জয়জ্যোতি ঘোষ
১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। শীতের কলকাতা। ইডেন গার্ডেন্সে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ টেস্টে ভারতের মুখোমুখি পাকিস্তান। কিন্তু এই টেস্ট ম্যাচের একটি ঘটনা একেবারেই সুখকর নয়। বলা যেতে পারে জন্ম দিয়েছিল ‘বিতর্কের দাবানল’- যার আঁচ নিমেষে ছড়িয়ে পড়েছিল ক্রিকেট বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের সামনে জয়ের লক্ষ্য ২৭৮। এমন অবস্থায় ভারতের স্কোর যখন ১৩৫, তখন আউট হন ভিভিএস লক্ষ্মণ। ক্রিজে আসেন শচীন তেন্ডুলকর। তাঁকে ঘিরে ছিল বিপুল প্রত্যাশা। ৯০-এর দশকে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত প্রত্যাশার বিরাট চাপ একা নিজের কাঁধে বহন করতেন মাস্টার-ব্লাস্টার। একটি চার মেরে নিজের ইনিংস শুরুও করেছিলেন। কিন্তু এরইমাঝে ঘটে বিপত্তি। ওয়াসিম আক্রমের বলে অন সাইডে গ্লান্স করেন শচীন। সেই বল ফিল্ড করে নাদিম খান বাউন্ডারি লাইনের একটু আগে থেকে থ্রো করেন এবং সেটা গিয়ে লাগে সরাসরি উইকেটে। শচীন দু’টি রান নেওয়ার পর তৃতীয় রান নেওয়ার জন্য নন স্ট্রাইকিং এন্ডের দিকে ছোটেন। ক্রিজে ব্যাট স্পর্শ করার আগে শোয়েব আখতারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় শচীন তেন্ডুলকরের। ফলে ক্রিজে ব্যাট রাখতে দেরি হয়ে যায় ক্রিকেট ঈশ্বরের। যার পরিণতি ‘মহাবিতর্কিত রান আউট’। ক্ষোভে ফেটে পড়ে ইডেন গার্ডেন্স। মাঠে বোতল ছোড়া হয়। ম্যাচ স্থগিত রাখা হয়। অনেকেই মনে করেন শচীনকে ইচ্ছাকৃতভাবে আটকানোর জন্য শোয়েব শচীনের রান নেওয়ার পথে চলে এসেছিলেন।
এরপর ম্যাচ স্থগিত থাকার সময় সুনীল গাভাসকর সেইসময়ের পাকিস্তান অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রমের কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন, ‘ইডেন গার্ডেন্স তথা ভারতে সবাই তোমাকে ভালোবাসে। ডেকে নাও শচীনকে।’ কিন্তু লিটল মাস্টারের এই অনুরোধ রাখেননি ওয়াসিম আক্রম। তিনি গাভাসকরকে বলেন, ‘সানি ভাই, ভারতে আমার নিশ্চয়ই কিছু ফ্যানস আছে মানছি, কিন্তু শচীনকে আবারও ডেকে নিলে পাকিস্তানে আমার অনুরাগীরা আমাকে ঘৃণা করবে। তাছাড়া শচীনকে আউট দেওয়াটা আমার সিদ্ধান্ত ছিল না-সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আম্পায়ার। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এটা অবশ্যই একটা দুর্ঘটনা। ক্রিকেট ম্যাচে দুর্ঘটনা হয়েই থাকে। এটা একটা অধিনায়কের দায়িত্ব না যে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে সংশোধন করা।’
এখানেই শেষ নয়? ওয়াসিম আক্রম এই প্রসঙ্গে তাঁর আত্মজীবনী ‘সুলতান- এ মেমোইর’-এ ইডেন গার্ডেন্সের দর্শকদের আচরণকে পক্ষপাতমূলক বলে সম্বোধন করেছেন। এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথা মনে করিয়ে রাখা ভালো। ১৯৯৬ সালে হায়দরাবাদে টাইটান কাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলার ফ্যানি ডিভিলিয়ার্সের সঙ্গে উইকেটের মাঝে সংঘর্ষ হয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। ফলস্বরূপ রান আউটও হয়ে যান মহারাজ। কিন্তু এক্ষেত্রে মানবিকতার পরিচয় দেন সেইসময়ের দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রোনিয়ে। সৌরভকে পুনরায় বাইশ গজে ফেরার আমন্ত্রণ জানান। একইসঙ্গে ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’-এর অনন্য উদাহরণ দেন বিতর্কিত প্রোটিয়া অধিনায়ক।
(সেদিন পুনরায় ম্যাচ শুরু করার জন্য শচীনকে স্বয়ং মাঠে নামতে হয় ইডেনের দর্শকদের শান্ত করার জন্য।)
অন্য খবর দেখতে ক্লিক করুন: