কলকাতা: ত্রিপুরার ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপি-র সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধেও তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Tripura)। দিল্লিতে রওনা দেওয়ার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার প্রসঙ্গও টেনে আনেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে ভোটপ্রচারে যাওয়ার সময় নাড্ডার কনভয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছিল। বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি সেই ঘটনাকে বড় ইস্যু করার চেষ্টা করেছিল। কয়েক মাস আগের সেই ঘটনার উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কটাক্ষ, ‘নাড্ডার কনভয়ের ল্যাজে সামান্য একটা ঘটনা ঘটেছিল। তখন মানবাধিকার কমিশন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ৩৫৬ সহ কত রকমের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। এখন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কোথায় গেল?’ মমতার কথায়, বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় গণতন্ত্রের (Tripura Politics) কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। সায়নী ঘোষের (Saayoni Ghosh Arrest) মতো একজন শিল্পীকে মিথ্যে মামলা দিয়ে যে ভাবে সারারাত থানায় আটকে রাখা হয়েছে, তার নিন্দাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘ত্রিপুরার মানুষ এর জবাব দেবে।’
যুব তৃণমূল সভাপতি সায়নী ঘোষের গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে রবিবার থেকেই উত্তাল ত্রিপুরার রাজনীতি। শুধু গ্রেফতারি নয়, থানা চত্বরে পুলিশের উপস্থিতিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপর সশস্ত্র হামলা হয়। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কর্মসূচি পণ্ড করতেই পরিকল্পিত ভাবে রবিবারের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ‘খেলা হবে’ স্লোগান দেওয়ার জন্য সায়নী ঘোষকে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হল, অথচ, বিজেপির ‘গুন্ডা’দের বিরুদ্ধে পুলিশ কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কুণাল।
সায়নীর গ্রেফতারির খবর শুনে রবিবার রাতেই আগরতলা পৌঁছতে চেয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিমান অতরণের অনুমতি না-মেলায় শেষ পর্যন্ত তিনি যেতে পারেননি। আজ, সোমবার তিনি আগরতলায় পৌঁছোন। তবে, অভিষেকের মিছিলে ত্রিপুরা সরকার অনুমতি দেয়নি। কোভিডবিধির অজুহাতে রবিবার রাতেই ত্রিপুরার তৃণমূল নেতৃত্বকে মিছিলে অনুমতি না-দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছিল প্রশাসন। তবে, পথসভা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব তাতে রাজি হয়নি। বিপ্লব দেবের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল। শীর্ষ আদালত ত্রিপুরা সম্পর্কিত মামলাটি গ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার শুনানি হতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘অনুমতি দিলেও পথসভা করব না’, আগরতলা পৌঁছেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিজেপিকে তুলোধনা অভিষেকের
এদিকে, তৃণমূল সুপ্রিমোর নির্দেশে দলের ১৬ জন সাংসদ সোমবারই দিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছেন। ত্রিপুরার ঘটনার প্রেক্ষিতে এই বৈঠকে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সাংসদরা। মমতা দিল্লি পৌঁছনোর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও তাঁরা দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অমিত শাহ অনুমতি দেননি। ফলে, নর্থ ব্লকে অমিত শাহের মন্ত্রকের সামনে ধরনায় বসেন তৃণমূলের সাংসদরা। মমতা দিল্লি পৌঁছনোর পর কী সিদ্ধান্ত নেন, তার অপেক্ষায় সাংসদরা।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরার ঘটনা নিয়ে চুপ কেন? মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি তৃণমূলের