কলকাতা: বিধানসভার চলতি অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে শুভেন্দু কাগজ ছোড়েন বলে অভিযোগ। স্পিকার তাঁকে সতর্কও করেন। তার পরেও বিরোধী দলনেতা দাবি করেন, তিনি ঠিক করেছেন। এর পরই স্পিকার তাঁকে চলতি অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করা হল বলে ঘোষণা করেন।
বিজেপি স্পিকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, আগামিকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে আসছেন। আজ বিধানসভায় সংবিধানের উপর সরকার প্রস্তাব এনে আলোচনা করল। আবার সেই সরকারেরই স্পিকার বিরোধী নেতাকে সাসপেন্ড করলেন। তিনি যথার্থই সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করলেন বলেও কটাক্ষ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
আরও পড়ুন: আইআইটি মাদ্রাজের অধ্যাপক সাসপেন্ড বাংলার গবেষক ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনায়
এর আগেও শুভেন্দুকে বিধানসভার অধিবেশন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল। কিছুদিন পর অবশ্য সেই সাসপেনশন তুলে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিধানসভায় সংবিধান দিবস পালিত হয়। এ ব্যাপারে সরকার পক্ষ একটি প্রস্তাব আনে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্পিকার বলেন, সংবিধানপ্রণেতা বি আর আম্বেদকর দেশ যাতে ভবিষ্যতে একনায়কতন্ত্রের পথে না যায়, তার দিকে দৃষ্টি রেখে সংবিধান রচনা করেছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে যা চলছে দেশে, তা আম্বেদকরের ভাবনার বিরোধী। যারা কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে, তাদেরই দেশের শত্রু বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেশে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে।
বিজেপি সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। দলীয় বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ সংবিধান নিয়েই কথা বলছিলেন। কিন্তু স্পিকার তাঁকে বলতে বাধা দেন। তা নিয়ে সভায় হইচই শুরু হয়। শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিজেপি সদস্যরা ওয়াকআউট করেন। তাঁরা লবিতে বিক্ষোভ দেখান।
এর আগে শাসকদলের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা করার দাবি জানান বিজেপি সদস্যরা। তাঁরা মুলতুবি প্রস্তাবের উপর আলোচনা চান। স্পিকার সেই দাবি খারিজ করে দিয়ে শুধু প্রস্তাবটি পড়ার অনুমতি দেন। তার পরই বিরোধী সদস্যরা মন্ত্রীদের ছবি এবং চোর লেখা প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান। মিনিট দশেক পর তাঁরা ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যান। বিধানসভার বাইরে তাঁদের বিক্ষোভ চলাকালীন শাসকদলের বিধায়ক, মন্ত্রীরা বাইরে আম্বেদকরের মূর্তিতে মালা দিতে যাচ্ছিলেন। তাঁদের দেখেই বিজেপি বিধায়করা চোর চোর বলে আওয়াজ দেন। তৃণমূল বিধায়করা পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। তবে প্রতিবাদ করেন শুধু মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি বলেন, আমার কাছে বিজেপির নেতা, বিধায়কদের সম্পর্কে যা তথ্য আছে, তা সামনে আনলে কেউ দাঁড়াতে পারবেন না। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ কার ফ্ল্যাটে থাকেন, তিনি অত দামী ঘড়ি পরেন কোথা থেকে, এসবের জবাব দিন। দিলীপ অবশ্য বলেন, বাবুলের দল আমার বিরুদ্ধে যা খুশি বলুক, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। ওরা এফআইআর করুক।
লবিতে শুভেন্দু বলেন, গোটা রাজ্যের মানুষ তৃণমূলকে চোর বলছে। এখন বিধানসভাতেও ওদের চোর স্লোগান শুনতে হল। আরও শুনতে হবে।
পরে স্পিকার বলেন, এই ভাবে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া যায় না। আমি চাইলে বিজেপি সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কিন্তু নিইনি।