Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
চতুর্থ স্তম্ভ (Fourth Pillar) | রামায়ণের সাত কাহন, মোদিজি জানেন?
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  অর্ক্য চট্টোপাধ্যায়
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৪:৫০:১৮ পিএম
  • / ৮৬ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • অর্ক্য চট্টোপাধ্যায়

যত কান্ড এখন কাঠমান্ডুতে নয়, সব খবর এখন অযোধ্যা কে ঘিরেই। সবটাই রাম কে ঘিরে আলোড়িত, পুরো ভারত না হলেও উত্তর ভারত তো বটেই। ২২ জানুয়ারি ২০২৪, পাঁজি বলছে দুপুর ২ টো থেকে মহেন্দ্রযোগ ও আছে, অমৃতযোগও আছে, সে সময় শুক্লপক্ষ ত্রয়োদশী পড়ে যাবে,  প্রধানমন্ত্রী নিজেই মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন এরকমটাই জানানো হয়েছিল, তো দুধার থেকে আপত্তি আসে, প্রথম আপত্তি হল একজন অতি পিছড়ে বর্গের মানুষ কি ভাবে মূর্তি স্পর্শ করবে? আপত্তি মেনেই ডঃ অনিল মিশ্রা কে বাছা হয়েছে, জাতে ব্রাহ্মণ। দ্বিতীয় আপত্তি ছিল যিনি হবেন মূখ্য যজমান, তাঁর স্ত্রীকেও তো থাকতে হবে,আমাদের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী আছে কিন্তু নেই। তো মিশ্রাজীর স্ত্রী আছেন, তিনিই বসবেন। খুব পরিস্কার করে জানানো হল, আসলে পুজোর হক, যজমান হবার অধিকার শুদ্রদের নেই। আপাতত এ রাষ্ট্র জ্যোতিষ, পাঁজি, খনার বচন মেনেই চলছে। অতএব ২২ জানুয়ারি গর্ভগৃহে নরেন্দ্র মোদি থাকছেন, এবং পাঁজি মেনে ঐ অমৃতযোগেই মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন পুজারীরা। এবার আপনি যদি এসবের মানে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে সাফ জানাচ্ছি এর মানে আমি জানি না তবে এসব বিচার করেই নাকি এই শুভ মূহুর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিন অযোধ্যায় লাড্ডু বিতরণ হবে, এদিন অযোধ্যাসহ উত্তর ভারতে দেওয়ালি উদযাপন হবে।

দেওয়ালি কেন? কারণ অশুভ কে নাশ করে, রাবণ ছিলেন অশুভ র প্রতীক, তাকে নাশ করে শুভ র জয়। অসত্যের ওপর সত্যের জয়। এবং তারপর রাজা রাম, লক্ষণ হনুমান কে নিয়ে ফিরছেন অযোধ্যায়, অযোধ্যার মানুষজন খুশি, তাদের অন্নের অভাব নেই, তাদের বস্ত্র, বাসস্থানের অভাব নেই। লক্ষ্মী সে রাজ্যে সদা বিরাজমান। সেই রাজ্যে অভাব ছিল শুধু পরম পুরুষ রামের, তিনি আসছেন, রাজ্যের মানুষ খুশি তাই দীপ জালানো হচ্ছে প্রত্যেক অঙ্গনে, প্রত্যেক দেউড়িতে, প্রত্যেক বাটিকায়, রাজপথে বা গলিপথের ধারে, মিষ্টান্ন তৈরি হচ্ছে, গোয়ালার দল দুধ নিয়ে এসে ঢালছেন বড় পাত্রে, ওদিকে অন্ন প্রস্তুত হচ্ছে, সুশিদ্ধ হচ্ছে বিভিন্ন মাংস। রকমফের জন্তু আর পাখির মাংস এনে হাজির করেছে ব্যাধেরা, প্রকৃত রসিক মানুষ সোমরস নিয়ে হাজির, দ্রাক্ষাফল জারিয়ে সে আরক চেখে দেখছেন প্রাজ্ঞ মুনিগণ। দীপের আলোয় অযোধ্যা সরযূ নদীর জল আলোকিত।

