কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতিতে অচল অবস্থায় রাজ্যের পর্যটন। উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র করোনা আবহে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের রোজগারে ভাটা পড়েছে। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর তৃতীয় ঢেউয়ের প্রোকপে রাজ্যজুড়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। যার ফলে ফের লকডাউন ঘোষণা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। এই তালিকায় সবার প্রথমে থাকছে পর্যটন কেন্দ্রগুলি। কারণ ভিড়ের সম্ভাবনা সেখানেই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু পযটন কেন্দ্র বন্ধ হলে রোজগারও বন্ধ হয়ে যাবে কিছু মানুষের। তাই কোভিডের বিধিনিষেধ মেনে ৫০ শতাংশ পর্যটক নিয়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলি চালুর দাবিতে বিক্ষোভ দেখাল ডুয়ার্স কন্যায় চিলাপাতা ইকো ট্যুরিজম সোসাইটি ও জলদাপাড়া ওয়েলফেয়ার এন্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা নাগাদ আলিপুরদুয়ার জেলার প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। সম্প্রতি রাজ্যে করোনা ও ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্তর জেরে ফের জারি করা হয় নানান বিধিনিষেধ। সাধারণ নাগরিকদের সংক্রমণ থেকে নিরাপদে রাখতে সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পর্যটক নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে দীর্ঘ করোনা সময় কাল ধরে বন্ধ থাকা পর্যটন ব্যবসা কোনও রকমে ঘুরে দাঁড়াতেই ফের সরকারি নির্দেশে পর্যটন কেন্দ্রগুলি নিষিদ্ধ করায় সমস্যায় এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এমনকি পর্যটনে নিষেধাজ্ঞার সময়কাল থেকে পর্যটন ব্যবসায়ীদের বাতিল হওয়া বুকিংয়ের টাকাও ফেরত পায়নি এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন তাঁরা।
এই সমস্যার সমাধান করতে সব রকম বিধিনিষেধ মেনে ৫০ শতাংশ পর্যটক নিয়ে ডুয়ার্সের পর্যটন কেন্দ্রগুলি খুলে দেওয়ার দাবি জানান চিলাপাতা ইকোট্যুরিজম সোসাইটির সদস্যরা। এদিন আলিপুরদুয়ার কোর্ট সংলগ্ন এলাকা থেকে একটি মৌন মিছিলের আয়োজন করেন বিক্ষোভকারীরা। মিছিলটি কোর্ট এলাকা পরিক্রমা করার পর আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর ডুয়ার্স কন্যার সামনে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন তাঁরা। বিক্ষোভ শেষে আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনাকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয় চিলাপাতা ইকোট্যুরিজম সোসাইটি ও জলদাপাড়া ওয়েলফেয়ার এন্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন : বন্ধ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র, বিপাকে পর্যটক-ব্যবসায়ীরা
রাজ্যে করোনা পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। তাই আগামীতে এই বিধিনিষেধ থেকে যাতে পর্যটন শিল্পকে ছাড় দেওয়া হয়, তার আবেদন জানিয়েই বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের ৭ টি পর্যটন সংস্থা মিলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ডেপুটেশন জমা দেয়। জলপাইগুড়ি জেলা শাসকের মাধ্যমে এই ডেপুটেশন পাঠানো হয়। একটি ট্যুরিজম সংস্থার কো-অর্ডিনেটর সায়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘করোনার কারণে বিগত দুবছর থেকে পর্যটন ব্যবসা একেবারেই ধরাশায়ী। নতুন করে বিধিনিষেধের কারণে প্রচুর বুকিং বাতিল হয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে এই ব্যবসার সঙ্গে বিভিন্ন মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় রয়েছেন। বাজার খোলার অনুমতি যখন দেওয়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রে পর্যটন কেন্দ্রগুলো যাতে খোলা হয় তার দাবি জানান তাঁরা। মূর্তির নেচার গাইড কিরণ শর্মা বলেন, ‘যদি বিধিনিষেধের ছাড় দেওয়া হয় তাহলে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করব।’ আর এক ব্যবসায়ী বিপ্লব দে বলেন, ‘খুবই সমস্যার মধ্যে রয়েছি। কোভিড পরিস্থিতি উঠে যাওয়ার পরে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু ফের বিধিনিষেধের কারণে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সংসার চালানো, গাড়ির কিস্তি দেওয়া, গাইডদের বেতন দেওয়া প্রভৃতি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ যেহেতু এক একটি পরিবার নিয়ে জঙ্গলে ঘুরতে আসেন, তাই সে ক্ষেত্রে সংক্রমনের সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানান তিনি।