কলকাতা: রুমানা সুলতানা। এই নামকে নিয়েই তোলপাড় সোশাল মিডিয়া। ধর্মের পরিচয়ে তাঁর পরিচয়, নাকি তিনি একজন মেধাবী ছাত্রী? এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত নেটিজেনরা। সমাজের বিভিন্ন পেশায় জড়িত মানুষেরাও এ নিয়ে তাঁদের বক্তব্য রেখেছেন।
বিতর্কের সূত্রপাত উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার সময়। নাম না করেই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস বলেন, উচ্চমাধ্যমিকে এককভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন মুর্শিদাবাদের এক মুসলিম ছাত্রী। ছাত্রীর পরিচয় দিতে গিয়ে কেন তাঁর ধর্মের পরিচয় টানতে হল তা নিয়েই বিতর্কের ঝড় ওঠে। কলকাতা টিভির ডিজিটাল টিমও মত জানতে চেয়ে যোগযোগ করে সমাজের বেশ কয়েক জন পরিচিত মুখের সঙ্গে।
আরও পড়ুন পারিবারিক বচসার জেরে মা’কে গুলি করল ছেলে
চলচ্চিত্র পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন ধর্মের চলন বেড়ে গিয়েছে। ভোটের ক্ষেত্রেও দেখি ধর্মের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। ধর্মকে ঘিরে এখন ভোট হয়। এ রকম অবস্থায় সরকারি তরফে মুখ ফসকে এমন কিছু বলা হবে। এটা তো স্বাভাবিক। তবে আমি এই বিষয়টি একদমই সমর্থন করছি না। পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের যোগ্যতায় মেধা তালিকায় স্থান পায়। মানুষ হিসেবেই পরিচয় পাওয়া উচিত একজন ছাত্রছাত্রীর। অন্য কোনও তকমা না লাগানোই কাম্য।’
সংগীত শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রর কথায়, ‘আমি এটা একদম সমর্থন করি না, ধর্ম আমার কাছে কোনও ফ্যাক্টরই নয়। তবে আমাদের দেশে সব ক্ষেত্রেই ধর্ম উল্লেখ করতে হয়, যে কোনও ফর্ম ভরতে গেলেও লিখতে হয়। যেটা একদমই আমি মানতে পারি না, যিনি বলেছেন কেন বলেছেন জানি না, তবে একজন ছাত্রী সে শুধুই ছাত্রীই। একুশের প্রথম স্থানাধিকারী একজন ছাত্রী বললেই ভালো হয়।’
আরও পড়ুন উচ্চমাধ্যমিকে ফেল, তিলজলা বালিকা বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের
এ বিষয়ে অভিনেতা রেজওয়ান শেখ রব্বানি জানান, ‘ধর্মের উল্লেখ করাই উচিত নয়, নাম ও বলার প্রয়োজন নেই,পরীক্ষার খাতায় শুধুই রোল নম্বর থাকা উচিত। ছাত্রছাত্রীর পরিচয় তাঁর মেধা দিয়েই করার পক্ষপাতি আমি।’
ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিন্দিতা ঘোষাল বলেন, ‘কোনও ছাত্র-ছাত্রীর রেজাল্টকে ধর্ম দিয়ে বিচার করা উচিত নয়। তাতে ছাত্র ছাত্রীদের এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা, উৎসাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপরে উঠতে হবে মানুষকে। সমাজের চিন্তাধারা বদলে ধর্ম নয় একজন নাগরিককে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হবে।’
আরও পড়ুন উচ্চমাধ্যমিকে সেরা মুর্শিদাবাদের রুমানা
বিশিষ্ট মনোবিদ রিমা মুখার্জি জানিয়েছেন, ‘মহুয়া দাসের এ ধরনের মন্তব্য তাঁর মানসিক সংকীর্ণতার প্রকাশ। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই এ কথা তিনি বলেছেন। যা সমাজের সাধারণ মানুষ ভাল চোখে দেখবেন না। সমাজের লোকে কে কী বলল সেই মনোভাব এড়িয়েই প্রথম স্থান অধিকারী রুমানা সুলতানের এগিয়ে চলা উচিত।’
আরও পড়ুন BREAKING: উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার ৯৭.৬৯ শতাংশ, সেরা মুর্শিদাবাদের রুমানা
এই বিষয়ে মন্তব্য রেখেছেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে ‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।পড়ুয়াদের এই বিষয়ে প্রভাবিত করা বা প্রভাবিত হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। মহুয়া দাসের এ ধরনের মন্তব্য একেবারেই উচিত নয়।’
ঘটনার সমালোচনা করেছেন ‘পদ্মশ্রী’ এবং ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক কাজী মাসুম আখতার। জানিয়েছেন, ‘রুমানার পরিচয় কোনওভাবেই তাঁর ধর্ম হতে পারে না। তাঁর পরিচয় একজন ছাত্রী। এই মন্তব্য নিছকই তাঁর ধর্মকে বড় করে দেখানো। তাঁর কৃতিত্বকে নয়। এইভাবে বলা সুখকর নয়। ধর্মের কথাই যদি বলা হয় তা হলে দেখা উচিত কোন পরিবেশে সে বড় হয়েছে। যেখানে তাঁর বাবা-মা উভয়ই শিক্ষক। একইসঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন রুমানা। অর্থাৎ অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন এই ছাত্রীর পক্ষে এই ধরনের মন্তব্য ঠিক নয়।’
আরও পড়ুন ইপসম সল্টের ফুট সোক রেসিপি