চণ্ডীগড়: কট্টরপন্থী শিখ ধর্মপ্রচারক অমৃতপাল সিং (Radical preacher Amritpal Singh) এখনও পলাতক। শনিবার (১৮ মার্চ) সকাল থেকে পুলিশ তাকে খুঁজছে। গতকাল বিকেলে তাকে পাঞ্জাব পুলিশ (Punjab Police) ধাওয়া করে জলন্ধরে আটক (Detained in Jalandhar) করলেও, আবার সে পালিয়েছে। গোটা পাঞ্জাব শনিবার থেকে খলিস্তানি সহানুভূতিশীল নেতা ও তার সহযোগীদের ধরপাকড় নিয়ে উত্তাল। তবে অমৃতপাল সিং পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়ালেও, তার চার সহযোগীকে গ্রেফতার করে রবিবার (১৯ মার্চ) অসমের ডিব্রুগড় সেন্ট্রাল জেলে (Dibrugarh Central Jail) পাঠানো হয়েছে। বায়ু সেনার বিশেষ বিমানে করে সেখানে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাদেরকে রাখা হয়েছে।
এরই মাঝে খবরে প্রকাশ, পুলিশ ও নিরাপত্তা এজেন্সির তদন্তে জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা (Pakistani Intelligence Agency) ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (Inter-Services Intelligence – ISI) সঙ্গে যোগ রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ ধর্মপ্রচারক (Separatist Shikh Preacher) অমৃতের। শুধু তাই নয়, বিদেশের কিছু সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গেও যোগ রয়েছে তার। আইএসআই এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রেখে চলত অমৃত।
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi | রাহুল গান্ধীকে নতুন করে নোটিস জারি দিল্লি পুলিশের, বিষোদগার কংগ্রেস নেতার
অমৃতপাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Union Home Minister Amit Shah) প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। তার বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক (Union Home Ministry) যদি খলিস্তানি আন্দোলনকে (Khalistani Movement) দমাতে চায়, তাহলে তার ফল ভুগতে হবে। হুমকি দিতে গিয়ে এই প্রসঙ্গে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরিণতির (Consequence of Former Prime Minister Indira Gandhi) কথাও সে টেনে এনেছে।
অমৃতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে (Waris Punjab De) সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে শিখ তরুণ সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করছে সে এবং পাঞ্জাবের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্র চলছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে-স্থিত খলিস্তানি সন্ত্রাসবাদী অবতার সিং খান্দার (Avtar Singh Khanda) সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে তার। এমনও শোনা যাচ্ছে, অমৃতপাল সিংয়ের উল্কাগতির উত্থানের (Meteoric Rise) পিছনে এই অবতারেরই হাত রয়েছে।
খান্দা হলো নিষিদ্ধ বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনালের নেতা পরমজিৎ সিং পামারের (Banned Babbar Khalsa International Head Paramjit Singh Pamma) বিশ্বস্ত লেফ্টেন্যান্ট, সে প্রায়শই শিখ যুবকদের কট্টরপন্থী করে তোলার জন্য তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশে ক্লাস নেয়। অভিযোগ রয়েছে, এই তিনজন শিখ যুবকদের চরমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মতাদর্শগত প্রবৃত্তির মাধ্যমে পাঞ্জাবকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে কাজ করছে। খান্দা বার্মিংহাম (Birmingham) এবং গ্লাসগোতে (Glasgow) বসে কীভাবে সাধারণভাবে উপলব্ধ রাসায়নিক (Commonly Available Chemicals) ব্যবহার করে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (Improvised Explosive Devices) তৈরি করা যায়, তার অনলাইন প্রদর্শনী (Online Demonstrations) দেয়।
অমৃতপালের সিংয়ের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল শিখ ইয়ুথ ফেডারেশন (International Sikh Youth Federation) প্রধান লখবীর সিং রোডেরও (Lakhbir Singh Rode) যোগাযোগ রয়েছে। লখবীর ভারত থেকে পলাতক। তার বিরুদ্ধে অস্তশস্ত্র ও বিস্ফোরক চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে নয়াদিল্লিতে সরকারি নেতাদের উপর হামলার ছক কষা এবং পাঞ্জাবে ঘৃণা ছড়ানোরও অভিযোগ রয়েছে।
অমৃতপাল সিং ভারতে আসার আগে দুবাইতে (Dubai) থাকত, সেখানেই তার যোগাযোগ হয়েছিল রোডের ভাই যশবন্তের (Jaswant) সঙ্গে। সেখানেই সে আনন্দপুর খালসা আর্মি (Anandpur Khalsa Army – AKF) সংগঠন তৈরি করেছিল। এই সংগঠনের সদস্যরা সবসময়ই হাতিয়ার নিয়ে ঘোরাফেরা করে। তদন্তকারীদের দাবি, ধর্মের নামে শিখ যুবকদের ভুল পথে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করে অমৃতপাল সিং। সেই একই প্রভাবই ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে সংগঠনের দায়িত্ব হাতে নেওয়ার পর খাটাতে শুরু করেছিল। ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে প্রতিষ্ঠাতা দীপ সিধু (Deep Sidhu) গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পথ দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছিল অমৃতপাল।