কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক : কলকাতা টিভি ডিজিটালের খবরের রেশ এবং স্থানীয় মানুষের দাবিতে মান্যতা দিলেন সাংসদ। যাতায়াতের পথেই হবে বিপ্লবী নায়ক হেমচন্দ্র ঘোষের আবক্ষ মূর্তি।
বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ
উনিশ শতকের গোড়ায় বিপ্লবীদের চালিকাশক্তি তিনি। তৎকালীন বা়ংলাদেশের গুপ্ত সমিতি এবং পরবর্তীকালে মুক্তি সংঘ । এছাড়াও বেঙ্গল ভলেনন্টিয়ার্সের প্রতিষ্ঠাতা ,স্বামী বিবেকানন্দের স্নেহধন্য, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আইডল, বিপ্লবী বিনয়,বাদল ও দিনেশের বৈপ্লবীক শিক্ষাগুরু ছিলেন হেমচন্দ্র ঘোষ।
বিপ্লবী হেমচন্দ্রের আদর্শ ছিলেন বিবেকানন্দ। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে হেমচন্দ্রের মধ্যে ইনারফোর্স ডেভলপ করেছিল। একথা তিনি নিজেই বলতেন। বিবেকানন্দের বাণীর জীবনের মন্ত্র করে জাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণ সাধনে এগিয়েছিলেন । অত্যাচারী ইংরেজ শাসক সিম্পসন, ডগলাস, পেডি, লোম্যান, বার্জ, হাটসনদের খতম করার পরিকল্পনা তাঁরই ইশারায়।
বিপ্লবী হেমচন্দ্র ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গী হিসাবে যাদের পেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রীশচন্দ্র পাল, হরিদাস দত্ত, রাজেন গুহ, ডক্টর সুরেশ বর্ধন মুন্সি, আলিমুদ্দিন, আহমেদ খগেন দাশ সহ আরও অনেকে।
আরও পড়ুন – বাঙালির বটতলাবাজারে ‘সুকুমার’ আর ‘সন্দেশ’ এক অবিশ্বাস্য আলোর ফোয়ারা
শোনা যায় এই শ্রীশচন্দ্র পালই তৎকালীন কলকাতার আত্মোন্নতি সমিতির নেতা হরিশ সিকদার, বিপিন গাঙ্গুলিদের সঙ্গে হেমচন্দ্রের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। যোগাযোগ রক্ষা করতেন যুগান্তর দলের নেতা যতীন মুখার্জির সঙ্গেও। আস্তে আস্তে দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে মুক্তি সংঘ।
১৯০৮ সালের ৯ই নভেম্বর এই দুই দলের প্রথম কাজ সার্পেন্টাইন লেনে নন্দলাল ব্যানার্জির হত্যা। বিপ্লবীদের কাছে খবর আসে প্রফুল্ল চাকিকে গ্রেফতার ও পরে তাঁর ফাঁসির পিছনে নন্দলাল ব্যানার্জির হাত ছিল। মুক্তি সংঘ ও আত্মোন্নতির যৌথ কাজ ১৯১২ সালে জগদ্দল অঞ্চলের আলেকজান্ডার জুটমিলের বিলাতী ইঞ্জিনিয়ার রাবার্ট ও ব্রায়েনকে হত্যার পরিকল্পনা। এই বিলাতী ইঞ্জিনিয়ার অন্যায়ভাবে জুটমিলের এক শ্রমিককে মেরে ফেলে। যদিও পরবর্তীকালে এই বিলাতী ইঞ্জিনিয়ারের ৫০ টাকা জরিমানা হয়।
আরও পড়ুন – জন্মদিন গেল নীরবেই, কেউ মনে রাখেনি বিপ্লবী অনাথবন্ধু পাঁজাকে
স্বদেশীর জীবনের মূল্য মাত্র ৫০ টাকা। বিপ্লবীরা এই ইঞ্জিনিয়ারকে খতম করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিলাতী ইঞ্জিনিয়ারের উপর নজরদারির এই কাজের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় খগেন দাশ ও হরিদাস দত্তকে। তৃতীয় কাজ ১৯১৪ সালের ২৬ শে আগষ্ট রডা কম্পানির কলকাতার অফিসের অস্ত্র লুন্ঠন।