এমনটাই লেখা আছে রামায়ণে। এইখানেই বিরাট কেলো। কোন রামায়ন? বাল্মিকী রামায়ণের প্রথম আর শেষ কান্ড, মানে প্রথম আর শেষ অধ্যায় সম্পর্কে গবেষকদের মত, এ দুটো অনেক পরে লেখা হয়েছে, মানে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম পর্যন্ত বাল্মিকী র রচনা, বাকি দুটো কান্ড অন্য কারোর বা অন্য অনেকের। তাহলে সাত কান্ড রামায়ণের, দুটো খন্ড এমনিতেই বাদ পড়ল বা অন্তত প্রশ্নের মুখে। এরপর বাকি পাঁচ কান্ডেরও বহু ছোট ছোট অংশ প্রক্ষিপ্ত বলে ধারণা, কাদের? যারা রামায়ণ নিয়ে গবেষণা করছেন, তাদের। এদিকে সেই বাল্মিকী রামায়ণের কোনও লিখিত রূপ নেই, যা আছে তাও আবার কেউ একজন পড়ে তার মতন করে লিখেছেন। নানান পুরাণে নানান গল্প লেখা আছে, বৌদ্ধ ধর্মে, জৈন ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে রামের উল্লেখ আছে, কিন্তু সেও নানা রকম। এত ধরণের গল্প আছে যা আসলে আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র কেই মনে করিয়ে দেয়। ধরুন, ব্যায়গা রামায়ণ। ব্যায়গা হলো মধ্যপ্রদেশ ছত্তিশগড়ের এক আদিবাসী সম্প্রদায়, তাদের ও নিজেদের রামায়ণ আছে। সেখানে রাম লক্ষণ সীতা বনবাসে গেছেন। একদিন এক অপ্সরা এসে লক্ষণকে প্রপোজ করে বসে, হে লক্ষণ, তোমাকেই আমার ভাল লেগেছে, এসো আমরা দুজনে মিলিত হই। সপাট প্রপোজাল। লক্ষণ সবিনয়ে জানালেন যে না তিনি বিবাহিত, এবং পত্নীনিষ্ঠ, অতএব হে অপ্সরা আমি তোমার প্রোপজালে সায় দিতে পারছি না। অপ্সরা ভাবলো লক্ষণ ঢপ দিচ্ছে, সে পরীক্ষা করার জন্য তার হাতের কানের গয়না খুলে লক্ষণের বিছানায় রেখে দিল। খানিক বাদেই সেখানে সীতা এসে হাজির। বনে থাকলে হবে কি সুপক্ক মাংস এবং সোমরস এদুটো কেবল রাম লক্ষণের নয়, সীতাও ভালবাসতেন। আর মাংসের অভাব হলেই যেতেন ঠাকুরপোর কাছে, গিয়ে আবদার করতেন একটু মাংস এনে দাও রান্না করি। সম্ভবত সেরকম আবদার নিয়েই সীতা এসেছিলেন, কিন্তু ঘরে ঢুকে দেখেন লক্ষণের বিছানায় মেয়েদের গয়না। লক্ষণের বৌ ঊর্মিলা তো সীতারই বোন, অতএব সীতা রেগে গ্যালো, এটার মানে কি? তুমি বোন কে ফেলে এখানে এসে ফুর্তি করছো? লক্ষণ অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো যে ব্যাপারটা আলাদা, কিন্তু কে কার কথা শোনে, সীতা তো রেগে আগুন, সে বলেই যেতে থাকলো। তখন আর কোনও রাস্তা না দেখে লক্ষণ অগ্নিপরীক্ষা দিতে সম্মত হল। আগুনের মধ্য দিয়ে ক্লিনচিট নিয়ে বেরিয়ে এলো। মানে আমরা যে সীতার অগ্নিপরীক্ষার কথা বলি, তার বহু আগেই ব্যায়গা আদিবাসী সম্প্রদায়ের রামায়ণে লক্ষণের অগ্নিপরীক্ষার কথা বলা আছে।

অন্তত দুটো রামায়ণে সীতাকে রাবণের কন্যা হিসেবে দেখানো হয়েছে। নবম খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে গুণভদ্রের লেখা সেখানে অলকাপুরির রাজা অমিতভেগা র মেয়ে মান্যবতির দিকে কুনজর দিয়েছিলেন রাবণ। মান্যবতি এর প্রতিশোধ নেবার জন্য রাবণ মন্দোদরীর কন্যা হয়ে জন্ম নেয়, রাবণ বেদ পুরাণ জ্যোতিষ বিশারদ ছিলেন, তিনি গণনা করে দেখলেন এই কন্যা তাঁর মৃত্যুর কারণ হবে, তিনি এই কন্যাকে এক চরের হাতে দিলেন, কোথাও ফেলে আসতে বললেন। সেই চর যেখেনে ফেলে এলো সেই জমি রাজা জনকের। পরের দিন হাল নাঙ্গল নিয়ে হাজির তিনি ও তাঁর স্ত্রী। হালের ফালের পাশে পাওয়া গেল এক কন্যা কে, হালের ফাল কে বলা হয় সীতা, কন্যার নাম দেওয়া হল সীতা। এই রামায়ণের উপাখ্যানে সীতা রাবণের কন্যা। রাম রাবণের লড়াইটা আসলে শশুর আর জামাই এর।

