গুয়াহাটি: গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে কাঁদানে গ্যাস আর রবার বুলেট। তার পর এক প্রতিবাদীর বুকে গুলি। অসমের দরং জেলার সিপাঝারে ‘অনুপ্রবেশকারী’দের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের হাড়হিম করা ছবি গোটা দেশ দেখেছে। কিন্তু এই ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছেন?
ঘটনার সূত্রপাত বেশ কয়েক বছর আগে। বিজেপি অসমে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জবরদখলকারীদের হঠানো শুরু করে। রাজ্যের অনেক বাসিন্দা উচ্ছেদের বিরোধিতা করলেও তাতে কর্ণপাত করেনি গেরুয়া শিবির। করোনার জেরে উচ্ছেদ অভিযান মাঝে কিছুদিন বন্ধ ছিল। হিমন্ত বিশ্বশর্মা মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর ফের উচ্ছেদ শুরু হয়।
জুন মাসে ঢোলপুর ১ নম্বর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। সংখ্যালঘু প্রধান ওই এলাকায় আগে মন্দির ছিল, এই যুক্তি দিয়ে সরকার জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। প্রায় ৮০০-৯০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। তবে ওই এলাকার বাসিন্দারা সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
আরও পড়ুন: গুলিতে ক্ষতবিক্ষত শরীরের উপরেও বর্বর আক্রমণ, অসমে পুলিশের ফটোগ্রাফার গ্রেফতার
বিষয়টি আদালতেও গড়ায়। বর্তমানে উচ্ছেদের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তা সত্ত্বেও হিমন্তের পুলিশ লাগাম টানেনি উচ্ছেদ অভিযানে। ফটোগ্রাফার ভাড়া করে বন্দুকধারী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাচ্ছেন পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা। সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখ থেকে উচ্ছেন অভিযানে নামে পুলিশ।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও তাঁর ছোট ভাই সুশান্ত বিশ্বশর্মা
দু’দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গোল বাধে তৃতীয় দিন। দরং জেলার সিপাঝারে ‘অনুপ্রবেশকারী’দের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। দু’পক্ষের সংঘর্ষে মৃত্যু হয় দুই গ্রামবাসীর। মৃতরা বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারী কিনা তা এখনও জানা যায়নি। আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইট-পাটকেলে জখম হয়েছেন ১১ জন পুলিশ কর্মী। পুলিশের অভিযোগ, দখলদাররা তাদের কাজে বাধা দিচ্ছিল।
বর্তমানে যে সমস্ত এলাকায় উচ্ছেদ চলছে, সেই সমস্ত এলাকার সিংহভাগ মানুষই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ, পুরো ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিতে চাইছে বিজেপি সরকার। সে কারণেই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বন্দুক হাতে অভিযানে নামছে পুলিশ। ১৯৮০ সাল থেকে ওই এলাকায় বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করতে তাই অভিযানে নামছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন: অসমে ‘অনুপ্রবেশকারী’দের হঠাতে অভিযান, নির্বিচারে গুলি পুলিশের, মৃত ২
যে জেলায় এই অভিযান চলছে, এই দরং জেলার পুলিশ সুপার সুশান্ত বিশ্বশর্মা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার ছোট ভাই। হিমন্ত রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী থাকাকালীন ওই জেলায় পাঠানো হয় সুশান্তকে। অসমের বিরোধী দলগুলি এই ঘটনায় কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রশ্ন উঠছে, তাঁর নির্দেশ ছাড়া কি পুলিশ গুলি চালানোর সাহস পাবে? প্রতিবাদীর বুক লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনাকে বিজেপি-আরএসএসের কমিউনাল এক্সপেরিমেন্ট বলেও আখ্যা দিয়েছেন অনেকে।