নয়াদিল্লি: নতুন বৈদেশিক নীতি কৌশল (Foreign Policy Strategy) নিয়েছে রাশিয়া। গত শুক্রবার (৩১ মার্চ) তা ঘোষণা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin, President of Russia)। ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট পুতিন যা বলেছেন, তাতে আন্তর্জাতিক মহল নড়েচড়ে বসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (United States of America – USA) জন্য অবশ্যই এই ঘোষণা উদ্বেগের বিষয়। বর্তমানে বিশ্বের সুপার পাওয়ার (Super Power) হিসেবে আমেরিকার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া (Russia), ব্যবসায়িক ও কৌশলগত দিক থেকে চীনের (China) সঙ্গেও বিরোধিতা রয়েছে। এই অবস্থায় রাশিয়া তাদের নতুন বৈদেশিক নীতি কৌশলে বলেছে, বিশ্ব মঞ্চে ভারত এবং চীন তাদের প্রধান মিত্রদেশ।
চলতি শতাব্দীতে এটি পঞ্চম বৈদেশিক নীতি কৌশল ঘোষণা রাশিয়ার। এর আগে ২০০০, ২০০৮, ২০১৩ এলং ২০১৬ সালে পর্যায়ক্রমে ফরেন পলিসি কনসেপ্ট অব দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন (Foreign Policy Concept of the Russian Federation) ঘোষণা হয়েছিল। এবারের বৈদেশিক নীতি কৌশলকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার কারণ হলো, বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। যদিও সেদেশের নতুন ফরেন পলিসি কনসেপ্টে রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের (Russia-Ukraine conflict) কথা উল্লেখ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: IPL 2023 | রাজনৈতিক পোস্টার নিয়ে মাঠে প্রবেশ নয়, নিষেধাজ্ঞা আইপিএলে
কী বলছে বিশেষজ্ঞ মহল?
রাশিয়ার নতুন বৈদেশিক নীতি ইউরেশিয়া (Eurasia) কেন্দ্রিক। তাতে দুই মহাদেশীয় অঞ্চলে অবস্থিত বন্ধুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক শক্তি ও উন্নয়ন কেন্দ্রগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ও সমন্বয়ের গভীরতার তাৎপর্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। উত্তর ইউরোপের দেশ এবং রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ফিনল্যান্ড (Finland) ন্যাটো সদস্যতা পদ নিতে চলেছে। মঙ্গবার (৪ এপ্রিল) তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর ফলে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক সীমার ১,৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ অংশ ন্যাটো বাহিনীর অবাধ বিচরণস্থল হয়ে উঠার পথে। ফলে রাশিয়ার উপরেই মার্কিন চাপ বাড়তে চলেছে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক আসরে মিত্রদেশের সংখ্যা বাড়াতে মারিয়া পুতিন। রাশিয়া পরিষ্কারভাবে আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব (Strategic Partneship) গড়ে তুলতে চায়।
ক্ষমতার নতুন কেন্দ্র ভারত ও চীন
এবছর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দু’বার ভারতে আসতে পারেন। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গ্যানাইজেশন সম্মেলন (Shanghai Cooperation Organisation – SCO Summit) এবং জি২০ সম্মেলন (G20 Summit)-এ যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকলেও, মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বহু পুরনো। মাঝে দূরত্ব তৈরি হলেও, বর্তমানে দুই দেশ ফের কাছাকাছি এসেছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কও তৈরি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের জেরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের (International Trade) ক্ষেত্রে মস্কোর সঙ্গে ভারতীয় রুপিতে (Indian Rupee – INR) ব্যবসা-বাণিজ্য চালাচ্ছে নয়াদিল্লি।
বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব এখন বহুমুখী হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার নতুন কেন্দ্র উঠে আসছে, বিশেষ করে ভারত ও চীন ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই কারণে ভারত ও চীনের সঙ্গে বৈশ্বিক স্তরে রাশিয়া সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ও বজায় রাখতে আগ্রহী।
পশ্চিমী দুনিয়া বনাম রাশিয়া
নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গ্যানাইজেশন, সংক্ষেপে ন্যাটো (North Atlantic Treaty Organization – NATO)। ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে আমেরিকার নেতৃত্বে রাশিয়া বিরোধী এই আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট (International Defence Alliance) গঠিত হয়েছে। ফিনল্যান্ড যোগ দিতে চলার পথে সদস্য সংস্থা ৩১ হওয়ার পথে। ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় থেকেই রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধের আশঙ্কায় কাটিয়েছে গোটা বিশ্ব। বর্তমানে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে ফের পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হয়েছে। ন্যাটো সদস্যভুক্ত ইউরোপের দেশগুলির ঘাঁটিতে আমেরিকা তাদের পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন হাতিয়ার মোতায়েন করেছে (১৯৫০ সাল থেকেই এই কাজ করে আসছে মার্কিন প্রশাসন)। জবাবে রাশিয়াও বেলারুশে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করার প্রস্তুতি শুরু করেছে।