পঞ্চম খৃষ্টপূর্বাব্দে সংঘদশা রচিত জৈন রামায়ণেও সীতা আসলে রাবণের কন্যা। সেখানে রাবণ জানতে পারে এই কন্যা তাঁর বংশ ধ্বংস করবে, তাই তাকে অনেক দূরে এক মাঠে পুঁতে রেখে আসে। রাজা জনক তাকে খুঁজে পায়। বেগুসরাই, যেখান থেকে উঠে এসেছেন তরুণ নেতা কানহাইয়া কুমার, তার মুখেই শুনেছিলাম আর এক গল্প। সেখানে সীতার জন্মস্থান ঐ বেগুসরাই তে। এক মন্দিরও আছে, সেইখানে অযোধ্যা থেকে রাম লক্ষণ এসেছিল বিয়ে করতে, বরযাত্রী নিয়ে। সেই কথা মনে রেখে এখনও বছরের নির্দিষ্ট দিনে রাম লক্ষণের মূর্তি নিয়ে অযোধ্যা থেকে বারাতি মানে বরযাত্রিরা আসে দল বেঁধে। রাম সীতার বিয়ে হয়, বরযাত্রীদের পেটপুরে খাবারের আয়োজন থাকে, তার সঙ্গেই থাকে অকথ্য গালিগালাজ, প্রথা অনুযায়ী, গ্রামের মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছে তাই গ্রামের মহিলা বৃদ্ধরা অকথ্য ভাষায় সম্বোধন করেন রাম লক্ষণ আর বরযাত্রীদের। সেই প্রথা এখনও বরকরার। গ্রামের মেয়ে চলে যাচ্ছে অযোধ্যা তাই বিদায়ের সময় রাম লক্ষণ আর বারাতির জন্য বরাদ্দ থাকে চোখা চোখা গালিগালাজ। ভাবুন দেখি রাম কে গালিগালাজ, যোগী বাহিনি শুনতে পেলে গলার মাপ নিয়ে ছাড়বে। চীনের রামায়ণ। চীন নিয়ে এত ঝামেলা, কিন্তু মোদীজী সম্ভবত খেয়াল করেন নি যে চীনা ভাষাতে রচিত দুটো জাতক কাহিনীতে রামের উল্লেখ আছে, প্রথমটিতে রামের নাম বোধিসত্ব।লংকা হলো রাবণের রাজ্য, সেই শ্রীলঙ্কায় সংস্কৃত ভাষায় কুমার দাস রচনা করেছিলেন ‘জানকী হরণ”। সে উপাখ্যানে রাবণ কে এক অত্যাচারী রাজা হিসেবেই দেখানো হয়েছে, কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই ঐ রামায়নের কাহিনী অস্বীকার করে রাবণ হয়ে ওঠেন এক পরম বিদ্বান, বেদবত্তা এক বৌদ্ধ ভিক্ষু। তিব্বতে রামায়ণের ৬ টা পান্ডুলিপি পাওয়া যায়, একটার সঙ্গে অন্যটার বিস্তর গরমিল। এখানে কিন্তু কুম্ভকর্ণ বধ হচ্ছে না। কুম্ভকর্ণ যুদ্ধ করছেন বটে কিন্তু যুদ্ধে হেরে যাবার পরে আবার খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ছেন। ওদিকে লক্ষণের শক্তিশেলের গল্পটাও নেই, কিন্তু হনুমান যে কৈলাশে এসেছিলেন তার বিস্তারিত বর্ণনা আছে। সেখান থেকে যে ঔষধি নিয়ে গিয়েছিলেন সে গল্পও আছে কিন্তু সেটা যে লক্ষণের জন্য ছিল এমন কথা সেখানে নেই। সুবর্ণদ্বীপ, বালদ্বীপ, যবদ্বীপ মিলিয়ে ইন্দোনেশিয়া। সেখানে দশম শতাব্দীতে ওখানকার রামায়ণ রচনা হয়, যবদ্বীপের ঐ রামায়ণের নাম ছিল ‘রামায়ণ কাকাবিন।‘ বার্মায় রাম ভাত্তু। বার্মায় বৌদ্ধরা এসে রাম সংক্রান্ত ধর্মপাঠ ইত্যাদিকে তুলে দেবার বহু চেষ্টা করেও সেখানকার রাম ভাত্তু কে মুছে দিতে পারেনি বরং এখনও মায়নামারে রামায়ণ নিয়ে রাম নিয়ে যত অনুষ্ঠান হয় তত অনুষ্ঠান এক ভারত ছাড়া অন্য কোথাও হয় না। সে রামায়নে মায়ামৃগের দারুণ বর্ণণা আছে, সোনার হরিণ এর সেই উপাখ্যান অনেক বিস্তৃত। রামায়ণের প্রভাব প্রথমে চীনে বৌদ্ধ ত্রিপিটকের সঙ্গে যায়, তারপর সেই কাহিনী চলে যায় চীন থেকে জাপান এ। তারিয়ানাও ইয়াসোউরি প্রথম রামায়ণ কাহিনীটা লেখেন যা ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত, পরের টা লেখেন মিনামোতোনো তামোনারি, সেটা অপেক্ষাকৃত বড় এবং রামায়ণের প্রায় সব আখ্যানই ওখানে আছে। কিন্তু এগুলো বৌদ্ধ জাতক কাহিনীর অংশ হিসেবেই থেকে গেছে। ১৫শ ১৬শ শতাব্দীতে রামায়ণের গল্প পৌঁছায় মালয়েসিয়া তে। সেখানে রামায়ণ লেখা হয়, নাম ‘হিয়াকৎ সেরি রাম।