কলকাতা টিভি ওয়েল ডেস্ক: নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমলে ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার বিপন্ন । তাই অবিলম্বে ভারতকে লাল তালিকাভুক্ত করে সতর্ক করুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । এমনই বিস্ফোরক দাবি করে মার্কিন সরকারের কাছে সুপারিশ পত্র পাঠালো মার্কিন মানবাধিকার কমিশন ইউএসসিআইআরএফ । নরেন্দ্র মোদির মার্কিন সফর অথবা রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে কোলাকুলির পরেও মার্কিন মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ পুড়ল ভারতের ।
প্রসঙ্গত, গত বছর একইভাবে ভারতকে আন্তর্জাতিক স্তরে লাল তালিকাভুক্ত করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্কের দোহাই দিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে লাল তালিকাভুক্ত না করার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও ভারতের ক্ষমতাসীন শাসকদল ভাজপা পরিস্থিতির কোনরকম উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয়বারের জন্য এই সুপারিশ পত্র জমা পড়ল। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার সংক্রান্ত একটি তালিকা প্রকাশ হয়। সেই তালিকায় ভারতকে লাল তালিকা ভুক্ত করার সুপারিশ করল মার্কিন মানবাধিকার সংগঠন ইউএসসিআইআরএফ।
ত্রিপুরা নিয়েও উদ্বিগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ গত সপ্তাহে ত্রিপুরায় সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর যে হামলার ঘটনা ঘটে, সেই ঘটনাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন ইউএসসিআইআরএফ-র অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম বা প্রধান নাদিন মেনজা। কেন্দ্রীয় সরকারকে তিনি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসা বন্ধ করার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইউএসসিআইআরএফ-র প্রধান নাদিন মেনজা টুইটে লেখেন, ইউএসসিআইআরএফ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ত্রিপুরায় যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনাকে কেউ কেউ গত মাসে বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। ভারত সরকারকে দ্রুত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। কী রয়েছে রিপোর্টে?
আরও পড়ুন-রাফাল চুক্তিতে ৬৫ কোটির ঘুষ, চোখ বুজে ইডি-সিবিআই, দাবি ফরাসি সংবাদমাধ্যমের
ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম বা ইউএসসিআইআরএফ-র পেশ করা বার্ষিক রিপোর্টে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, ভারতের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি উগ্র জাতীয়তাবাদী হিন্দুত্বের নামে ভারতের সংখ্যালঘুদের উপরে নানাভাবে দমনমূলক আচরণ শুরু করেছে। রাজধানী শহর দিল্লিতে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবথেকে ভয়ানক সাম্প্রদায়িক অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্রই উগ্রতার নামে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ এবং এনআরসি-র নামে সারা ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানো হয়েছে। এ-ও অভিযোগ করা হয়েছে যে, ২০১৯ সালের মে মাসে ভাজপা আরও শক্তিশালী হয়ে ফের ভোটে জিতে আসার পরে ভারত সরকার এমন কিছু জাতীয় নীতি নির্ধারণ করেছে, যা গোটা দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে লঙ্ঘিত করেছে। কিছু রাষ্ট্র বাদে সারা বিশ্বে ধর্মীয় স্বাধীনতার লেখচিত্র যেখানে ঊর্ধ্বগামী, সেখানে ভারতে গত বছর থেকে তা দ্রুত নিম্নগামী হয়েছে। ভারতের সঙ্গে তালিকায় রাশিয়া মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা ইউএসসিআইআরএফ মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের কাছে সুপারিশ করেছে ভারত ও রাশিয়াসহ পাঁচটি দেশকে ধর্মীয় স্বাধীনতা অধিকারের র্যাঙ্কিংয়ে লাল তালিকায় রাখা উচিত।
প্রসঙ্গত, আগে থেকেই ধর্মীয় স্বাধীনতা বিপন্ন হওয়ার তালিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোকে রেখেছে সেগুলি হল, সিরিয়া,ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, ইরাক এবং কাজাখস্তানের মতো দেশ।