কীভাবে কোন পথে বিপ্লবীদের রডা কম্পানির অস্ত্র লুন্ঠনের পরিকল্পনা সেই নকশা
সেই সময় বিপ্লবীদের ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে লড়াইয়ের অস্ত্র সংগ্রহে মরিয়া। ঠিক সেই সময় বিপ্লবীদের কাছে খবর আসে মার্জার পিস্তল ও প্রচুর কার্তুজ আসছে রডা কোম্পানির কলকাতার অফিসে। এই অস্ত্র লুঠ করতে বিপ্লবীরা বৈঠক ডাকে। বৈঠকে উপস্থিত হন বিপিন গাঙ্গুলি, হেমচন্দ্রসহ সকল বিপ্লবীরা। হেমচন্দ্র সেই অস্ত্র লুটের পরিকল্পনা করেন।
ততকালীন পুলিশ কমিশনারের দেওয়া আই বি রিপোর্ট।
কাস্টমস হাউস থেকে কার্তুজ ভর্তি গাড়ি নিয়ে কোম্পানির গোডাউনে আনার পথে একটি গাড়ি বর্তমান কাউন্সিল হাউস, কারেন্সি অফিসের পাশ দিয়ে মিশন রো মালিঙ্গা লেনে পৌঁছায়। বাকি ছটা গাড়ি চলে যায় কোম্পানির গোডাউনে।
গোডাউনের ছবি
এই রুটের নেপথ্যে ছিলেন রডা কোম্পানির অত্যন্ত বিশ্বস্ত ম্যানেজার শ্রীশ মিত্র। যিনি কেরানি চাকরিতে ঢুকে আস্তে আস্তে বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন রডা কোম্পানির কর্তৃপক্ষের। তিনদিন পর অস্ত্রভান্ডারের স্টক মিলাতে গিয়ে অস্ত্রের খোঁজ পড়লে আর পাওয়া যায়নি সেই লুট হওয়া অস্ত্র ও শ্রীশ মিত্র কে। বিপ্লবী শ্রীশ মিত্র সেই অস্ত্র বিপ্লবীদের হাতে তুলে দিয়ে প্রথমে দার্জিলিং ও পরে অসামে গা-ঢাকা দেন। তারপর থেকে আজও তাঁর হদিশ কেউ পায়নি।
অস্ত্র লুণ্ঠন করা হয়েছিল যে গাড়িতে
দিন দুপুরে কলকাতার বুকে হরিদাস দত্ত, শ্রীশ পাল,খগেন দত্তদের এই অস্ত্র লুঠ ব্রিটিশ শাসকদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। ইংরাজরা শুরু করে বেপরোয়া ধরপাকড়। এই লুঠকরা অস্ত্র দিয়েই সারাদেশে বিপ্লবীরা ইংরাজদের বিরুদ্ধে শসস্ত্র লড়াই শুরু করে। বাঘা যতীনের নেতৃত্বে বুড়িবালামের চষাখন্ডা গ্রামে ইংরাজের সঙ্গে যুদ্ধ, বিনয় ,বাদল, দিনেশের অত্যাচারি সিমসন সাহেবকে হত্যার পরিকল্পনা যা ইতিহাসের পাতায় অলিন্দ যুদ্ধ নামে খোদাই করা আছে,যার নেপথ্যে নায়ক ছিলেন বিপ্লবী নায়ক হেমচন্দ্র ঘোষ।
আরও পড়ুন – কেমন আছেন সোমা সেন, সুধা ভরদ্বাজরা?
এই বিপ্লবী নায়কের শেষ জীবনের বেশ কয়েকটি বছর কাটে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের বিপরীতে রজনী ভট্টাচার্য লেনের ভাড়া বাড়িতে। ১৯৮০ সালের আজকের দিনেই এই বিপ্লবী নায়কের জীবনাবসান হয়। কলকাতা টিভি ডিজিটালের সম্প্রচারে পরেই ভাড়া বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তায় বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের দাবি জানানো হয়। স্থানীয়রাও একই দাবি করেন। এই দাবিকে সন্মান জানিয়ে দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায় বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন।
অন্যদিকে রবিবার কেওড়াতলা মহাশ্মশানের স্মৃতিসৌধে বিপ্লবী নায়কের ৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন স়ংগঠনের পক্ষ থেকে মালা দিয়ে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।