‘ পরে রামকথার পাথানিপাঠ আর শ্রীরাম বলে আরও দুটো রামায়ণ লেখা হয়। এই রামায়ণ গুলোতে হনুমানের বিরাট ভূমিকা। হনুমান ছাড়া মালয়েশিয়ার রামায়ণ এক ছটাকও এগোয় না। ব্যাঙ্ককের প্রথম রাজা র নাম ছিল রাম, তিনি তাঁর সভাকবিদের দিয়ে এক রামায়ণ রচনা করেন। ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে লেখা এই রামায়ণের নাম ‘রামকিয়েন’। এই রামায়ণে আবার প্রচুর এমন গল্প আছে যা রামায়ণে ছিলনা। এবং বাইরে দেশে রাময়ণে যে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব দেখা যায়, সেই প্রভাব রামিকিয়েন এ নেই। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে রচনা হয়েছে ফিলিপাইন্স এর রামায়ণ, নাম ‘মহারাদিয়া লাওয়ানা’, মহারাজা রাবণ। নামেই বোঝা যাচ্ছে এখানে গল্প শুরু আর শেষ রাবণ কে নিয়েই। এও এক নতুন আখ্যান। মধ্যে রামের বিয়ে বনবাস আর লড়াই সবই আছে। লাওসে বৌদ্ধ প্রভাবে চার চারটে রামায়ণ রচনা হয়েছে, ফ্রলক ফলাম, খায়া, পাম্মচক আর লঙ্কানই। এখানেও রাম বৌদ্ধ জাতক হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। টার্কি র খোটানে এক রামায়ণ পাওয়া যায়, খোটানি রামকথা, নবম শতাব্দীতে রচিত এই রামকথাও বৌদ্ধ জাতকের প্রভাবেই লেখা। এ তো গ্যালো বিদেশের কথা, দেশের মধ্যে রাময়ণ কি কম পড়িয়াছে? না ভারতীয় সব ভাষাতেই প্রাচীন রামায়ন কাহিনী পাওয়া যায়, এক একটা ভাষায় একাধিক রামায়ণ। তার গল্প আলাদা, আখ্যান আলাদা, সময় আলাদা, স্থান আলাদা। ধরুন তেলেগু রামায়ণ, বারোশ শতাব্দিতে বুদ্ধ রেড্ডি র রঙ্গনাথ রামায়ণ, ছাড়াও তেলেগুতে ভাস্কর রামায়ণ, ইয়ানা রামায়ণ, মোল্ল রামায়ণ,অচ্চতেন্নু রামায়ণ, কট্টবরদারাজু রামায়ণ ইত্যাদি এক ডজন রামায়ণ আছে। তেলেগু রামায়ণে প্রায় কোনোটাতেই উত্তর কান্ড নেই। সেখানে লব কুশের গল্পও নেই। ১২শ শতাব্দীতেই নাগচন্দ্র পম্পনারায়ণ বা রামচন্দ্র চরিত পুরাণ লেখেন কন্নড় ভাষায়। এখানে রাম ধনুর্ধারী বীর ক্ষত্রিয় নয়, সে অহিংসার পুজারি। কন্নড় ভাষায় ১৩শ শতাব্দীতে কুমুদেন্দু নারায়ণ রচনা করা হয়। কুমুদেন্দু নামে এক জৈন কবি এই রামায়ণ লেখেন, বলাই বাহুল্য এখানেও রাম অহিংসা ত্যাগ তিতিক্ষার প্রতীক, বীরচুড়ামণি হিসেবে নয়। এছাড়াও কন্নড় ভাষাতেই আরও একডজন রামায়ণ রচনা হয়েছে। এডুওচ্ছোন ষোড়শ শতাব্দীতে বিখ্যাত মালয়ালম আধ্যাত্ম রামায়ণ রচনা করেন। কেরালার জনজীবন তাঁদের সংস্কৃতি এই রামায়ণের ছত্রে ছত্রে। অহমিয়া রামায়ণে মোদ্দা চারটে ভাগ, পদরামায়ণ, গীতিরামায়ণ, কথা রামায়ণ কীর্তনীয়া রামায়ণ। কোথাও রাম বৈষ্ণব, কোথাও রাম ক্ষত্রিয়, কোথাও রাম সীতার কাহিনী রোমান্টিকতায় ভরা। হিন্দি সাহিত্যে তুলসিদাসি রামায়ণ ছাড়া ৩৫/৩৬ টা প্রাচীন রামায়ণের খবর পাওয়া যায়। আকবরের সময় বেনারসের অসসি ঘাটে বসে তুলসীদাস যে রামায়ণ রচনা করেছিলেন, তাই এখনও পর্যন্ত আসাম বাংলা বাদ দিলে উত্তর ভারতের মূল রামায়ণ, যা বিজেপি আর এস এস এর ভারি পছন্দের।

