মধ্যমগ্রাম : বিজয়ার বিষাদ। দশমীর সন্ধেয় মধ্যমগ্রামের দিগবেড়িয়ায় নিজের বাড়িতে বিসর্জনের আগে ধুনুচি নাচে মাতলেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। ৩১৯ বছরের পুরোনো পুজো। দেশ ভাগের পর ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় চলে আসে ঘোষ দস্তিদার বাড়িরই পুজো। এপার বাংলাতেও নিয়ম মেনে আজও একই ভাবে দুর্গা পুজোর আয়োজন করে চলেছেন বারাসতের সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
এই পুজোর শুরু বাংলাদেশের বরিশালের গাভা গ্রামে। সেই গ্রামে প্রায় সকলেরই পদবি ঘোষ দস্তিদার। কথিত আছে, আজ থেকে প্রায় ৩১৫ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পান কালিপ্রসন্ন ঘোষ। সেই স্বপ্নে মধ্যরাতে মা দুর্গা তাঁর কাছে খেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কালিপ্রসন্ন বলেন, “আমিতো কায়স্থ,আমি কি ভাবে তোমায় খেতে দেব ?” তখন মা দূর্গা বলেন, “আমি যখন আদেশ করেছি তখন দিতে হবে।” কিন্তু কী খেতে দেবেন ? তারপর মায়ের কাছ থেকে ঘরের কোণায় রাখা দুধ ও চাল ফুটিয়ে পরমান্ন করে দেওয়ার আদেশ পান কালিপ্রসন্ন।
এই পরমান্ন আর ৫টা পরমান্নর স্বাদে হয় না। এর স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা। যাকে বলা হয় চরু। তারপর কালিপ্রসন্ন ঘোষ দস্তিদার স্নান করে মা দুর্গাকে খেতে দেন। সেই থেকেই চলে আসছে এই প্রথা। তারপর দেশ ভাগ হয়ে যায়। দেশ ভাগ হওয়ার আগে যারা চলে এসেছিল তারা হাওড়ার বাউরিয়াতে যৌথ ভাবে এই পুজোটা শুরু করে। পরবর্তীতে সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার চিকিৎসক হওয়ার পর এই পুজোর দায়িত্ব নেন তিনি।
আরও পড়ুন – পুজোর শেষ লগ্নের আনন্দ মাটি, দশমীতে বিসর্জনের ঘাটে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি
প্রতিদিন প্রায় হাজার মানুষ এই বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া করতেন। তবে গত দুবছর ঘোষ দস্তিদার বাড়িতে সেই ভাবে মানুষের সমাগম হয়না। বর্তমানে যারা এই পুজোর সঙ্গে জড়িত অর্থাৎ পুরোহিত, ঢাকি থেকে রান্নার লোক, প্রত্যেকেরই দ্বিতীয় ভ্যাকসিন হয়ে গেছে। প্রত্যেকের আরটিপিসিআর পরীক্ষা করানো হয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পুজোর কাজে হাত দিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন – জুতো দিয়ে মণ্ডপসজ্জা: হাইকোর্টের নির্দেশে স্বস্তিতে দমদম পার্ক
দিগবেরিয়া বাড়ির পুজো এই বছর করোনা পরিস্থিতি মেনেই হয়েছে। সেই কারণে তাঁর বাড়ির পুজোয় লোকজনের আনাগোনা নেই বললেই চলে সাংসদ নিজে হাতে এই চারটে দিন পুজোর যাবতীয় রীতিনীতি নিজেই করেছেন। সেই মত পুজোর শেষ মুহুর্তে মা কে বরণ করলেন নিজেও। ঢাকের তালে সাংসদ ধুনুচি নাচলেন। আড়ম্বর ছাড়াই বিসর্জনের আগের মুহুর্তের সেই ছবি দেখা গেল।