টস জিতলে তিনদিনের রঞ্জি ট্রফি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে, আগেই বোলিং করতে নামতো। কিন্তু ঝাড়খন্ডের নেতা সৌরভ তিওয়ারি টস জিতে সেটাই করে। সবুজ ঘাসে মোড়া উইকেটে লাল বল হাতে বোলারদের নিয়ে নেমে ছিল। কিন্তু লাভের লাভ হয়নি। বরঞ্চ বাংলার টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ে প্রথমদিনে হাসি মুখে হোটেল ফিরল কোচ অরুনলাল – সৌরশিসদের ছেলেরা। প্রথম দিনের শেষে এক উইকেট খুইয়ে ৩১০ রান। ক্রিজে আছেন প্রথমশ্রেণি ক্রিকেটে প্রথমবার সেঞ্চুরি (১০৬) করে ফেলা সুদীপ ঘরামি। সঙ্গী অভিজ্ঞ অনুষ্টুপ মজুমদার (৮৫)।
নৈহাটি শহরের ছেলে সুদীপ ব্যাঙ্গালোরে পৌঁছে দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচে রানই করতে পারেনি। সেই ২৩ বছরের তরুণের উপর ভরসা রেখেছিল বাংলার টিম ম্যানেজমেন্ট। তার কৃতজ্ঞতা ঘরামি দিল এক চিত্তাকর্ষক ইনিংস খেলে। জাস্ট ক্রিকেট একাডেমিতে শুরু হওয়া এই ম্যাচে তিন নম্বর ব্যাটিং স্লট ছিল ঘরামির জন্য। প্রথমে হাফ সেঞ্চুরি করার মানসিকতা বলে দেয়, দিনটি তাঁর। বিপক্ষের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলার – স্পিনার নাদিমকে স্টেপ আউট করে লং অফ দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ঘরামি ব্যাট তোলেন অভিনন্দন গ্রহণ করতে ( ৮৮ বলে ৫৪ রান)। দলের রান তখন ৫৪ ওভারে এক উইকেটে ১৮৪। এরপর একই মেজাজে ৯০ এর ঘরে ঢোকেন অনুকুলের বল মিড অফের উপর দিয়ে বাউন্ডারি পাঠিয়ে। সেঞ্চুরি করেন স্কোয়ার লেগে বল ঠেলে। তাঁর এই ইনিংস সাজানো ১২ টি বাউন্ডারি আর একটি ওভার বাউন্ডারিতে।
বাংলার দুই ওপেনার কিন্তু দারুণভাবে শুরু করেন। দলনেতা অভিমন্যু ঈশ্বরণ(৬৫)এলবিডব্লু আউট হওয়ার আগে অন্য ওপেনার অভিষেক রমন(৪১)পিঠের পেশীতে হঠাৎ যন্ত্রণা হতে শুরু করায় ড্রেসিংরুমে ফিরে যান। তারপর সুদীপ আসেন। ঈশ্বরণ ফিরতে আসেন অনুষ্টুপ। এই জুটি এদিন ১৭৮ রান তুলে নিয়েছেন। আর দলকে মজবুত রানের ইনিংস গড়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার কাজটি করে চলেছেন।
সুদীপ – অনুষ্টুপ জুটি এখনই তুলে নিয়েছে ১৭৮ রান।সুদীপ নিজে খুব খুশি: ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের এই ব্যাটারটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করে বেজায় খুশি। জানিয়েছেন,” টিম ম্যানেজমেন্ট ভরসা রাখায় মন খুলে খেলছি। শুরুটা একটু উইকেট বুঝে ব্যাট করেছি। সেই সময় ঈশ্বরণ, অনুষ্টুপ গাইড করে গেছে। এরপর দলের জন্য সেরাটা দিয়ে যেতে চাই। রঞ্জি ট্রফি চাই।”
কোচ অরুনের মতে সুদীপ দুর্দান্ত:
বাংলা দলের কোচ অরুণলাল দলের খেলায় খুবই সন্তুষ্ট মনে হল। দিনের শেষে বলেছেন, ” সুদীপ শেষ তিনটি ম্যাচে রান করতে পারেনি। তবু ওর উপর আমরা ভরসা হারাইনি। এক দারুন প্রতিভাবান ক্রিকেটার। মাথা ঠাণ্ডা। চুপচাপ থাকে। কোনও অভিযোগ শুনিনি। দারুন টিমম্যান। আর দেশের ৫ জন সেরা ফিল্ডারের মধ্যে ওকে রাখতেই হবে।” বাংলার লালজী চান, দ্বিতীয় দিনও ব্যাট করে যেতে। সুদীপের থেকে চান ডবল সেঞ্চুরি। আর দলের এবার সবচেয়ে বেশি রান করে রাখা অনুষ্টুপের সামনে আবার বড় রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকার সুযোগ। এই উইকেট দারুন বলে মনে করছে বাংলা শিবির। বাংলার বোলাররা এই উইকেটে কেমন বল করেন তার উপর রঞ্জি ভাগ্য নির্ভর করবে।
ব্যাঙ্গালোরে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। দুই ইনিংস না সম্পূর্ণ হলে, বাংলার কোশেন্ট ভালো থাকায় সেমি ফাইনালে চলে যাবে। কাজেই বলাই যায় তিনদিনের ম্যাচে প্রথমদিনই অ্যাডভান্টেজ নিয়ে খেলতে শুরু করেছে।
ছবি : সৌ সিএবি।