মৈথিলি ভাষা, ওড়িয়া ভাষা, মারাঠি ভাষা, গুজরাটি ভাষা, বহু আদিবাসী ভাষাতেও রামায়ণ রচনা হয়েছে, একটা নয়, বহু।

এবং বাংলায় কৃত্তিবাসি রামায়ণ। ১৮৩৩ এ নেপালে নেপালি ভাষায় রচনা হয় রামাশ্বমেধ, নেপালি রামায়ণের। পাঞ্জাবি, কাশ্মিরী ইত্যাদি অনেক ভাষায় রচনা হয়েছে রামায়ণের। গবেষকদের অনুমান সারা পৃথিবীতে সাড়ে তিনশর বেশি প্রাচীন রামায়ণ আছে। সেই সব রামায়ণের নির্যাস একটাই অসত্যের ওপর সত্যের বিজয়, অন্যায়ের ওপর ন্যায়ের বিজয়। কিন্তু তার স্থান আলাদা, নানারকম, কল্পনার রথে ছিল ১০৮ টা ঘোড়া, সে তার মত ছুটেছে, কোথাও রাম শাক্ত, কোথাও রাম বৈষ্ণব, কোথাও রাম ক্ষত্রীয় বীর চূড়ামণি কোথাও অহিংসার পুজারী। কথাও সীতা জনকের আসল কন্যা, কোথাও জনকের পালিতা কন্যা, কোথাও রাবণদুহিতা। কোথাও রাম স্বাত্বিক, ফল মূল কন্দ আহরণে ব্যস্ত, কোথাও রাম লক্ষণ সীতা এক সঙ্গে সুপক্ক মাংস খাচ্ছেন এবং সোমরস পান করছেন, সীতা নিজমুখে সেই সোমরসের গুণ বর্ণনা করছেন। কোথাও হনুমান কেবলই রামভক্ত, কোথাও রামের দিকনির্দেশকারী।

