মনা বীরবংশী, শান্তিনিকেতন: স্কুলের চাবি চুরির অপবাদ, এবার খোদ শান্তিনিকেতনে তিনটি আদিবাসী পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট, পাশাপাশি গ্রামের কোন মানুষ যদি এই তিনটি পরিবারের সাথে কথা বলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। শান্তিনিকেতন থানা ও শান্তিনিকেতন ওমেন পুলিশ থানা কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বীরভূম জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ এই আদিবাসী তিনটে পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিনিকেতন আদিবাসী অধ্যুষিত বালিপাড়াতে।
আরও পড়ুন- রিকশা চালিয়ে কলকাতা থেকে সিয়াচেনে হ্যাট্রিকের পথে সত্যেনবাবু
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধের শান্তিনিকেতন বালিপাড়া আদিবাসী পাড়াতে স্কুলের চাবি চুরির অপবাদ দিয়ে তিনটি পরিবারকে পুরোপুরিভাবে সামাজিকভাবে বয়কট করল গ্রামের মোড়ল ও মাতব্বররা।
আরও পড়ুন- বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত দখল নিতে চলেছে তৃণমূল
এখানেই শেষ নয়, এই তিনটি আদিবাসী পরিবারের সাথে যদি গ্রামের কোন মানুষ কথা বলেন তাদেরও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। গ্রামের মোড়লের সালিশি সভায় এমনই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই তিনটি আদিবাসী পরিবার, গ্রামে কোন বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান হোক বা যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করতে নিষেধ করা হয়েছে। এই পুরো ঘটনায় শান্তিনিকেতন থানা ও শান্তিনিকেতন ওমেন পুলিশ স্টেশন অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় অবশেষে এই তিনটি আদিবাসী পরিবার বীরভূম জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন।
আরও পড়ুন- জনসচেতনতায় ১০ হাজার পুরুষাঙ্গ কিনছে আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্যমন্ত্রক
নির্যাতিত আদিবাসী পরিবারের অভিযোগ, বছর দুয়েক আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে গ্রামেরই এক স্কুলের চাবি চুরির অপবাদ দেয় গ্রামের মোড়ল সহ মাতব্বররা। তারপরই আদিবাসীদের প্রথা মেনে গ্রামে ডাকা হয় সালিশি সভা। সেই সবাই এই তিনটি আদিবাসী পরিবার ছাড়াও উপস্থিত থাকেন গ্রামের মোড়ল ও মাতব্বররা।
পাশাপাশি গোটা গ্রামের মানুষ এই সালিশি সভায় অংশগ্রহণ করে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের কথা শুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন গ্রামের মোড়ল। মোড়ল ও মাতব্বরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই আদিবাসী পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামের কোন আচার অনুষ্ঠানে যোগদান করতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া যদি এই তিনটি আদিবাসী পরিবারের সাথে কেউ যোগাযোগ রাখে তাদের সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
আরও পড়ুন- বোনের ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে পাখির খাবার বিক্রি করছে ‘নাবালক দাদা’
বছর দুয়েক ধরে এই সামাজিক বয়কটের পরিস্থিতিতে রীতিমতো দম বন্ধ হয়ে আসছিল শান্তিনিকেতনের এই তিনটি আদিবাসী পরিবারের। ২০১৯ সালে শান্তিনিকেতন ও শান্তিনিকেতন ওম্যান পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও বিষয়টি পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এমনই অভিযোগ নির্যাতিত আদিবাসী পরিবারগুলির। অবশেষে গত মাসে বীরভূম জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়ে সামগ্রিক ঘটনা লিখিত আকারে অভিযোগ জানান।
গ্রামের মোড়ল সুনীল হাঁসদা সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বিশেষ কাজে তিনি একটু শান্তিনিকেতনের বাইরে রয়েছেন। তবে তিনি টেলিফোনে জানান, এই সিদ্ধান্ত তার একা নয়। গোটা গ্রামবাসী মিলিত হয়ে একক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গ্রামের মোড়ল শুধুমাত্র এই সিদ্ধান্তের উপর সীলমোহর দিয়েছে।”
আরও পড়ুন- আকালের অভিযোগ উড়িয়ে টিকাকরণে সাফল্যের দাবি মোদির
বহু যুগ আগে সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় ঝাড়খন্ড, বিহার অঞ্চল থেকে আদিবাসীরা দলে দলে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় শান্তিনিকেতনে। লোকমুখে শোনা যায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে এই সমস্ত আদিবাসী পাড়া তে আদিবাসী মানুষজনদের কে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই শান্তিনিকেতনের অন্যতম প্রাক্তন ছাত্র তথা নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের বাড়ি লাগোয়া বেশকিছু পাড়া গড়ে ওঠে। এই আদিবাসী পাড়া গুলিতে নামকরণ করা হয়।