দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়ছে জনগণের। যার ফলে প্রতিটি আদালতেই বেড়ে চলেছে মামলার সংখ্যা। কিন্তু সেই তুলনায় বিচারপতির সংখ্যা খুবই নগন্য। যার মধ্যে অন্যতম কলকাতা হাইকোর্ট। এর জেরে হাইকোর্টে জমছে মামলা।
১৮৬২ সালে তৈরি হয় হাই কোর্ট অফ ইন্ডিয়া। অবিভক্ত ভারতের হাই কোর্ট অফ ইন্ডিয়াই আজকের কলকাতা হাইকোর্ট। অর্থাৎ দেশের সবচেয়ে পুরনো হাইকোর্ট হল কলকাতা হাইকোর্ট বা ক্যালকাটা হাইকোর্ট। এর অধীনে দুটি সার্কিট বেঞ্চ আছে। পোর্টব্লেয়ার সার্কিট বেঞ্চ ও জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ। কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের আইন ব্যবস্থাকে পরিচালনার জন্য রয়েছে পোর্ট ব্লেয়ার সার্কিট বেঞ্চ। উত্তরবঙ্গের মানুষকে বিচার চাইতে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে আসতে হতো। কলকাতা হাইকোর্টের ওপর চাপ কমাতে ও উত্তরবঙ্গের মানুষের সুবিধার কথা ভেবে তৈরি হয় জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ। একটি সার্কিট বেঞ্চে একটি করে সিঙ্গল ও একটি করে ডিভিশন বেঞ্চ রয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বিচারপতিরা ওই দুটি সার্কিট বেঞ্চের সিঙ্গল বেঞ্চ (একজন বিচারপতি) ও ডিভিশন বেঞ্চে (২জন বিচারপতি) আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন। কিন্তু বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা ৩১। শুধুমাত্র কলকাতাতেই বিচারপ্রক্রিয়া চালাতে প্রয়োজন ৭২ জন বিচারপতি। এই ৩১ জন বিচারপতির মধ্যে থেকেই পোর্ট ব্লেয়ার ও জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ এর জন্য ১৫ দিন অন্তর তিনজন করে বিচারপতিকে আন্দামান ও জলপাইগুড়ি যেতে হয়। ফলে ওই সময় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ২৫ জন।
https://youtu.be/qG8k71yPFY8
১২ এপ্রিল ২০২১ এর তথ্য অনুযায়ী কলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২ লক্ষ ৪২ হাজার ২৬০। মামলার বিভাগ অনুযায়ী কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের ডিটারমিনেশন ঠিক করে দেন প্রধান বিচারপতি। যেমন– জামিন সংক্রান্ত মামলা, আগাম জামিন সংক্রান্ত মামলা, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার সংক্রান্ত মামলা, নিম্ন আদালতে ফৌজদারি আইনে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আবেদন সংক্রান্ত মামলা। শিক্ষা সংক্রান্ত মামলা, জনস্বার্থ মামলা, সরকারি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা, রিট আবেদন ইত্যাদি। ফলে প্রতিটি মামলারই মামলারই সিঙ্গেল বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চ আছে। ফলে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলা গুলি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি প্রয়োজন। বিচারপতির সংখ্যা এমনিতেই কম। এরওপর পুজো, শীতকালীন অবকাশ ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশে হাইকোর্ট বন্ধ থাকে। যদিও সেইসময় ভ্যাকেশন বেঞ্চ এমার্জেন্সি মামলার শুনানি গ্রহণ করে। তবে সেক্ষেত্রে একটি বা দুটি সিঙ্গল বেঞ্চ ও একটি বা দুটি ডিভিশন বেঞ্চ মামলার শুনানি গ্রহণ করে। কলকাতা হাইকোর্টে বহু বিচারাধীন মামলা আছে। বিচারপতির অভাবে সেই মামলাগুলি শুনানি বা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ফলে মামলার সঙ্গে জড়িত সাধারণ সাধারণ মানুষ দুর্ভোগকে সম্মুখীন হচ্ছেন।
সোমবার আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় কেন্দ্রের আইনমন্ত্রীকে ই-মেল মারফত জানিয়েছেন, অবিলম্বে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের শূন্যস্থানে নতুন বিচারপতি নিয়োগ করা হোক। নতুন বিচারপতি নিয়োগ হলে বিচারাধীন মামলার সঙ্গে যুক্ত সাধারণ মানুষ আইনি সুরাহা পাবেন।