২২ জানুয়ারি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার আগে আমরা কেবল এই টা জানতে চাই যে আপনারা কোন রামের কথা বলছেন? সাড়ে তিনশ রাম সীতা হাজির, আপনাদের সামনে। কোন রাম? যোগী রাজ্য? যেখানে রেফ্রিজেটারে গোমাংস রাখা আছে বলে মানুষকে একলাখ আহমেদ কে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়, সেই যোগী জী জানেন? মোদীজী জানেন? এমন রামকথা আছে যেখানে বলা হচ্ছে রাজা জনকের চার কন্যা সীতা, ঊর্মিলা, মান্ডভি আর শ্রুতকীর্তি র সঙ্গে রাম লক্ষণ ভরত শত্রুঘ্নর বিয়ে দেন। বিয়ে তো হয়ে গ্যালো। পরদিন সকালে এবার তারা বশিষ্ঠমুনির সঙ্গে রওনা দেবেন অযোধ্যা, সেখানে রাজা দশরথ অপেক্ষা করছেন। এদিকে সেই সকালেই রাজা জনকের দূত খবর দিলেন, মহারাজ তিনি আসছেন? কে? ঋষি পরশুরাম। ওমনি রাজা জনক আদেশ দিলেন পঞ্চ শারদীয় সেবার, সেটা কী? ১৭ টা ৫ বছরের কম বয়সী গরুর মাংস রান্না করে মুনি ঋষিদের খাওয়ানো। পরশুরাম ও তার শিষ্যদের এলে তাঁদের সেই খাবার খাওয়ানো হলো। এও রামায়ণেই আছে। গুজরাটে, মোদীজীর দেশে মদ্যপান নিষেধ, এদিকে এক রামায়ণেই সীতা আক্ষেপ করছেন যে ১৪ বছরের বনবাসে তাঁর সুপক্ক মাংস আর সোমরস জুটবে কিনা সন্দেহ আছে। এটাই ভারত, এখানে রাম থাকে হৃদয়ে যার যার নিজের মতন, তাকে এক মন্দিরে বেঁধে ফেলার সাধ্য কার। হরপ্পা মহেঞ্জোদাড়োর আগেও নাকি সভ্যতা ছিল, সেখানেও নিশ্চই বহু স্থাপত্য ছিল, আজ যার চিহ্নমাত্র নেই। অথচ থেকে যাবেন রাম নিশ্চই, থেকে যাবেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের লড়াইএর প্রতীক হয়ে, আসুরিক বৃত্তির বিরুদ্ধে মানবিক আচরণের প্রতীক হয়ে। আমাদের রাম আমাদের হৃদয়ে সেই বৈষ্ণব, বিষ্ণুর সেই সপ্তম অবতার যার কথা জাতির পিতা বলে গেছেন সেই কবে, সেই ইতিহাস এত সহজে নরেন্দ্র মোদী ভুলিয়ে দিতে পারবেন না, পারাটা সম্ভব নয়।

বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিও জি

পির পরায়ে জানে রে

পর দুখে উপকার করে তোয়

মানভিমান না আনে রে

বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিও জি

পির পরায়ে জানে রে

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫
১৬১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১ ২২
২৩ ২৪ ২৫ ২৬ ২৭ ২৮ ২৯
৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

মুখ্যমন্ত্রীর চটি ছিঁড়ে যাওয়াকে কটাক্ষ দিলীপের
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
উধাও বিজেপির পতাকা, ঝাড়গ্রামে রাজনৈতিক তরজা
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
ভরাডুবির মরসুম নিয়ে কী সাফাই দিলেন হার্দিক
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
বজরংবলীর আশীর্বাদ পাবেন ৫ রাশির জাতক
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Stadium Bulletin | কোন ৫ কারণে প্লে-অফের দোরগোড়ায় KKR?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে সতর্কবার্তা নির্বাচন কমিশনের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
কখন শচীনের দ্বারস্থ হন কোহলি?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
চোটে জর্জরিত ম্যান ইউয়ের আজ কঠিন লড়াই
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মমতার দিদিগিরি বরদাস্ত করব না, কলকাতায় ফিরেই হুঙ্কার রাজ্যপালের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি কলকাতায়
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সুদীপের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ বিজেপির
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মঙ্গলবার ৪ কেন্দ্রে ভোট, সব বুথে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সন্দেশখালি ভাইরাল ভিডিওতে কন্ঠস্বর গঙ্গাধর-জবারানির, দাবি শান্তি দলুইয়ের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
জিতলে গম্ভীরের কৃতিত্ব হারলে দায় শ্রেয়সের? প্রশ্ন কিংবদন্তির  
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
রক্ষাকবচ সত্ত্বেও গ্রেফতার বিজেপি নেতা?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team