আগরতলা: আড়াই দশকের লড়াই শেষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করল ব্রু উপজাতি গোষ্ঠী (Bru Migrant Voters)। বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা নির্বাচনে ধলায় জেলার (Dhalai district) আমবাসা বিধানসভা কেন্দ্রের (Ambassa Assembly Constituency) হাদুক্লাউপুরা (Haduklaupara) এলাকায় ভোট দিতে লাইনে দাঁড়ান ব্রু সম্পরদায়ের মানুষেরা। দু’দশক ধরে অমানুষের মতো উদ্বাস্তু জীবন কাটানো ব্রু উপজাতিদের পুনর্বাসনের পর এই প্রথম দেশের হয়ে ভোটাধিকারের সুযোগ পেলেন তাঁরা। এদিন সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁরা তাদের ভোট দেন। এদিকে বক্সনগরে সিপিএমের নির্বাচনী এজেন্টকে মারধর করা হয়। অভিযোগের তীর বিজেপির দিকে। কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে বুথ দখল, সন্ত্রাসের অভিযোগ জানাল কমিশনে। ত্রিপুরারা নির্বাচনী অফিসার জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট অভিযোগগুলির তদন্ত করা হচ্ছে। সকাল থেকেই এমন বিক্ষিপ্ত অশান্তির ছাড়া নির্বিঘ্নেই চলছে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। এদিন ব্রু উদ্বাস্তুরা নিজেদের ভোটধিকার প্রয়োগ করে যথেষ্ট খুশি। ইতিমধ্যে তাঁদের নিজের ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলেও প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। ভোটার তালিকায় নাম তোলায় রাজ্যে আশ্রিত ৬৩০০ ব্রু উপজাতি পরিবারের ২০ হাজার ভোটার পায় ত্রিপুরা। বিজেপি এবং কংগ্রেসকে নোটিস দিল নির্বাচন কমিশন। আদর্শ আচরণবিধির মধ্যেই দলের অফিসিয়াল টুইটার থেকে ভোটদানের আবেদন জানানোর এই দুই দলকে নোটিস কমিশনের। দুপুর ৩টে পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসেই ত্রিপুরা হাইকোর্ট বিজেপির মানিক সাহার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ব্রু উপজাতিদের ভোটাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। ব্রু উপজাতির মানুষ গত ২৫ বছর ধরে এই অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
আরও পড়ুন:Group D: গ্রুপ ডি মামলায় চাকরিহারাদের এখনই টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে না
ব্রু উদ্বাস্তু কারা?
ব্রু, যাদের রিয়াং বলা হয়, তারা উত্তর-পূর্ব পার্বত্য এলাকায় ছড়িয়ে থাকা একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী। ইতিহাস বলে এরা মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং অসমের বিভিন্ন অংশের আদি বসবাসকারী। ত্রিপুরায় এখন অধিকাংশ ব্রু উদ্বাস্তু শিবিরে থাকেন। মিজোরাম থেকে বিতাড়িত হয়ে জমিজিরেত, ঘরদোর ছেড়ে তাঁরা আশ্রয় নেন এই রাজ্যে।
কীভাবে ঘরছাড়া হলেন?
১৯৯৫ সাল। ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন এবং মিজো স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন দাবি তোলে, ব্রুদের ভোটার তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলতে হবে। কারণ ব্রু-দের সঙ্গে মিজো জাতিগোষ্ঠীর কোনও সম্পর্ক নেই। তারা মিজোরামের আদি বাসিন্দা নয়। মিজোরা তখন ব্রুদের ‘ভাই’ বলতে শুরু করে, যার অর্থ বহিরাগত অথবা অ-মিজো। দাবি যখন জোরজবরদস্তিতে পৌঁছে যায়, তখন ব্রুরাও তার পালটা আক্রমণ শুরু করে। যা নিয়ে মিজোরাম জুড়ে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ব্রুরা সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলায় অবস্থা ভয়াবহ হয়ে যায়। গড়ে ওঠে ব্রু ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট এবং ব্রু ন্যাশনাল ইউনিয়ন। তারা তখন পৃথক ব্রু স্বশাসিত জেলা পরিষদ গঠনের দাবি জানায়। এনিয়ে মিজোদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত বাধলে ব্রুদের ঘরছাড়া করা হয়। প্রায় ৩৫ হাজার উপজাতি মিজোরাম ছেড়ে উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর উদ্বাস্তু শিবিরে এসে আশ্রয় নেয়।