কলকাতা: ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গেলেও এখনও বাংলায় বাকি আসনগুলির প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি বিজেপি। তা নিয়ে শাসকদল তৃণমূল বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। তার জবাবও দিয়েছে বিজেপি। এদিকে সূত্রের খবর, অনেক আসনেই বিজেপির প্রার্থী নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি। বেশ কিছু কেন্দ্র এবং প্রার্থীর নাম নিয়ে রাজ্য বিজেপির অন্দরে টানাপড়েন চলছে। তার জন্যই দ্বিতীয় দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে বিজেপির।
দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর ভাই এবং বর্তমান তৃণমূল সাংসদ (সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন) দিব্যেন্দুকে মেদিনীপুর কেন্দ্রে দাঁড় করাতে চান। তার জন্য তিনি প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুর থেকে দমদমে নিয়ে আসার পক্ষে। দিলীপ আবার মেদিনীপুর ছাড়তে রাজি নন। মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপের দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কেন্দ্রে কাজ করে চলেছেন। তাঁর পক্ষে মেদিনীপুর ছাড়া সম্ভব নয়। নানা কারণে দিলীপের উপর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সুনজরে নেই দিলীপ। তবে তাঁর মাথার উপর আসএসএসের আশীর্বাদের হাত রয়েছে বলে দল তাঁকে খুব একটা ঘাঁটাতে পারছে না। তবু শুভেন্দু দিলীপকে মেদিনীপুর থেকে সরাতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
আরও পড়ুন: গার্ডেনরিচের বহুতল ধংসস্তূপে আটকে এখনও ৫
ভাইকে মেদিনীপুরে দাঁড় করানোর জন্য এই ততপরতাকে ভালো চোখে দেখছেন না রাজ্য বিজেপির শুভেন্দু বিরোধী নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেখানে বিরোধীদের বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্র নিয়ে সরব, সেখানে শুভেন্দু তাঁর পরিবারের প্রতি এত দায়বদ্ধ কেন। তাঁর এক ভাই সৌমেন্দুকে ইতিমধ্যে কাঁথি কেন্দ্রে দল টিকিট দিয়েছেন। তিনি নিজে বিধানসভার বিরোধী নেতা। তারপরেও কেন দিব্যেন্দুকে মেদিনীপুরে দাঁড় করাতে তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন, প্রশ্ন তুলছে দলের একাধিক নেতা।
তৃণমূলে থাকার সময়ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অধিকারী পরিবারকে অনেক কিছু দিয়েছিলেন। শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী দীর্ঘদিন ধরে সাংসদ। দিব্যেন্দুও সাংসদ ছিলেন। দীঘা উন্নয়ন পর্ষদ-সহ একাধিক সংস্থার কর্তা ছিলেন অধিকারী পরিবারের কেউ না কেউ। শুভেন্দু দল ছাড়ার পর মমতা সমস্ত সভা, সমাবেশে সেই প্রসঙ্গ তুলে নাম না করে শুভেন্দুকে আক্রমণ করেন। তিনি কোথাও তাঁর নাম করেন না। মমতা তাঁকে গদ্দার বলে ডাকেন।
দ্বিতীয় দফার প্রার্থী নিয়ে কথা বলতে রবিবার রাতেই দিল্লি উড়ে গিয়েছেন শুভেন্দু। সোমবার সকালের বিমানে দিল্লি গিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক রয়েছে সোমবার। আজকালের মধ্যে বাংলার বাকি তালিকা ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।
এখনও বিজেপির পূর্ণাঙ্গ তালিকা ঘোষণা না হওয়ায় কটাক্ষ করছে তৃণমূল। দলের নেতা এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, আমরা ১০ মার্চ তালিকা ঘোষণা করেছি। পুরোদমে প্রচারেও নেমে পড়েছে তৃণমূল। ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গেল। অথচ এখনও বিজেপি ৪২টি কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারল না। তাঁর প্রশ্ন, প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে মারামারি হচ্ছে বলেই কি তালিকা ঘোষণা করা যাচ্ছে না?
দিল্লি যাওয়ার পথে সোমবার বিমানবন্দরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেন, আমাদের প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক দলকে মাথা না ঘামালেও চলবে। আমাদের দল সর্বভারতীয়। রাজ্য থেকে নাম যায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। সেখানে তালিকা নিয়ে আলোচনা হবে। কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটি তালিকা পাঠাবে সংসদীয় কমিটির কাছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সুকান্ত বলেন, তৃণমূলে তো একজনই সব সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর সঙ্গে একজন হাফ নেতা রয়েছেন। এটা পারিবারিক পার্টি। ঘরে বসে পরিবারের সকলে মিলে ঠিক করে, কারা প্রার্থী হবেন। আসলে মৌমাছিও তো পাখি হতে চায়। দলের রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা সময়মতো প্রার্থী ঘোষণা করব। তৃণমূল তো ডুবতে বসেছে। ওরা নিজেদের নিয়ে ভাবুক। আমাদের নিয়ে না ভাবলেও চলবে।