কোভিড অতিমারি শুধু শারীরিক ভাবেই নয়, মানসিক ভাবেও অনেকটাই বিপন্ন করেছে। মৃত্যু, সংক্রমণের ভয়, লকডাউনের জেরে কাজে অনিশ্চয়তা, মূল্যবৃদ্ধি, পরিবার-পরিজনের বিয়োগ আরও কত কী। এই অবস্থায় শারীরিক অসুস্থতার মোকাবিলায় সফল হলেও অধিকাংশকে গ্রাস করেছে নিরাপত্তাহীনতা। এর সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনের ওঠাপড়া, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, এসব জীবনকে আরও অস্থির করে তুলেছে৷ তবে যে কোনও মানসিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয় নিজেদের। এরপর পরিজনেরা বা চিকিৎসকের পরামর্শ তো আছেই। তাই জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়লে ভেঙে পড়বেন না। মনে রাখতে হবে আমরা প্রত্যেকই অনন্য, তাই পরিস্থিতির এবং তার মোকাবিলা করতে হবে সেই অনুযায়ী। কারও সঙ্গে তুলনা করতে যাবেন না৷ আরও কষ্ট বাড়বে। নিরাপত্তাহীনতার হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে এই বিষয়গুলো মেনে চলুন, উপকার পাবেন।
আত্মভিমান নিয়ে ভাবনাচিন্তা করুন
ভেবে দেখুন আপনার আত্মভিমান আপনাকে ভুল পথে চালিত করছে না তো? প্রত্যেক ছোটো বড় প্রাপ্তি বা সাফল্যের স্বীকৃতির জন্য আপনার আত্মভিমান কি অন্যের বিচারবিবেচনার প্রতি মুখিয়ে থাকে? কেউ ভাল বললেই ভাল না হলে নয়! এই কোভিডকালে আতঙ্কিত মানুষ ফেসবুক হাতড়ে বেড়িয়েছে চেনা মানুষের খোঁজে। আপনিও খুঁজে পেয়েছেন ছোটবেলার বন্ধুবান্ধবের। প্রথম কদিন ভালই কাটছিল। কিন্তু সাক্ষাতের পরেই মেজাজ বিগড়েছে। কারণ মনে মনে সারক্ষণ আপনি নিজেকে তাঁর সঙ্গে তুলনা করে চলেছেন। প্রাপ্তির হিসেবনিকেশ, উচিত-অনুচিতের চুলচেরা বিশ্লেষণের শেষে আপনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
চিন্তার বদলের প্রয়োজন
নিরাপত্তাহীনতার কারণ অন্বেষণ করুন। ভাবুন কেন এমনটা হচ্ছে। খুশির খবরে যেমন মন ভাল হয়। তেমন এই নিরাপত্তাহীনতার নিশ্চয় কোনও কারণ থাকবে। মানুষ মাত্রই ভুল করে। নিজের ভুলগুলো বোঝার মানসিকতা তৈরি করুন। দোষত্রুটি আড়াল করবেন না। সেই ভুলে বিব্রত, লজ্জিত না হয়ে বরং ভুল থেকে শিখুন। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পাথেয় করুন।
নিজেকে ভালবাসুন
যেমন পরিস্থিতি আসুক না কেন, নিজেকে ভালবাসুন। দেখবেন অনেক সময় নিজের ভুলত্রুটির কথা আমরা কাছে মানুষ বা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ভাগ করেনি। কিন্তু সেই একই ভুল ত্রুটির কথা অপরকেও বললে ভীষণ রাগ বা কষ্ট হয়। তার মানে নিজের প্রতি একটা ভালবাসা আছেই। আত্মভিমানকে প্রশ্রয় না-দিয়ে বরং স্বাভিমানে ভরসা রাখুন। নিজের ভুলভ্রান্তি নিয়ে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। আবার সাফল্য এলে নিজেকে পুরষ্কৃত করুন। নিরাপত্তাহীনতা বস্তুটা ঠিক কী? ভুলে যাবেন।
কৃতজ্ঞ থাকুন
আপনার ঈশ্বরে বিশ্বাস থাকুক কিংবা না থাকুক, জীবনের ভাল মুহূর্তের জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন। জীবনে সব খারাপের মধ্যেও কিছু ভাল থাকে। তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন। আবার সাময়িক ভাবে যদি মনেই হয় সব খারাপ, ভাল কিছুই নেই তা হলে এটা ভেবে সান্ত্বনা দিন যে পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ হয়নি। জীবনের অনিশ্চয়তার কথা সকলেই জানি৷ তাই ছোট ছোট মুহূর্তগুলি নিয়ে প্রাণভরে বাঁচুন।