কলকাতা: বৃদ্ধ বাবার খাওয়ার সংস্থান করতে পারবে না, এই মর্মে আদালতে মেয়েদের আবেদনে বিস্মিত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। বুধবার বিচারপতি বলেন, ‘এই আসনে বসে আজ আমাকে এটাও দেখতে হচ্ছে যে বৃদ্ধ বাবা-মা একমুঠো খাবারের জন্য সন্তানদের কাছে ভিক্ষা চাইছেন।’
তমলুকের ৮৪ বছরের বৃদ্ধ তিনকড়ি মিত্রের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। এক ছেলে মারা গিয়েছেন, অপরজন নিখোঁজ। দুই মেয়ে বিবাহিত। বিয়ের পর থেকে দুই মেয়ে শিপ্রা সাউ ও শম্পা দত্ত বাবার কাছেই থাকেন। তিনকড়ির স্ত্রী মারা গিয়েছেন অনেক দিন আগে।
তিনকড়ির আইনজীবী সৌমিক গঙ্গোপাধ্যায় জানান, মেয়েরা জোর করে বাবার কাছ থেকে বাড়িটির গিফট ডিড করিয়ে নেন। এই বিষয়ে তাঁর মক্কেল তমলুক আদালতে মামলাও করেন। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। আদালতে আইনজীবীর অভিযোগ, দুই মেয়ে গিফট ডিড পাওয়ার পর থেকেই বৃদ্ধ বাবার উপর দুই মেয়ে অত্যাচার শুরু করেন। ২০২১ সালে ৩ জানুয়ারি দুই মেয়ে তিনকড়িকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। তিনকড়িকে আশ্রয় দেন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের বাসিন্দা, দীর্ঘদিনের বন্ধু দিলীপ বারিক।
পরবর্তীকালে নিজের বাড়িতে ফেরার আবেদন জানিয়ে তমলুক থানার দারস্থ হন বৃদ্ধ তিনকড়ি। সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, পুলিস বারবার চেষ্টা করেও তিনকড়িকে নিজের বাড়িতে ফেরাতে পারেনি। মেয়েরা বারবার বাধা দিয়েছেন।
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা দুই মেয়ের আইনজীবীকে বলেন, একজন প্রবীণ নাগরিককে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া আদালতের কর্তব্য। তিনি যাতে, শেষ দিনগুলি নিজগৃহ শান্তিতে কাটাতে পারেন, আদালত সেটাও দেখতে চায়। আদালতের নির্দেশ, অবিলম্বে তিনকড়িকে তাঁর তমলুকের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে হবে।
আরও পড়ুন- West Bengal Police Recruitment: বিষের বোতল হাতে নিয়ে সল্টলেকে বিক্ষোভ পুলিসে চাকরিপ্রার্থীদের
আদালতের নির্দেশের পরই দুই মেয়ের আইনজীবী এজলাসে জানান, বাড়িতে ফিরলে তিনকড়িকে খাওয়ার ব্যবস্থা নিজেকেই করে নিতে হবে। মেয়েরা কোনও দায়িত্ব নেবেন না। ওই আইনজীবীর আরও দাবি, তিনকড়ির বন্ধু এবং তাঁর পরিবারের কেউ তমলুকের বাড়িতে ঢুকতে পারবেন না।
আইনজীবীর এই বিচিত্র সওয়ালে বিস্মিত হন কলকাতা হাইকোর্টের ১৩ নম্বর এজলাসে উপস্থিত সবাই। বিচারপতি মান্থা আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘কী বলছেন আপনি? এক বৃদ্ধ বাবাকে তাঁর সন্তানরা খেতে দেবে না? যে বাবা তিলতিল করে সন্তানদের বড় করে তুলেছেন, বৃদ্ধ বয়সে তাঁকে আজ এই অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে? সমাজের এ কী হাল হল!’
বিচারপতির আরও মন্তব্য, এজলাসে বসে আমাকে এটাও শুনতে হল, খাওয়ারের জন্য বৃদ্ধ বাবাকে তাঁর মেয়েদের কাছে ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে। মেয়েদের উদ্দেশে বিচারপতি মান্থার পরামর্শ, বাবাকে ভালো করে রাখুন। আপনাদেরই ভালো হবে।