হাওড়া: বিপন্নপ্রায় বাঘরোলের হত্যাকারী দুই ভাইকে ধরিয়ে দিতে পারলে, বা তাদের সম্পর্কে কোনওরকম খোঁজ দিতে পারলে, মিলবে নগদ পুরস্কার। পশ্চিমবঙ্গ বন দফতরের তরফে এ ভাবে আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা নজির বিহীনই বলা যায়। শনিবার রাজ্য বন দফতরের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। লোকজনের নজরে আনতে এ নিয়ে রাস্তাঘাটে পোস্টার দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে বনদফতরের আধিকারিকদের।
বন দফতর সূত্রে খবর, দুই অভিযুক্তেরনাম প্রভাষ পাত্র ও প্রতাপ পাত্র। সম্পর্কে তারা দুই ভাই। ১৯ জানুয়ারি তিনটি বাঘরোল বা মেছো বিড়ালকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে হাওড়া বাগনানের বাসিন্দা এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। মৃত তিন বাঘরোলের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানা যায়, বিষ খাইয়ে তাদের মারা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসার পরেই বাগনানের কালিকাপুরের বাসিন্দা এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিস। ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। বিরল বন্যপ্রাণী হত্যার দায়ে জামিনঅযোগ্য ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে।
আরও পড়ুন: Migrating Bird: বাঁকুড়ায় পরিযায়ী পাখি সুমারি, কমছে শীতের অতিথি?
এর পরেই গ্রেফতারি আশঙ্কা করে ১৯ জানুয়ারি বিকেল থেকে আত্মগোপন করে রয়েছে প্রভাষ ও প্রতাপ। ফেরার এই দুই ভাইয়ের খোঁজে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তার পরেও অভিযুক্তরা পুলিসের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায়, এদিন আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করে বন দফতর।
হাওড়া গ্রামীণ ডিভিশনের রেঞ্জ অফিসার রাজেশ মণ্ডল ঘোষণা করেন, ‘প্রতাপ ও প্রভাষকে ধরিয়ে দিতে পারলে, আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে। বন দফতরের তরফে সামাজিক স্বীকৃতিও মিলবে।’ তাঁর আশা, খুব শিগগিরই অভিযুক্ত দুই ভাই ধরা পড়বে।
আরও পড়ুন: Sundarbans Turtle: বিরল প্রজাতির মিষ্টি জলের কচ্ছপের জীবনধারা জানতে জিপিএস
মেছোবাঘ, বাঘরোল বা মেছো বিড়াল হল মাঝারি আকারের বিড়ালগোত্রীয় এক ধরনের স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী। ইংরেজিতে বলা হয় Fishing Cat। বৈজ্ঞানিক নাম Prionailurus viverrinus। ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ছাড়াও ব্রাজিল, কোস্টা রিকা, বলিভিয়া, ক্যাম্বোডিয়া ও লাউসয়ে বাঘরোলের দেখা মেলে।
পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য-প্রাণীর তকমা জুটলেও তাদের খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে সরকারি স্তরে চিন্তাভাবনা কতটা করা হচ্ছে, আদৌ করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে বারে বারেই। এই প্রাণীদের সঙ্কট নিয়ে গবেষণা করছেন রাজ্যেরই কিছু গবেষক। দিনের পর দিন যে-ভাবে খড়িবন, জলাজমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে পরিবার নিয়ে মাথা গুঁজবে কোথায়— ভেবেই আকুল বাঘরোলের দল!