কলকাতা: বিজেপিকে বড় ধাক্কা দিয়ে বাবুল সুপ্রিয় যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। এই দলবদল তৃণমূলের কাছে বড় সাফল্য। কারণ বাবুল সুপ্রিয় মোদি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। সেই সঙ্গে ছিলেন আসানসোলের সাংসদ। দলত্যাগী বাবুলকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা শিল্পী কবির সুমন।
বাবুলের মতো সুমনও একজন গায়ক। বিজেপিতে থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে কবির সুমনকে কটাক্ষ করেছিলেন বাবুল। সেই পুরনো স্মৃতি উসকে বাবুলকে পালটা জবাব দিয়েছেন সুমন। নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে তিনি লিখেছেন, “বিজেপি সাংসদ ও মন্ত্রী শ্রীযুক্ত বাবুল সুপ্রিয় কিছুকাল আগে আমায় নিয়ে ফেসবুকে ঠাট্টা করেছিলেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে স্থুল ইঙ্গিতপূর্ণ কথা লিখে। লিখেছিলেন ‘আপনার মমতাময়ী’। আমি তাঁকে কোনও কটুক্তি করিনি।”
নিয়মিত তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদ্রূপ করা বাবুলের তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে তাঁর(বাবুল) ঘনিষ্ঠমহল কী ভাবছে তা নিয়েও কটুক্তি করেছেন কবির সুমন। তিনি লিখেছেন, “শুধু, ‘আপনার মমতাময়ী’ বলে গায়ে পড়ে বিদ্রুপ করা এই মুসলিমবিদ্বেষী, এনআরসি পন্থী, বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষী বাবুল সুপ্রিয় মহোদয় এখন “তাঁর মমতাময়ী” সম্পর্কে কী ভাবছেন তৃণমূলে তাঁর কাছের মানুষরা হয়তো জানতে চাইছেন।”
২০০৯ সালে তৃণমূলের টিকিটে যাদবপুরের সাংসদ হয়েছিলেন কবির সুমন। অল্প সময় পরেই তাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব শুরু হয়। পরের নির্বাচনে তাঁকে আর টিকিট দেয়নি দল। এখন তিনি আর তৃণমূলের সদস্য নেই, কেবল সমর্থক। তাই তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের বাবুলকে দলে স্বাগত জানানোর প্রসঙ্গে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন তিনি। তাঁর মতে, “তৃণমূল দল কাকে টেনে নেবেন সেটা একান্তই তাঁদের ব্যাপার।”
বাবুলের পাশাপাশি গানের জগতের আরও দুই শিল্পীকে নিশানা করেছেন কবির সুমন। তিনি লিখেছেন, “আমাকে যাঁরা স্রেফ গায়ে পড়ে অপমান করে গেছেন, যেমন শ্রী নচিকেতা চক্রবর্তী এবং শ্রী শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় – তাঁদের সঙ্গে আর-একটি নাম যুক্ত হলো। এই তিনজনের একজনকেও আমি অপমান বা আক্রমণ করিনি। তিনজনেই গায়ে পড়ে আমায় অপমান করেছেন।” সেই সঙ্গে মনে করিয়েছেন যে বাম বিরোধী আন্দোলনে তৃণমূলের সঙ্গে সামিল ছিলেন তিনি। সেই আন্দোলনে বাকিদের ভূমকি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কবির সুমন। তাঁর মতে, “২০০৫/৬ সাল থেকে দীর্ঘকাল সিপিআইএম বিরোধী গণ আন্দোলনে সামিল ছিলাম। এঁরা?”
সময় সকলের আসে এবং তাঁরও আসবে। এমনই মনে করেন কবির সুমন। যাবতীয় অপমানের জবাব দিয়েই তিনি শেষ নিঃশ্বাসত্যাগ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। ফেসবুকে কবির সুমন লিখেছেন, “আমার দিনও আসবে। কোনও দল বা নেতারা যেন না ভাবেন আমি দুর্বল এবং একা। আমি দুর্বলও নই একাও নই। আত্মমর্যাদার ওপরে কিছুই নয়, কেউ নয়। ফেরত দিয়ে তবে মরব। আমার বয়স হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এখনও দুর্বল নই। এবং আমি একা নই। যা পেয়েছি তা ফেরত দিয়ে তবে মরব।”
রবিবার বিকেলের দিকে ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বাবুল সুপ্রিয়। সেখানে কবির সুমনের পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কবীর সুমনের যা মনে হয়েছে তিনি সেটা লিখেছেন। ফেসবুক সামাজিক মাধ্যম, সেখানে কে কি বললেন তা আমি দেখবও না পড়বও না।”