কলকাতা: রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বাবুল সুপ্রিয়। দুইবারের সাংসদ এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত আচমকা জানা যায় গত শনিবার বিকেলের দিকে। তারপর থেকেই বাবুলকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয় রাজনীতির অন্দরে। শুরুতে সাংসদ পদ ছাড়ার কথা জানালেও পরে বাবুল জানিয়ে দেন আসানসোলের সাংসদ থাকলেও অন্য কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেবেন না।
আরও পড়ুন- মস্তিষ্কে জল, সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট, বেফাঁস মন্তব্য মুকুলের
দলবদল এখন রাজ্য রাজনীতির অন্যতম অঙ্গ। বাবুলের ঘোষণার পরে তাঁর দলবদলের জল্পনা জোরাল হয়েছিল। যদিও সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন আসানসোলের সাংসদ। বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেই ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি আছেন বলে জানিয়েছেন বাবুল। তবে সাংসদপদ ধরে রাখার জন্য আসরে নামতে হয়েছিল দিল্লির নেতৃত্বকে। খোদ সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা কথা বলেন বাবুলের সঙ্গে।
আরও পড়ুন- স্বামীর হাতে ধর্ষিত স্ত্রী চাইতে পারবেন বিবাহ বিচ্ছেদ, জানাল হাইকোর্ট
রাজনীতির ময়দানে উল্কার গতিতে উত্থান হয়েছিল বাবুল সুপ্রিয়-র। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী। তাঁর হয়ে প্রচারে এসেছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদী। জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, “লোকসভায় আমার বাবুলকে চাই।” সাংসদ হওয়ার পরে মন্ত্রীও হয়েছিলেন বাবুল। তারপরে ২০১৯ সালেও ফের একই কেন্দ্র থেকে জিতে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন তিনি। এরপরে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতার টালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে বাবুলকে প্রার্থী করে দল। যেখানে পরাস্ত হওয়ার পরেই মন্ত্রিসভায় সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায় তাঁর।
আরও পড়ুন- আগামী তিন দিন দক্ষিণবঙ্গে হালাকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস
সেই থেকেই তৈরি হল অসন্তোষ। যার জেরেই রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ঘোষণা করে ফেলেছেন বলিউডের গায়ক। বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাবুলের ছেড়ে যাওয়া কেন্দ্র ধরে রাখা নিয়ে সন্দিহান বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। যার কারণে ফের ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচনের পথে না হেঁটে পুরনো সাংসদকেই ধরে রাখতে সচেষ্ট হয়েছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে বাবুলকে কেন্দ্র করে বেজায় বিপাকে বঙ্গ বিজেপি। একে বিধানসভা নির্বাচনে পরাস্ত হওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর চাপ রয়েছে। তার মাঝ বাবুলের কীর্তির জেরে প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে দলীয় কোন্দল।
ঘোষণা করেও বাবুলের সাংসদ পদ না ছাড়ার প্রসঙ্গে বঙ্গ বিজেপির এক নেতা বলেছেন, “বাবুল সুপ্রিয় সাংসদ হিসেবে সব রকমের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে চান। সেই কারণেই ইস্তফা দিলেন না।” অন্য আরেক প্রবীণ নেতা বলেছেন, “রাজনীতিতে কোনও শর্টকাট নেই। এমন অনেক সময় আসবে যখন অনেক নেতা বা নেত্রী স্বচ্ছন্দ বোধ নাও করতে পারেন। কিন্তু লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাহলেও সমস্যাগুলোর ঠিক সমাধান হয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন- আলিপুরদুয়ারে বিকৃত যৌন লালসার শিকার পঁচানব্বই বছরের বৃদ্ধা
বিধানসভা নির্বাচনে হারলেও ঘুরে দাঁড়াতে অনেক পরিকল্পনা করেছে বঙ্গ বিজেপি। জেলায় জেলায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নিয়ে বড় বড় সভা করার কথাও ভাবা হচ্ছে। এরই মাঝে বিভিন্ন ঘটনা দলের অসন্তোষের বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে। বাবুল প্রসঙ্গে সামনে আসার আগে দেখা গিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগণ জেলার বনগাঁয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং-এর উপস্থিতিতে হওয়া দলীয় বৈঠকে গরহাজির ছিলেন বিজেপির স্থানীয় বিধায়কেরা। সেই তালিকায় বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের ভাই সুব্রত ঠাকুরের নামও ছিল।
অনেকেই মনে করছেন বাবুল সুপ্রিয়-র এই কঠিন সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব। বঙ্গ বিজেপিতে শুভেন্দুকে প্রাধান্য দেওয়া অনেকেই ভালো চোখে দেখছেন না। অনেক পুরনো নেতানেত্রীদের সাইড করে দেওয়া হয়েছে। নবাগত শুভেন্দুকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতার আসন দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। মন্ত্রিত্ব হারিয়েও অবশ্য মুখ খোলেননি বিজেপির পুরনো নেত্রী দেবশ্রী রায়চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে নীরব রয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- বকেয়া বেতন না দিলে নাম কাটা যেতে পারে পড়ুয়াদের, আদালতের নির্দেশে চাপে অভিভাবকরা
এই অবস্থায় বাবুল সুপ্রিয়-র সমালোচনা করতে শোনা গিয়েছে দিলীপ ঘোষের মুখে। বাবুল বিতর্কের শুরুতেই তিনি বলেছিলেন, “রাজনীতি কোনও নাটক বা থিয়েটারের মঞ্চ নয়। বাবুল সুপ্রিয় ইস্তফা দিতে চাইলে পদত্যাগপত্র পাঠাক। রাজ্য বিজেপির কাছে তেমন কোনও চিঠি আসেনি। তাই বাবুল বিজেপির সঙ্গেই আছেন বলে আমি মনে করি।” বাবুল-দিলীপ দ্বৈরথ অবশ্য বঙ্গ বিজেপিতে নতুন কিছু নয়। আগামী দিনে বাংলায় বিজেপির রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।