ভারতের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বর্ষ পূর্তিতেই শতবর্ষে দেশের আর্থিক হাল কী হবে, তার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তা নিয়ে শুরু হয়েছে মোদি অনুগতদের আগ্রাসী প্রচার। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা এক রকম দাবি করছেন। আবার সেই দাবিকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ২০৪৭ সালে ভারতবাসীর আর্থিক হাল ঠিক কী হবে, তা নিয়ে সরকারি বিবৃতির লড়াই শুরু হয়েছে। যা দেখে মনে হতেই পারে, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য নয়, মোদিকে তুষ্ঠ করার প্রতিযোগিতা চলছে।
ভারত নিম্ন মধ্যবিত্তের দেশ। যদি আগামী ২০৪৭ সাল অর্থাৎ স্বাধীনতার শতবর্ষে দেশকে উচ্চ মধ্যবিত্ত দেশে উন্নীত করতে হলে, গড়ে প্রতি বছর সাত থেকে সাড়ে সাত শতাংশ হারে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আর্থিক পরামর্শদাতা সংস্থার প্রধান বিবেক দেব রায় এক সরকারি সমীক্ষা রিপোর্টে এমনই দাবি করেছেন। তিনি মনে করেন, ভারতকে বা তার নাগরিকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করতে যদি বছরে সাত থেকে সাড়ে সাত শতাংশ হারে জাতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধি ঘটে তাহলেই মাথা পিছু আয় কমপক্ষে দশ হাজার ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বিবেক দেব রায়, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া ওই রিপোর্টে দাবি করেছেন, ভারতকে উচ্চ মধ্যবিত্ত দেশে উন্নীত হতে পঁচিশ বছর সময় লাগবে। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক পরামর্শ দাতাদের মতে, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত হয়ে উঠবে কুড়ি ট্রিলিয়ন ডলারের দেশ।
কিন্তু মোদির ক্যাবিনেট সদস্য বাণিজ্য মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল আবার কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, ২০৫২ সালের মধ্যে ভারত তিরিশ ট্রিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে ফেলবে। তার মানে, ২০৪৭ থেকে ২০৫২ অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধান। এই সময়ের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি আরও অতিরিক্ত দশ ট্রিলিয়ন ডলার অর্জন করবে।
এখন প্রশ্ন , কিসের ভিত্তিতে এসব দাবি হচ্ছে।
তা কিন্তু স্পষ্ট নয়।
সেই প্রচার আর প্রচার। মোদি জমানার বীজমন্ত্র। উন্নয়ন নিয়ে প্রচারের ফানুষ উড়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীকে তুষ্ট করার নানা আয়োজন। আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্বর মতো জ্বলন্ত বিষয় গুলি নিয়ে এইসব মন্ত্রী, বা মোদি অনুগত অর্থশাস্ত্রীরা মুখে কুলুপ এটে রয়েছেন। প্রত্যহ নতুন নতুন তথ্য, নতুন নতুন স্বপ্ন জনতার মনে বর্তমানের বিপন্নতা নয়, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মায়াবী জগৎ নির্মাণ করার এক নিরলস প্রক্রিয়া চলছে মোদি জমানায়। স্রেফ উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়াটাই যেন বিজেপি সরকারের মোক্ষ।