ওয়াশিংটন: পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে এক বৃহদাকায় গ্রহাণু (Massive Asteroid)। যার আয়তন একটা স্টেডিয়ামের সমান। প্যান-স্টার্স (Pan- STARRS), কাতালিয়ান স্কাই সার্ভে (Catalina Sky Survey), নিওওয়াইজ টেলিস্কোপ (NEOWISE Telescope)–এর মতো বিভিন্ন টেলিস্কোপের সাহায্যে নাসা (NASA) মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহাণুর উপর নজর রাখে এবং পর্যবেক্ষণ চালায়। এই সমস্ত টেলিস্কোপ মাঝআকাশে কিংবা পৃথিবীতেই বসানো রয়েছে, যা অনবরত ডেটা পাঠিয়ে যায় নাসার কাছে। সেই সমস্ত ডেটা পর্যবেক্ষণ করেই নাসা জানাতে পেরেছে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে গ্রহাণু ২০১৯ ওআর১ (Asteroid 2019 OR1)। নাসার প্ল্যানেটারি ডিফেন্স কোঅর্ডিনেশন অফিস (NASA’s Planetary Defense Coordination Office) সতর্কতা জারি করেছে এই গ্রহাণুকে নিয়ে।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, ২১ নভেম্বর তারিখে গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে ৪.৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ৪৩ লক্ষ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। আর গ্রহাণুটির আয়তন ৭৭০ ফুট। গ্রহাণুটি ইতিমধ্যেই পৃথিবীমুখী হয়েছে, ধেয়ে আসছে প্রতি ঘণ্টায় ৪৮,১৬৮ কিলোমিটার বেগে। যদিও গাণিতিক অনুমান বলছে, গ্রহাণুটির পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আশঙ্কা অবশ্যই রয়েছে। নীলগ্রহের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের (Earth’s Gravitational Field) সঙ্গে সামান্যতম সংস্পর্শে হতে পারে গতিপথ পরিবর্তন আর ঘটে যেতে পারে বিধ্বংসী পরিণাম।
নাসার প্ল্যানেটারি সায়েন্স ডিভিশন (Planetary Science Division) ওয়াশিংটনে তাদের প্রধান কার্যালয়ে একটি প্ল্যানেটারি ডিফেন্স কোঅর্ডিনেশন অফিস (PDCO) বসিয়েছে গ্রহাণু ২০১৯ ওআর১-এর উপর নজর রাখার জন্য। পিডিসিও মহাকাশের সম্ভাব্য বিপজ্জনক বস্তু (Potentially Hazardous Objects – PHOS) আবিষ্কারের কাজ করে। এমন সমস্ত গ্রহাণু এবং ধমকেতু (Asteroids and Comets), যাদের কক্ষপথ পৃথিবীর ০.৫ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (৫০ লক্ষ মাইল বা ৮০ লক্ষ কিমি)-এর মধ্যে চলে আসতে পারে, সেই সমস্ত মহাজাগতিক বস্তুর খবর দেয় এই পিডিসিও।
পৃথিবীর কক্ষপথে এই সমস্ত বিপদকে ঠেকানোর জন্য নাসা’র ডার্ট মিশন (DART Mission) সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে। নাসার ডার্ট মিশনের মূল লক্ষ্যই ছিল কক্ষপথে (Orbit) এই সমস্ত গ্রহাণু ও ধুমকেতুর মতো বস্তুর গতিপথ বদলানো যায় কিনা। বলাবাহুল্য, মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা যে কোনও বিশালাকায় পাথরের টুকরোকে প্রতিহত করার প্রযুক্তি নির্মাণে মানবজাতির এটি প্রথম পদক্ষেপ। এই সিস্টেমের মাধ্যমে ৫৭০ কেজি ওজনের বাক্সের আকারের একটি মহাকাশযানকে মহাকাশে নিক্ষেপ করা হয় পৃথিবী থেকে ৯০ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা বস্তুর উদ্দেশ্যে। ডার্ট মিশনের প্রাথমিক লক্ষ্য কখনই কোনও গ্রহাণুকে ধ্বংস করা নয়, বরং তার গতিপথ বদলে দেওয়া।