কলকাতা: চলতি মাসের শেষের দিকে দীর্ঘ একটি উড়ান পথ কলকাতা এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল অফিসার্সের (Air Traffic Control Officers – ATCO) নিয়ন্ত্রণাধীনে আসছে। খবরে প্রকাশ, বারাণসীর আকাশসীমার (Varanasi Airspace) উপরে ১.৭ লক্ষ বর্গকিমি অঞ্চল (1.7 Lakh Sq. KM) সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টার জন্য কলকাতার এটিসিও’র অধীনে থাকবে। কলকাতা থেকে দিল্লি (Kolkata to Delhi) এবং পূর্ব (East), উত্তর-পূর্ব ভারতের (North-East India) যে কোনও দিকে, এমনকি দেশের রাজধানীর (Nation’s Capital) দিকে আসা নিরাপদ প্রত্যক্ষ রাউটিং (Secure Direct Routing) অথবা সরাসরি উড়ান পথ (Straight Flight Path)-এর দিকে আসা বিমানগুলিকে (Aircrafts) সাহায্য হবে এর ফলে।
ডিরেক্ট রাউটিংয়ের অর্থ হলো, দক্ষ উড়ান পথ অর্থাৎ এফিসিয়েন্ট ফ্লাইট পথ (Efficient Flight Paths)। ফলে সময় কম লাগবে এবং জ্বালানি সঞ্চয় হবে, সম্মিলিতভাবে আকাশে দূষণও কম হবে।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যকে সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরের এক আধিকারিক বলেছেন, “৩১ মার্চ থেকে, সংশ্লিষ্ট বিস্তীর্ণ আকাশসীমা (Vast Airspace) এয়ার ট্র্যাফিক সার্ভিসেস বিল্ডিংয়ের (Air Traffic Services Building) তৃতীয় তলে (Third Floor) অবস্থিত এটিসিও নিয়ন্ত্রণ করবে। বিমানের সমস্যা (Problems in Planes) হোক, কিংবা আবহাওয়া ব্যবস্থাপনা (Weather System), যে কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে (Emergency Situations) খুব সহজে সমন্বয়সাধন (Coordination) করা যাবে।” এরফলে, আকাশসীমায় বিপদ এড়ানোও সম্ভব হবে এবং নিরাপদ হয়ে উঠবে উড়ান পথ।
আরও পড়ুন: Delhi Harrasment | দিল্লিতে তরুণীকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা
অপর এক এটিসি আধিকারিকের বক্তব্য, “ডিরেক্ট রাউটিংয়ের ফলে পাইলটদের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন (Frequency Change) করার প্রয়োজন পড়বে না। ফলে পাইলট এবং কন্ট্রোলার (Pilots and Controllers) উভয়ের উপরই সমন্বয় অর্থাৎ কোঅর্ডিনেশনের চাপ (Coordination Load) কমবে। সমগ্র আকাশসীমা ব়্যাডার কভারেজের (Radar Coverage) অধীনে থাকায় কন্ট্রোলাররা আরও বেশি করে বিমান এই পথে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন।” তিনি এটাও জানিয়েছেন, কন্ট্রোলারদের বক্তব্য, এই পদক্ষেপের ফলে উড়ান পথে ভুলভ্রান্তি, দুর্ঘটনা এবং কোঅর্ডিনেশন সমস্যা দূর হবে।
প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমে খাজুরাহো (Khajuraho) এবং লখনউয়ের (Lucknow) মধ্যে এবং পূর্বে ডিব্রুগড় (Dibrugarh) ও আগরতলার (Agartala) মধ্যে (২৫,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত উড়ান পথ) সমগ্র উচ্চ আকাশসীমা (Upper Airspace) কলকাতা এটিসিও’র নিয়ন্ত্রণাধীনে আসতে চলেছে। পরিসংখ্যানের হিসাব বলছে, নতুন এই উড়ান পথ যুক্ত হওয়ায় কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসিও’র অধীনে আগামী দিনে মোট ১৪.৭ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার (14.7 Lakh Sq. KM) আকাশসীমা থাকতে চলেছে। এটি বৃহত্তম মহাদেশীয় আকাশসীমা (Largest Continental Airspace) হতে চলেছে চলতি মাসের শেষ তারিখে। এক্ষেত্রে কলকাতা অতিক্রম করল চেন্নাইকে (Chennai)। চেন্নাই বিমানবন্দরের এটিসিও’র নিয়ন্ত্রণাধীনে ১৪.৩ লক্ষ বর্গ কিমি আকাশসীমা রয়েছে। কিন্তু মোট কভারেজের (Total Coverage) পরিপ্রেক্ষিতে চেন্নাই আগেই থাকছে। মহাদেশীয় এবং মহাসাগরীয় আকাশসীমা (Continental and Oceanic Airspace) মিলিয়ে তাদের হাতে ৪৭ লক্ষ বর্গ কিমি অঞ্চল রয়েছে। সেদিক থেকে কলকাতার হাতে মোট আকাশসীমা ১৮.৫ লক্ষ বর্গ কিমি।
এমাসের শেষের দিকে বারাণসীর উচ্চ আকাশসীমা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে চলে এলে কলকাতা এরিয়া কন্ট্রোলাররা ২৫০-৩০০টি ফ্লাইট পরিচালনা (Manage) করবে। কলকাতা এয়ার ট্র্যাফিক রিজিওন (Air Traffic Region – ATR) এক্তিয়ার (Jurisdiction) বৃদ্ধির ফলে কন্ট্রোলাররা ১৫টি আন্তর্জাতিক রুট (International Route), ৩৭টি ক্রসিং (37 Crossings) এবং ১০টি কনভার্জিং পয়েন্ট (Converging Point) পরিচালনা করবেন। এটি দেশের সবর্বাধিক চ্যালেঞ্জিং এয়ার ট্র্যাফিক রিজিওন হতে চলেছে। পাশাপাশি কলকাতা এয়ার ট্র্যাফিক রিজিওনে আসা সবকটি জেট প্লেন (Jet Planes) এবার থেকে কলকাতা থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তবে এটিআর এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অবতরণ করা ও উড়ান নেওয়া (Land or Take Off) অন্যান্য টার্বো-প্রপ এয়ারক্র্যাফ্ট বা ছোট বিমান (Turbo-prop Aircraft or Small Planes) ও ন্যারো-বডি প্লেন (Narrow-body Planes) সহ ২৫,০০০ ফুট উচ্চতার নীচ দিয়ে উড়ে যাওয়া সমস্ত বিমান নিয়ন্ত্রণ করবে স্থানীয় এটিসি (Local ATCs)। কলকাতা ফ্লাইট ইনফরমেশন রিজিওন (Flight Information Region – FIR)-এর অধীনে সাতটি মহাদেশীয় এবং একটি মহাসাগরীয় আকাশসীমা রয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শেষবার উচ্চ আকাশসীমাকে একীভূত (Integrate) করা হয়েছিল। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে বারাণসী উচ্চ আকাশসীমায় (Varanasi Upper Airspace) ট্রায়াল রান (Trial Runs) চলছে। প্রযুক্তিগত এবং প্রশাসনিক সমস্যার (Technical and Administrative Issues) কারণে এই দুই আকাশসীমার একীকরণে দেরি হলো।