কোভিডকালে খাওয়া দাওয়া নিয়ে অল্প বিস্তর আমরা সবাই সচেতন। অনেকে আবার তাঁদের পছন্দের তালিকা থেকে জাঙ্ক ফুডকে একেবারে বাদ দিয়ে খাদ্যাভাসে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। চিনির বদলে গুড়, বাইরের খাবারের বদলে বাড়ির তৈরি খাবার, প্রসেস্ডে ফুডের বদলে সুষম আহারের দিকে ঝুকেছেন অনেকেই। তবে এত কিছুর মধ্যে ঘি(ghee) নিয়ে যে বিতর্ক ছিল তা এখনও রয়ে গেছে। ফ্যাটযুক্ত হওয়ায় নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় ঘি রাখতে এখনও দুবার ভাবেন অধিকাংশ।
রোজ ঘি (ghee) খাওয়াটা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে যেমন সংশয় রয়েছ তেমনি আয়ুর্বেদের মতো প্রাচীন চিকিত্সা পদ্ধতিতে ঘি-এর ব্যবহার একেবারে অপরিহার্য। তাই পুষ্টির নিরিখে ঘি ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ জেনে নেওয়া ভাল। এমনিতেই ঘি (ghee) নিয়ে আমাদের সকলের মনেই বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে সেগুলি ঠিক কতটা যুক্তি সম্পন্ন জেনে নিন।
ঘি বা ঘি যুক্ত খাবার সহজে হজম হয় না
প্রাকৃতিক বিউটাইরিক অ্যাসিড (butyric acid) রয়েছে ঘি-এ। এই উপাদানের ফলে ঘি সহজেই হজম করা যায়। পাশাপাশি ইনফ্লেমেশনের(inflammation)সমস্যা থাকলে ঘি(ghee) সেটা অনেকটাই কমিয়ে আনে। কোষ্ঠকাঠিন্যের (constipation) সমস্যা ঘি ভীষণ কার্যকরী। আয়ুর্বেদের (Ayurveda) চিকিত্সা শাস্ত্র অনুযায়ী গরুর দুধে তৈরি ঘি তে এমন কয়েকটি উপাদান থাকে যা পাচনক্রিয়াকে আরও মসৃণ করে তোলে। এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
ঘি খেলে মেদে বাড়ে
যাঁরা ওজন কমাতে উত্সাহী তাঁরা প্রথমেই নিত্যদিনের খাদ্যতালিকা থেকে ঘি বাদ দেন। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। বরং ঘি-তে কনজুগেটেড লিনোলিয়েক অ্যাসিড (conjugated linoleic acid) রয়েছে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ঘি-তে মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (mono-saturated fatty acid)রয়েছে এগুলি শরীরে প্রয়োজনীয় ডায়টারি ফাইবারের (dietary fibre) জোগান দেয়। আর এই ফাইবার শরীরের ফ্যাট সেলগুলিকে নষ্ট করতে সাহায্য করে। এর ফলে সহজেই ওজন কমে।
হার্টের রোগীদের জন্য ঘি ভাল নয়
এক কথায় ঘি হল শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির পাওয়ার হাউস (powerhouse)। এতে রয়েছে ভিটামিন এ,ই,ডি (Vitamin A, E, D)সহ প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস (antioxidants)। এই পুষ্টিকর উপাদানগুলি ধমনিতে কোলেস্টোরেল(cholesterol) ও ক্যালসিয়ামের(calcium) পরত পড়তে দেয় না। এর ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। দেশি ঘি খেলে রক্তে প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কোলেস্টেরোল লেভেল (cholesterol level) কমিয়ে আনা যায়। এই নিরিখে অলিভ অয়েল(olive oil), বাদাম তেল(groundnut oil) ও মাখনের(butter) তুলনায় ঘি(ghee) বেশি উপকারি।
রান্নায় দেশি ঘি ব্যবহার করলে বিপদ হবে
ঘি গরম হতে বেশ সময় নেয়। অন্যান্য ভোজ্য তেলের তুলনায় ঘি-এক স্মোক পয়েন্ট (smoke point)প্রায় অনকটাই বেশি। আর এই কারণেই ঘি-য়ের গুড ফ্যাট(good fat) সহজে নষ্ট হয় না । তাই রান্নায় ঘি (ghee) অনায়াসেই ব্যবহার করা যায়।
শরীর সুস্থ রাখতে ঘি না খাওয়াই ভাল
কোনও খাবারই মাত্রাতিরিক্ত খেলে শরীরের পক্ষে অপকারী হয়ে যেতে পারে। ঘি খাওয়াও তাই এই নিয়মের বাইরে নয়। তবে নিউট্রিশনিষ্টদের(nutritionist) মতে, নিয়ম মেনে ঘি খেলে শরীরের অনেক সমস্যার সহজ সমাধান হয়। যেমন ক্যানসারের প্রতিরোধ গড়ে তোলে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর পাশাপাশি প্রতিদিন দু চা চামচ ঘি খেলে মহিলাদের হরমোন্যাল ব্যালেন্স (hormonal balance) ঠিক রাখে। এবং পুরুষদের মধ্য বীর্য (sperm) উত্পাদনের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
শরীর সুস্থ রাখতে ঘি-এর এত উপকারিতার সত্যি জবাব নেই। তবে পুষ্টির পাশাপাশি রান্নায় এক অন্য মাত্রা যোগ করে ঘি। তা পদ নিরামিষ হোক বা আমিষ! সত্যি করে বলুন তো ঘি-এর গন্ধে আপনর জিভে কি জল আসে না?