টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দু’টি ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর বাকি তিনটি ম্যাচ ভারতের কাছে ছিল মরণ-বাঁচন ম্যাচ। সেই তিনটির মধ্যে দু’টিতে জিতে আপাতত সিরিজে টিকে ভারত। শুক্রবার রাজকোটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৮২ রানে দাপটে হারিয়ে দিয়ে সিরিজে লড়াই জিইয়ে রাখল ভারত। রবিবার শেষ ম্যাচ বেঙ্গালুরুতে। সেখানেই হবে সিরিজ ফয়সালা। অধিনায়ক ঋষভ পন্থ প্রথম সিরিজটি জিততে পারেন কি না, সে দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।
এ দিনের জয় অবশ্য সহজে আসেনি। টানা চার বার টসে হারলেন পন্থ। দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতকে আবারও প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায়। তবে প্রথমে ব্যাট করেও যে ম্যাচ জেতা যায় সেটা আরও একবার দেখিয়ে দিল টিম ইন্ডিয়া।
https://twitter.com/billa_bagavathi/status/1537975669119799298?t=OsjDFEAeyZMeRQYFwr5KHw&s=19
এই জয়ের পিছনে মূল কারিগর যদি কেউ হন, তা নিঃসন্দেহে দীনেশ কার্তিক। আর তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ডিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে শেষ পর্যন্ত জায়গা পাবেন কিনা, জানা নেই। তবে শুক্রবার কার্তিক যে ইনিংসটা খেললেন, তাতে অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানে তিনি না উঠলেই সকলে অবাক হবে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর হোক বা জাতীয় দল, কার্তিক ক্রমশ’বিপদ তারণ’হয়ে উঠছেন।
প্রথমে ব্যাট করে দল মাঝপথে বিপদে পড়েছে? ডিকে নেমে মারকাটারি ইনিংস খেলে দলকে লড়াই করার জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছেন। দল রান তাড়া করতে নেমে বিপদে পড়েছে? সেই কার্তিক আবার ঝোড়ো ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে দিচ্ছেন।
রাজকোটে আগে ব্যাট করতে নেমে ভারতের অবস্থা মোটেই ভাল ছিল না। পন্থ যে দলের নেতা, দায়িত্ব অনেক – সেটাই ভুলে যাচ্ছেন বারবার । বেহিসাবি স্কুলছাত্রের মতো শট খেলে আউট হওয়ার পর দলের সহ নেতা হার্দিকের সঙ্গে কাউকে জুটি বাধতেই হত। সেই কাজটা কার্তিকই করলেন।
Between Dinesh Karthik's first T20I and his first T20I fifty, we all grew up pic.twitter.com/3toXIiqCz3
— ESPNcricinfo (@ESPNcricinfo) June 17, 2022
ক্রিজে এসেই দক্ষিণ আফ্রিকা বোলারদের পাল্টা আক্রমণ করে চাপে রাখতে শুরু করলেন। সতীর্থকে দেখে ভরসা পেতেই হাত খুলে মারা শুরু করেন হার্দিকও। দু’জনের জুটিতে ৬৫ রান ওঠে। ওই সময়ে এই জুটি এমন লড়াইটা না করলে ভারতের রান ১৫০ এর গন্ডি টপকাতো কিনা সন্দেহ রয়ে যাচ্ছে। ডোয়েন প্রিটোরিয়াসকে অনায়াসে ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরি করার পর, কার্তিক আউট হলেন বটে। কিন্তু ততক্ষণে ভারত ভাল জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল।
এরপর আবেশ খানরা আটকে দেয় প্রোটিয়াসদের।
https://twitter.com/ChhattisgarhThe/status/1537976046095454209?t=a9qLWvZiJqcR1WjWkrBvdQ&s=19
ভারত বিপদে পড়েছিল শুরু থেকেই। আগের ম্যাচের নায়ক ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় (৫) দলের ১৩ রানের স্কোর ফিরে যান। শ্রেয়স আয়ারও (৪) পারেননি। পন্থ এসে কিছুটা সামাল হয়তো দিয়েছিলেন হার্দিকের সঙ্গে। তবে দায়িত্বজ্ঞানহীন শটে আউট হওয়া কে আটকাবে? রাহুল দ্রাবিড়ের মতো কোচকে সামনে পেয়েও পন্থ যে কী শিখেছেন, সেটা তিনিই ভাল জানেন। দ্রাবিড়ের ক্রিকেটবুকে নিঃসন্দেহে এ রকম কোনও শটের জায়গা নেই। কোনও দিনই ছিল না। থাকবেও না। পন্থ সেটা তাড়াতাড়ি বুঝলে তাঁরই ভাল। আর রাহুলের কড়া মানসিকতা শুধু ঋদ্ধিমানের জন্যই থাকবে! কেন পন্থকে বাইরে বসিয়ে বোঝানো হবে না, নিজেকে তাড়াতাড়ি শুধরে নাও।
ভারত কিন্তু অতীতে স্বয়ং কপিলদেবকে টেস্ট ম্যাচে বেহিসাবি শট খেলার জন্য পরের টেস্টে বাদ দিয়ে মাঠে নেমেছিল। সেই টেস্টে ইডেনে কী ঘটেছিল, আজও ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীরা সকলে জানেন। পন্থ কোন ছাড়! ‘চ্যাপেল গেট’ বিতর্ক হয়েছিল ঠিক এই ইস্যুতে। সেদিন ভারতীয় দলের কোচ গুরু গ্রেগ এই প্রশ্নটাই সেই দলের নেতাকে করেছিলেন। নেতা সৌরভকে শুনতে হয়েছিল:’হতে পারো নেতা, কিন্তু এমন অফ ফর্মে থেকে প্রথম একাদশে তোমার কি জায়গা পাওয়া উচিত?’ কঠিন বাস্তবের মুখে দাঁড়িয়ে গ্রেগ-সৌরভ ডুয়েল নাড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটকে। রাহুল সেদিনও দলে ছিলেন। আজও আছেন। তিনি সেদিন ছিলেন, সৌরভের সতীর্থ ক্রিকেটার। আর আজ তিনি দলের কোচ। আর যাই হোক, রাহুল গুরু গ্রেগের রাস্তায় হাঁটতে চান না। তাই পন্থ ঝাঁকুনি না খেয়ে একই ভুল করে যান। তিনি নেতা হন।
কবে একদিন খেলে দেবেন, সেই আশায় বসে থাকেন এই ভারতীয় বোর্ডে পন্থ-এর গড ফাদাররা।
ছবি : সৌ টুইটার।