নয়াদিল্লি: এত দিন প্রশ্ন ছিল, ‘২ কোটি চাকরি কোথায় গেল?’ অভিযোগ উঠেছিস, নোট বাতিলের পরে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। সেই তথ্য মোদি সরকার ধামাচাপা দিয়ে রাখছে। জোড়া তিরের মুখে নরেন্দ্র মোদি সরকার স্বীকার করে নিল, গত আট বছরে চাকরির জন্য ২২ কোটির বেশি দরখাস্ত জমা পড়েছিল। কিন্তু, তার থেকে মাত্র ৭.২২ লাখকেই নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে।
গত বুধবার কর্মিবর্গ দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ লোকসভায় এক জন সদস্যের প্রশ্নের উত্তরে জানান, ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সরকারের নানা কর্মখালি বিজ্ঞাপনের জবাবে ২২.০৫ কোটি যুবক-যুবতী বিভিন্ন সরকারি পদের জন্য আবেদন করেছিলেন। নিয়োগ সংস্থাগুলি এঁদের মধ্য থেকে বাছাই করে কর্মসংস্থানের জন্য সুপারিশ করে পাঠিয়েছে মাত্র ৭ লক্ষ ২২ হাজার ৩১১ জনের নাম। তাদের মধ্যে কত জনের নিয়োগ হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে জবাব দেননি প্রতিমন্ত্রী। শতকরা হিসেবে, মোট আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ০.৩৩ শতাংশের চাকরি হয়েছে। ২০১৪-তে বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ফি বছর ২ কোটি চাকরি দেবে তারা।
মোদি সরকার ক্ষমতায় এসে শ্রমিক ব্যুরোর সমীক্ষা প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে। এর পর কেন্দ্রীয় সংস্থা এনএসএসও-র সমীক্ষা রিপোর্টও প্রকাশ হয়নি। সেই রিপোর্ট ফাঁস হতে দেখা গিয়েছিল, নোট বাতিলের ঠিক পরের বছরে, অর্থাৎ ২০১৭-১৮-তে বেকারত্বের হার ৬.১ শতাংশে পৌঁছেছিল। যা গত ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ। বুধবার, লোকসভায় জিতেন্দ্র সিংহের দেওয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ৮ বছরের মধ্যে সব চেয়ে বেশি নিয়োগের সুপারিশ হয়েছে ২০১৯-২০ সালে। মানে লোকসভার নির্বাচনের বছরে। সেই বছরে নিয়োগকারী সংস্থাগুলির সুপারিশ এসেছিল ১,৪৭,০৯৬ জনের নামের। ঠিক তার আগের বছর ২০১৮-২৯-এ এই সংখ্যাটি ছিল মাত্র ৩৮,১০০। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সংখ্যাটি খানিক বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮,৫৫৫-এ। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছর ২০২১-২২-এ নিয়োগের জন্য সুপারিশের সংখ্যা ফের কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮,৮৫০-এ।
এর আগে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, যারা পকোড়া বেচছেন, তাঁরাও রোজগার করছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ দিনের হিসেব থেকেও স্পষ্ট, কম আয়ের রোজগারের কথাই বলছেন। ভাল বেতনের ভাল চাকরির কথা বলতে পারছেন না। মোদির নিযুক্ত নীতি আয়োগের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানাগড়িয়া বলেছিলেন, সমস্যাটা কাজের অভাবের নয়, ভাল মানের কাজের অভাবের। নরেন্দ্র মোদি সেই ফাঁদেই আটকে গিয়েছেন।