়টি দেখার আবেদন করেও কাজ হয়নি।
প্রসঙ্গত, স্কুল কর্তৃপক্ষের সভাপতি তখন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সিঙ্গুরের বিধায়ক ছিলেন যিনি। স্কুলের অনিয়মের প্রতিবাদ করেও কোনও ফল না মেলায় ১৩ অগাস্ট ২০২০ প্রধান শিক্ষক পদে পদত্যাগত্র পাঠান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। পদত্যাগ প্রত্যাহারের অনুরোধ করে স্কুল।
৫ অক্টোবর ২০২০ প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তাব পাঠায় বোর্ডে। ১৫ অক্টোবর ২০২০ প্রধান শিক্ষক পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করতে চেয়ে আবেদন করেন স্কুল ও ডিআই কাছে। ১৭ অগাস্ট ২০২১ বোর্ড পদত্যাগ গ্রহণ করে। এরপর মামলা হয় হাইকোর্টে। প্রথমে একক বেঞ্চে হেরে যান প্রধান শিক্ষক। বোর্ডের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয় একক বেঞ্চ। আইনি লড়াই পৌঁছয় ডিভিশন বেঞ্চে।
আরও পড়ুন-WB Municipal Election 2022: ভোটবঙ্গে অন্য ছবি! বুথের বাইরে আড্ডায় শাসক-বিরোধী!
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, প্রধান শিক্ষকের দেওয়া পদত্যাগপত্র তাঁর স্বেচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত নয়। তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের আবেদন স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি, জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছেও পাঠান। তাহলে কীসের ভিত্তিতে বোর্ড প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য না শুনেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নিল।
আশিস বাবুর আইনজীবী অমিতাব্রত রায় জানান, ১৫ দিনের মধ্যে আমার মক্কেলকে প্রধান শিক্ষক পদে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। পুনর্বহাল পাওয়া প্রধান শিক্ষক আশিস কুমার সিনহা জানালেন, জীবনে সৎ পথে চললে কখনই স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাড়ায় না। স্কুলের পড়াশোনার মান ভালো, এই মান আরও বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করবো। কারণ, এই ছাত্র-ছাত্রীরাই তো ভবিষ্যতে সুন্দর সমাজ গঠনে সহায়ক হয়ে উঠবে।