গুয়াহাটি: সাদা রঙের শতছিদ্র গেঞ্জির বুকের কাছে লাল রঙের টোপলাটা স্পষ্ট ধরা পড়ছিল ৷ ক্যামেরা জুম করলে বুক-পেটের ওঠানামাও দেখা গিয়েছিল বেশ কয়েক দফায় ৷ হয়তো হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভাল কিছু শোনাও যেতে পারত ৷ কিন্তু ঠিক তখনই মাটিতে লুটিয়ে পড়া শরীরটার উপর ক্যামেরা হাতে লাফিয়ে পড়েছিল ছেলেটা ৷ মুহূর্তে ঘুরে মুষ্টিবদ্ধ হাতে বসিয়ে ছিল ঘুসি-ও ৷ বৃহস্পতির সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই শঙ্কর বানিয়াকে গ্রেফতার করেছে অসম পুলিশ ৷ ঠিক কী আক্রোশে কাল এ ভাবে নৃশংসতায় মেতেছিলেন শঙ্কর তাই জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ৷
বৃহস্পতিবার অসমের দরং । বেআইনি দখলদার উচ্ছেদ ঘিরে তুলকালাম ৷ ঢোলপুর ৩ নম্বর এলাকা ৷ হঠাৎই পুলিশের দিকে তেড়ে যান কয়েক জন ৷ কিছু ভাবনা-চিন্তা না করে গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশও ৷ আহত হন কয়েক জন ৷ রাগ কিন্তু তাতে মেটেনি পুলিশদের ৷ লাঠি উঁচিয়ে সেই আহত-দেহের উপর শক্তি জাহির করতে শুরু করেন তাঁরা ৷ সঙ্গেই যোগ দেন চিত্রগ্রাহক শঙ্কর ও আরও কয়েক জন ৷ উন্মাদের মতো চিৎকার করতে করতে লাফাতে থাকেন আহতের শরীরটার উপর ৷
আরও পড়ুন: মন্দিরের পুরোহিতের পর্নে আসক্তি! দিল্লির ক্যান্টনমেন্ট ধর্ষণ কাণ্ডে নয়া তথ্য
লাঠি হাতে হাত দেড়েক অদূরে তখন জনা কয়েক পুলিশ কর্মী ৷ কিছু মুহূর্ত আগে তাঁরাও বিক্রম দেখিয়েছিলেন ৷ বুকে গুলিবিদ্ধ দেহটার উপর লাফ শেষে হওয়ার আগে সেই পুলিশরাই সরিয়ে নিয়ে যান শঙ্করকে ৷ কিন্তু, আহত দেহটাকে শাস্তি দেওয়ার উদগ্র বাসনা যে কাজ করছিল শঙ্করের মনে ৷ তাই হয়তো ফের বীরবিক্রমে পুলিশের হাত ছাড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া দেহটার উপর লাফিয়ে পড়েছিলেন ক্যামেরাম্যান শঙ্কর ৷ যেন প্রায় মরা দেহটাকে পুরো মারাই ছিল ক্যামেরাম্যান শঙ্করের গত কালের অ্যাসাইনমেন্ট ৷
https://twitter.com/kavita_krishnan/status/1440999800187408388?s=20
শঙ্করের এহেন ‘বিক্রমের’ ছবি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ৷ ওঠে সমালোচনার ঝড় ৷ বিপদের আঁচ পেয়ে তড়িঘড়ি শঙ্করকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ রাজ্য পুলিশের ডিজি ভাস্করজ্যোতি মোহান্ত টুইট করে গ্রেফতারির খবর জানান ৷ মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা নির্দেশ দেন তদন্তের ৷ ঠিক কী কারণে উচ্ছেদ অভিযানে গুলি চালাতে হল, শুরু হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক ৷ প্রশ্ন উঠছে গুলি চালাতে বাধ্য হলেও এমনকি পরিস্থিতি হল, যাতে বুকে গুলি করতে হল ৷ যদিও এ সব প্রশ্ন কোনও উত্তর এখনও মেলেনি ৷
Currently in Sipajhar, taking stock of the ground situation.
The cameraman who was seen attacking an injured man in a viral video has been arrested.As per wish of Hon. CM @himantabiswa I have asked CID to investigate the matter.
Cameraman Bijoy Bonia is in @AssamCid 's custody.— DGP Assam (@DGPAssamPolice) September 23, 2021
আরও পড়ুন: ‘গরুর দুধে সোনা রয়েছে’ বলেই বিশ্বাস করেন বিজেপির অধ্যাপক সভাপতি
কিন্তু, বিভূতিভূষণের অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় শঙ্করকে কয়েক যোজন পিছনে ফেলে বিতর্কের নবতম সংযোজন চিত্রগ্রাহক শঙ্কর ৷ যার বন্ধ ক্যামেরা যেন নৃশংসতার নতুন ছবি লেন্সবন্দি করে ফেলল ৷ এক দিন মহাভারতে ভীষ্মকে যুধিষ্ঠির প্রশ্ন করেছিলেন, নৃশংস কে ? কুরুক্ষেত্রে দশ দিন ধরে রথী-মহারথীদের কচুকাটা করে ভীষ্ম তখন শুয়ে শরশয্যায় । সেই অবস্থায় উত্তর দিচ্ছেন, উত্তম ভোজ্যর দিকে চেয়ে বসে রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের না দিয়ে যে সেই সব খায়, সে-ই নৃশংস । কী কাণ্ড! বুক ফেঁড়ে, মাথা ফাটিয়ে হত্যা, আর না-দিয়ে খাওয়া, দুটো একই রকম দোষের ? হ্যাঁ, কারণ দু-ক্ষেত্রেই অন্যকে অস্বীকার হচ্ছে । বাঁচতে না দিয়ে, খেতে না দিয়ে । গাঁন্ধি বলেছিলেন, দারিদ্র হিংস্রতার সব চাইতে খারাপ রূপ । কিন্তু, গত কাল বিজেপি শাসিত অসমের চিত্রগ্রাহক নিজেকে নিয়ে যে ছবি তুলে ধরলেন, সেটা কি নৃশংসতার নবতম সংযোজন হিসেবে লেখা হয়ে থাকল না ?