আজ বিশ্ব আইসক্রিম দিবস। অতএব আজ ভালো থাকার দিবস। অতএব দিবসরজনী আইসক্রিমের আশায় আশায় থাকার দিবস।
আইসক্রিম’ শুনলে কার না জিভে জল আসে? যত গরমকালই হোক কিংবা শীত, আইসক্রিমের আবেদন কখনও কমার নয়। ছেলে থেকে বুড়ো সকলের এক বাক্যেই পছন্দ এই একটা নাম। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন স্বাদ-গন্ধ ও ফ্লেভারের আইসক্রিম মার্কেটে পাওয়া যায়। কখনও কি ভেবে দেখেছেন কার মাথা থেকে এল এই আইসক্রিম ? তা হলে চলুন জানা যাক কী করে শুরু হল এই মন মাতানো আইসক্রিম তৈরির কাজ।
আইসক্রিম আবিষ্কারের ইতিহাসকে যদি দেখতে হয় তা হলে বেশ কিছুটা পিছিয়ে আসতে হবে। কারণ, আইসক্রিম কোথা থেকে এসেছে তার একটা প্রচলিত গল্প রয়েছে । আর এই গল্পের সূচনা হয়েছিল ৬২ খ্রিস্টাব্দে রোমের রাজা বাবুর্চির কাছে নতুন মুখোরোচক কিছু খেতে চেয়েছিলেন। তখন রাজা এক কর্মচারীকে পাঠালেন এক পাহাড় থেকে কিছু বরফ নিয়ে আসতে। বাবুর্চি তখন বরফের সাথে বাদাম আর মধু মিশিয়ে রাজাকে দিলেন। রাজা কিছুটা ভয় ভয় মুখে দিলেন, কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইলেন। সকলেই তখন রাজার দিকে তাকিয়ে কী হবে কী হবে, কিন্তু রাজার মুখ খুলতেই পরম তৃপ্তি… কোথা থেকে পেল এই মজাদার জিনিস? ব্যস কেল্লাফতে। রোম থেকে এই ঠান্ডা রঙিন মিষ্টি বরফের জাদু ছড়িয়ে গেল বিশ্বের প্রতিটা কোণে।
এরই মধ্যে যখন বাদাম পেস্তা আরও নানান ধরনের ফল এসে যোগ হল, তখন থেকে শুরু হল আইসক্রিমে চিনি মেশানো। খলিফারা প্রথম আইসক্রিমে চিনি মেশানো শুরু করেছিল। আর এর মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল আইসক্রিমের বাণিজ্যিকীকরণ।
মার্কোবপোলোর নাম তো সকলেরই জানা। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে করতে তিনি যখন চিনে এসে পৌছলেন সেখানেই অমৃত খেয়ে তাঁর চোখ ছানাবড়া। শিখে নিয়েছিলেন কীভাবে তৈরি করতে হয় আইসক্রিম।
দুধের সাথে আইসক্রিম মেশানো অনেকটাই পরের। ইতালিয়ানরাই প্রথম আইসক্রিম তৈরিতে দুধের ব্যবহারের কথা ভেবেছিলেন।
এদিকে ইতালির রাজকন্যা ক্যাথরিন ফ্রান্সের রাজাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, এমন সময় বায়না ধরলেন তাঁর প্রিয় রাঁধুনিকে তিনি সঙ্গে নিয়ে যাবেন। রাজাও সম্মতি দিয়ে দিলেন। আর এক কথায় বলা যায়, সেই থেকেই ইতালির হাত ধরে ফ্রান্সে ঢুকল আইসক্রিম।
ইংল্যান্ডের আইসক্রিমের রমরমা কম নয়। ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসের টেবিলে প্রায়ই দেখা যেত ক্রিম আইস নামক একটা খাবার। আর এই খাবার খেয়ে রাজা এতটাই আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন যে, প্রস্তুতকারকের হেসেখেলে থাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন।
ভিক্টোরিয়ান যুগে আমেরিকা থেকে ইংল্যান্ডে আইসক্রিম আমদানি করা হত। ফলে, দামও ছিল বেশ চড়া।
আমেরিকার হাত ধরেই আইসক্রিমের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। দুধ, ক্রিম, স্ট্রবেরি, চকোলেট এমন নতুন নতুন ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি হয় অত্যাধুনিক আইসক্রিম।
ন্যান্সি জনসনই প্রথম আইসক্রিম তৈরির যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। যেখানে ঘরে বসে অনায়াসেই বানানো যেত আইসক্রিম। পরবর্তী কালে আইসক্রিমের গাড়িকে তিনি জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। যাতে মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছিল আইসক্রিম। প্রথম বিপুল পরিমাণে আইসক্রিম তৈরি হয়েছিল মেরিল্যান্ডে।
যত দিন গেল মিষ্টি, ডেজার্টের চাহিদা তত বাড়তে থাকল। যুক্ত হল বিভিন্ন ফ্লেভার ও লুক।
সেই সময় গোটা জুলাই মাসকে আইসক্রিমের মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
আজ আইসক্রিম অত্যন্ত সহজলভ্য। বিভিন্ন স্বাদের, বিভিন্ন ধরনের আইসক্রিম রাজত্ব করছে বিশ্বব্যাপী। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রয়েছে নামীদামি ব্র্যান্ড।
আইসক্রিমের সঙ্গে রয়েছে একটা ফিল গুড ব্যাপার। ভালো-মন্দ, পার্টি, পরীক্ষায় পাশ- ফেল যাই হোক না কেন, সুস্বাদু আইসক্রিমে একটা কামড় দিলেই যেন সব ভুলিয়ে দেয় নিমেষে। আর এমন কাউকে পাওয়া যাবে না যার আইসক্রিমের নাম শুনলে মুখ ভার হয়ে যায়। চকোলেটের মতোই আইসক্রিমের মধ্যেও যেন জাদু রয়েছে। মন ভালো করার। পৃথিবীর অনেক ঠান্ডা প্রধান দেশেও আইসক্রিমের জয়জয়কার।
এমন বন্ধু আর কে আছে, তোমার মতো আইসক্রিম!